সিনহা হত্যা : জেলগেটে ওসি-ইন্সপেক্টরসহ ৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যা ঘটনায় ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও ইন্সপেক্টর লিয়াকতসহ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি।
আজ সোমবার সকালে জেলগেটে অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়।
এর আগে গতকাল রোববার ঘটনাস্থলে গণশুনানি করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির সদস্যরা।
টেকনাফের শামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জের কার্যালয়ে এই শুনানি হয়।
এদিন প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে সরাসরি সিনহা হত্যা দিনের ঘটনা শোনেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।
অবসরপ্রাপ্ত মেজর নিহতের ঘটনায় গত ২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে।
এরপর গণশুনানির জন্য ১২ আগস্ট সন্ধ্যায় গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই রাত ১০টার দিকে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন (অব:) সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খান।
এ ঘটনায় নিহতের বোন শাহরিয়ার শারমিন ফেরদৌস বাদী হয়ে গত ৫ আগস্ট টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরির্দশক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করেন।
মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয়েছে র্যাবকে।
পুলিশ বলেছে, সিনহা মো: রাশেদ হত্যার ঘটনা কোন ব্যক্তির হতে পারে, এর দায় কোন প্রতিষ্ঠানের নয়।
বাংলাদেশে পুলিশের কর্মকর্তারা বলেছেন, কক্সবাজারে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো: রাশেদের হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে ফেলা হচ্ছে।
সেজন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের অ্যাসোসিয়েশন বিবৃতি দিয়ে বাহিনীটির অবস্থান তুলে ধরেছে বলে কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন।
পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন গত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতি দিয়ে বলেছে, স্বার্থন্বেষী মহল ঘটনাটিকে ঘিরে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে পুলিশ এবং সেনাবাহিনীকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছে।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, ক্রসফায়ার, গুমসহ নানা ধরণের অভিযোগ নিয়ে অনেক মানুষ এখন পুলিশের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
গত ৩১শে জুলাই পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো: রাশেদ নিহত হয়।
পুলিশের গুলিতে সাবেক সেনা কর্মকর্তার হত্যার ঘটনার পর ক্রসফায়ার এবং গুমের ইস্যু নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও খবর প্রকাশ হচ্ছে।
সেই প্রেক্ষাপটে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটির দুই সপ্তাহ পর পুলিশ কর্মকর্তাদের সমিতি যে বিবৃতি দিয়েছে, তাতে বিশেষভাবে বলা হয়েছে, একটি স্বার্থান্বেষী মহল ফেসবুক,
ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম এবং কিছু প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া ব্যবহার করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে।
এটিকে রাষ্ট্রের দু’টি পেশাদার বাহিনীকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর অপচেষ্টা বলেও পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন উল্লেখ করেছে।
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাভিশনের বার্তা বিভাগের প্রধান মোস্তফা ফিরোজ মনে করেন, অনেক মানুষ পুলিশের বিরুদ্ধে তাদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ প্রকাশ করছে।
এর পিছনে সংগঠিত কোন বিষয় নেই বলে তিনি মনে করেন।
“এ ধরণের ঘটনায় স্বাভাবিকভাবে কোন কোন মহল ক্ষুব্ধ হয়।
আর পুলিশের ব্যাপারেতো অনেকের দীঘদিন থেকে ক্ষোভ আছে। বিশেষ করে ক্রসফায়ার, গুম-হত্যাসহ নানান রকম ঘটনায় এবং চাঁদাবাজি-এসব কারণে একটা ক্ষোভ আছে।
সেই ক্ষোভটাকে হয়তো সিনহার ঘটনার পর অনেকে পুলিশের ব্যাপারে অনেক বেশি আক্রমণাত্নক বক্তব্য দিচ্ছে ফেসবুকে বা নানান মাধ্যমে।”
“আরেকটা দিক হলো যে, পুলিশ আশ্বস্ত করেছে যে আর ক্রসফায়ার হবে না। এই কথাটা যদি পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হতো, তাহলে কনফিউশনটা কিন্তু আরও দূর হতো।
শুধুমাত্র একটা সংস্থার পক্ষ থেকে যখন স্টেটমেন্ট আসলো যে পুলিশ আশ্বস্ত করেছে এটিই শেষ ঘটনা। তখন কিন্তু এক ধরণের কনফিউশন থেকে গেলো।”
কক্সবাজারে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটির পর পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর প্রধানরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছিলেন।
এরপর আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলেছিল, পুলিশ প্রধান আশ্বস্ত করেছেন যে এটাই শেষ ঘটনা।
এদিকে, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো: রাশেদকে হত্যার মামলায় অভিযুক্ত টেকনাফ থানা পুলিশের বরখাস্ত হওয়া ওসি টেলিফোনে আইনজীবী বা উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে যে কথা বলেছেন, তা সামাজিক মাধ্যমে ফাঁস হয়েছে।
বিভিন্ন টেলিভিশনেও তা প্রচার করা হয়েছে।
এই বিষয়টি পুলিশ বাহিনীকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে বলে এর কর্মকর্তাদের অনেকে মনে করেন।
এছাড়া ক্রসফায়ার এবং গুমের বিভিন্ন ঘাটনাতেও পুলিশের বিরুদ্ধেই আলোচনা হচ্ছে।
সিএ/এসএস
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন