জাতিসংঘ

অবিশ্বাস্য শূন্যতায় জাতিসংঘের শীর্ষ বৈঠক


অবিশ্বাস্য শূন্যতায় জাতিসংঘের শীর্ষ বৈঠক

অবিশ্বাস্য রকমের নিরবতায় গ্রাস করেছে জাতিসংঘ সদর দফতরকে। অথচ বছরের এই সময়টাতে বার্ষিক সাধারণ পরিষদের শীর্ষ সম্মেলন চলাকালে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের পদভারে মুখরিত থাকে নিউইয়র্ক সিটির ফার্স্ট এভিনিউ থেকে সিক্সথ এভিনিউর (৪২ স্ট্রিট থেকে ৫৬ স্ট্রিট পর্যন্ত) সবকিছু। রেস্টুরেন্ট, হোটেল, শপিংমলগুলো সবচেয়ে বেশী ব্যস্ত হয়ে পড়ে। যানজট তৈরী হয় জাতিসংঘের সামনের রাস্তায় গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায়।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা এতটাই জোরদার করা হয় যে, সাধারণ মানুষেরা ঐ এলাকায় পা মাড়াতে নারাজ। ৭৫ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম একেবারেই উল্টোচিত্র। অধিবেশন না থাকলেও ছাত্র-ছাত্রী অথবা ট্যুরিস্টরা জাতিসংঘ সদর দফতর ঘুরতে আসেন, সেটিও অনুপস্থিত। এমনকি, জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রসমূহের লোকজনেরও অবাধ প্রবেশাধিকার নেই। সদস্য রাষ্ট্রের মাত্র একজন করে কূটনীতিক প্রয়োজন অনুযায়ী ভেতরে ঢুকতে পারছেন। অর্থাৎ অধিবেশন কক্ষের সদস্য রাষ্ট্রের জন্যে নির্ধারিত ডেস্কে মাত্র একজনের বসার অনুমতি রয়েছে। সারাবিশ্ব থেকে সহস্রাধিক সাংবাদিক/ফটো সাংবাদিকের জন্যেও এবার পাশ ইস্যু করা হয়নি। নিউইয়র্কের পেশাজীবী সাংবাদিকরা স্থায়ী পাশ ব্যবহার করলেও ভেতরে যেতে বিধিনিষেধ রয়েছে। সকলকেই ভার্চুয়াল থেকে ছবি ও তথ্য নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এ অবস্থায় বিশ্বের রাজধানী হিসেবে খ্যাত নিউইয়র্ক সিটি আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে। করোনা মহামারিতে দীর্ঘদিন পুরো লকডাউনে থাকায় এমনিতেই ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছিল এবং এখনও ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে লিপ্ত রয়েছেন সকলে। তেমনি অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধির পরিপ্রেক্ষিতে তথা করোনা সংক্রমণের ভীতির কারণে কোন দেশের প্রতিনিধিই নিউইয়র্কে আসেননি জাতিসংঘের চলমান শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে।

উল্লেখ্য, করোনায় এই সিটির ২৩ সহস্রাধিক অধিবাসীর প্রাণ ঝরেছে-যা অনেক দেশের চেয়ে বেশী। এখন সংক্রমণের হার একেবারেই কমলেও শংকা কাটেনি বলে নানা রীতি বহাল রাখা হয়েছে। বাইরের কেউ এলেই তাকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক। ৫০ জনের অধিক মানুষের সমাগম নিষিদ্ধ। রেস্টুরেন্ট/বার/ক্লাবের ভেতরে বসে খাবার গ্রহণের অনুমতি এখনও মেলেনি। স্বাস্থ্যবিধির অন্যতম অবলম্বন হিসেবে জাতিসংঘ কর্তৃপক্ষ সিটিকে আড়াই লাখ মাস্ক উপহার দিয়েছে-এজন্যে সিটি প্রশাসনের পক্ষে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিশনার পেনী আবেওয়ার্ডেনা জাতিসংঘের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। তবে ভার্চুয়াল অধিবেশন চলায় আর্থিকভাবে যে ক্ষতির শিকার হলো সেটি আদৌ পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে বলে কেউই মনে করছেন না। প্রতি বছর গড়ে সাড়ে ৬ কোটি ট্যুরিস্ট আসে নিউইয়র্ক সিটিতে।

২৫ হাজারের অধিক কূটনীতিক/দর্শনার্থী গত বছরের শীর্ষ সম্মেলনের প্রথম দিন জাতিসংঘ সদর দফতরে ঢুকেছিলেন। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের অক্টোবরের প্রথম দিন পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই গড়ে ২৫ হাজারের অধিক মানুষ সেখানে এসেছিলেন। সিটির হোটেলগুলোর অবস্থা প্রসঙ্গে নিউইয়র্ক সিটির হোটেল এসোসিয়েশনের সিইও বিজয় ড্যান্ডাপনি গণমাধ্যমকে জানান, আগের বছরের তুলনায় এবার মাত্র ২০% রুম ভাড়া হচ্ছে। জাতিসংঘ অধিবেশনের সময়ে হোটেলগুলোর গড় আয় হতো ২০ মিলিয়ন ডলার করে। এবার নেই বললেই চলে। জাতিসংঘ সদর দফতরের সম্মুখস্ত মিলেনিয়াম হিল্টনে অনেক দেশের প্রেসিডেন্ট/প্রধানমন্ত্রীসহ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা উচ্চমূল্যে রুম ভাড়া করতেন। এবার একজনও নেই। পক্ষান্তরে করোনার প্রাদুর্ভাব মহামারিতে রূপ নিলে এপ্রিল থেকে প্রায় সবকটি রুম বিনা ভাড়ায় ব্যবহারের অনুমতি ছিল চিকিৎসক, নার্সসহ হাসপাতালে জরুরী কর্মীদের জন্যে। রেস্টরেন্টগুলো বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে। কূটনীতিক ছাড়াও জাতিসংঘের বৈঠকে অংশ নিতে সারাবিশ্বের সুশীল সমাজ, লেখক, কবি, সাহিত্যিক, শিক্ষকরাও আসতেন। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত তাদের পরিচিতজনরাও সঙ্গ দিতে আসতেন এবং খাবার গ্রহণ করতেন রেস্টুরেন্টসমূহে। এয়ারলাইন্সগুলোকেও বড় ধরনের ধাক্কায় পড়তে হয়েছে একইকারণে। ট্যাক্সি ব্যবসায় সর্বকালের মহামন্দা চলছে গত মার্চ থেকে।

অবিশ্বাস্য শূন্যতায় জাতিসংঘের শীর্ষ বৈঠক যা জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি (প্রেস) নূরএলাহি মিনা ২৪ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার এ সংবাদদাতাকে জানান, সোমবার ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান হয় এবং পরদিন ২২ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার থেকে শীর্ষ সম্মেলন শুরু হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সদস্য রাষ্ট্রসমূহের ভাষণ প্রচারিত হচ্ছে। মাঝে বেলা আড়াইটা থেকে তিনটা পর্যন্ত আধ ঘণ্টার বিরতি।

-এসএস/সিএ

সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন