বৈরুতে বিক্ষোভ!
লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দখলে নিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। শনিবার বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করেছে।
প্রায় পাঁচ হাজার সরকার বিরোধী শনিবার রাস্তায় নেমে আসে। তারা সংসদ ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।
বিক্ষোভকারীরা সরকারের পদত্যাগ দাবি করে স্লোগান দেয়। তারা পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে।
বৈরুতে বিক্ষোভ!
মঙ্গলবারের বিস্ফোরণের পরে দেশটির শাসক শ্রেণি প্রবল জন-অসন্তোষের মুখে পড়ে। বিস্ফোরণের ঘটনায় ১৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং রাজধানীর বিশাল এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে বন্দরের গোডাউনে বছরের পর বছর বিপজ্জনক অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুদ থাকার ঘটনাকে অনেক লেবানিজ মনে করেন, এ জন্য রাজনৈতিক সিস্টেম দায়ী।
এমনকি প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন শুক্রবার রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে ‘প্রতিবন্ধী’ হিসেবে স্বীকার করে বলেছেন, এই রাজনৈতিক ব্যবস্থা পুনর্বিবেচনা করা দরকার।
তিনি এ ঘটনার ‘দ্রুত বিচারের’ অঙ্গীকার করলেও আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি প্রত্যাখান করেন।
মানবিক সংকটের মুখে লেবানন : জাতিসংঘ
লেবাননের রাজধানী বৈরুতে গত মঙ্গলবার ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় দেশটি মানবিক সংকটে পড়তে যাচ্ছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। বন্দর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় খাদ্য সরবরাহে বাধা ও দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। বিস্ফোরণের পর থেকে লেবানন ইতিমধ্যে অর্থনৈতিক মন্দায় ভুগছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, লেবাননের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনো তিনটি হাসপাতাল চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য কার্যকর হয়ে ওঠেনি। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) এক মুখপাত্র জানিয়েছে, লেবানন প্রায় ৮৫ শতাংশ খাবার আমদানি করে। ডব্লিউএফপি এরই মধ্যে বৈরুতবাসীর জন্য ৫ হাজার প্যাকেট খাবার পাঠিয়েছে। প্রতি প্যাকেট খাবারে পাঁচ সদস্যের পরিবার ১ মাস চলতে পারবেন। দেশটিতে বিস্ফোরণের আগে শতকরা ৭৫ ভাগ মানুষের সাহায্যের প্রয়োজন ছিল, এর মধ্যে শতকরা ৩৩ ভাগ মানুষ তাদের চাকরি হারিয়েছেন। শুধু তাই নয় দেশটিতে ১০ লাখের মতো মানুষ এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫৪ জন মারা গেছেন।
ফ্রান্সের কর্তৃত্ব চান অর্ধলক্ষাধিক লেবানিজ! : বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁঁসছে লেবানন। সরকারের প্রতি তীব্র অনাস্থা জানিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ছে মানুষ। এরই মধ্যে আগামী ১০ বছরের জন্য লেবাননের কর্তৃত্ব ফ্রান্সের হাতে তুলে দেওয়ার দাবিতে একটি পিটিশন খোলা হয়েছে। ইতিমধ্যে এতে স্বাক্ষর করেছেন প্রায় ৬০ হাজার মানুষ। বিবিসি মিডল ইস্ট মনিটর।
পিটিশনে লেবাননের বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের জন্য দেশটির শাসকগোষ্ঠীকে দায়ী করে সংকট উত্তরণে ফ্রান্সের হাতে কর্তৃত্ব তুলে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
পিটিশনে বলা হয়েছে, লেবাননের কর্মকর্তারা স্পষ্টতই রাষ্ট্রের সুরক্ষা নিশ্চিত করা ও দেশ পরিচালনায় তাদের অক্ষমতা দেখিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, একটি ব্যর্থ ব্যবস্থা, দুর্নীতি, সন্ত্রাসবাদ এবং মিলিশিয়া বাহিনী দেশকে শেষ করে দিচ্ছে। রাষ্ট্র ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। এক সময় ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল লেবানন। এখন এ পিটিশনের উদ্যোক্তাদের বিশ্বাস, একটি পরিচ্ছন্ন ও টেকসই প্রশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য লেবাননকে ফের ফ্রান্সের অধীনে ফিরে যেতে হবে। ২০২০ সালের ৪ আগস্ট বিকালে লেবাননের রাজধানী বৈরুতের বন্দর এলাকায় জোড়া বিস্ফোরণ ঘটে। এতে পুরো বৈরুত শহর ভূমিকম্পের মতো কেঁপে ওঠে। ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, বৈরুতের বন্দর এলাকা থেকে বড় গম্বুজ আকারে ধোঁয়া উড়ছে। এর কিছুক্ষণের মধ্যে বিকট বিস্ফোরণে গাড়ি ও স্থাপনা উড়ে যেতে দেখা যায়। সরকারি হিসাবে, বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত ১৫৭ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৫ হাজার মানুষ। ক্ষতি হয়েছে শত শত কোটি ডলারের। ঘটনার কারণ নির্ণয়ে তদন্ত কমিটিকে চার দিনের সময় বেঁধে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বিস্ফোরণের ঘটনায় নিখোঁজদের সন্ধানে এখনো অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রাথমিকভাবে বিস্ফোরক সামগ্রীর বিশাল মজুত থেকে এ বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। কর্মকর্তারাও একই রকমের তথ্য দিয়েছেন। তবে শুক্রবার এক বিবৃতিতে লেবাননের প্রেসিডেন্ট মাইকেল আউন বলেছেন, ‘ঘটনার কারণ এখনো জানা যায়নি। রকেট বা বোমা কিংবা অন্য কোনোভাবে বাইরে থেকে হস্তক্ষেপের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।’
আউন আরও জানান, এ বিস্ফোরণের ঘটনায় তিন পর্যায়ে তদন্ত চলছে। ‘প্রথমত, কীভাবে ওই বিস্ফোরকগুলো গুদামে ঢুকেছে ও মজুত করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, অবহেলা বা দুর্ঘটনাজনিত কারণে ওই বিস্ফোরণ হয়েছে কিনা। এবং তৃতীয়ত, বাইরের হস্তক্ষেপের আশঙ্কা।’
এর আগে সরকারিভাবে বলা হয়েছিল, গুদামে মজুত ২ হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিস্ফোরিত হয়ে মারাত্মক ওই বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৩ সাল থেকে এসব রাসায়নিক অনিরাপদ অবস্থায় সেখানে মজুত ছিল।
এ ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে রাজপথে নেমে আসে লেবানিজরা। মুহুর্মুহু সরকারবিরোধী সেøাগান দিতে থাকে তারা। বিক্ষোভকারীরা বলছে, সরকারের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা আর অবহেলার কারণেই এমন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ফরাসি কর্তৃত্বে যাওয়া সংক্রান্ত পিটিশনের বক্তব্যও প্রায় একই রকম।
এদিকে, ভয়াবহ বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত হয়ে পড়া লেবাননের রাজধানী বৈরুত সফর করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) এ সফরে তিনি দেশটিকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ডাক দিয়েছেন সংস্কারের। টুইট বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘লেবানন একা নয়।’ তবে ম্যাক্রোঁ সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতায় আক্রান্ত লেবানন গভীর অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে। ফলে জরুরিভিত্তিতে দেশটিতে সংস্কার আনা না হলে এ সংকট আরও তীব্র হতে পারে।
ওই বিস্ফোরণের পর প্রথম কোনো বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে লেবানন সফর করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। বৈরুত পৌঁছে বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শন করেন তিনি। সাগর পাড়ের জায়গাটি বর্তমানে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বিস্ফোরণে তৈরি হওয়া ১৪০ মিটারের বিশাল গর্তটি সাগরের পানিতে পূর্ণ হয়ে গেছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বিস্ফোরণে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া একটি ফার্মেসি পরিদর্শনে গেলে বাইরে সমবেত হয় ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। নিজ দেশের নেতৃত্বকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে ‘শোষণ অবসানের’ দাবিতে সেøাগান দেয় তারা।
সূত্রঃ বিডি প্রতিদিন
বাঅ/এমএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন