ইনচার্জসহ চার পুলিশ বরখাস্ত
সিলেটে পুলিশি নির্যাতনে রায়হান উদ্দিন নামের যুবকের মৃত্যুর অভিযোগে সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভুইয়াসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রত্যাহার করা হয়েছে আরও তিন পুলিশ সদস্যকে। এ ছাড়া পুলিশের দাবি মতো কাস্টঘর এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজে গণপিটুনির কোনো প্রমাণ মেলেনি। মৃত্যুর ঘটনায় নিহত রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় পুলিশি নির্যাতনে তার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। রায়হান উদ্দিন সিলেট নগরীর আখালিয়ার নেহারিপাড়ার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তার তিন মাসের এক মেয়ে রয়েছে। নগরীর রিকাবিবাজার স্টেডিয়াম মার্কেটে এক চিকিৎসকের চেম্বারে কাজ করত সে।
পুলিশি নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যুর অভিযোগ ওঠায় সিলেট মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা হলেন- অতিরিক্ত উপকমিশনার (উত্তর) শাহরীয়ার আল মামুন, অতিরিক্ত উপকমিশনার (দক্ষিণ) এহসান উদ্দিন চৌধুরী ও বিমানবন্দর থানার সহকারী কমিশনার প্রবাস কুমার সিংহ। তদন্তে পুলিশ কর্মকর্তারা রায়হানের মৃত্যুর জন্য বন্দরবাজার ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যদের দায়িত্বহীনতার প্রমাণ পান। এর প্রেক্ষিতে গতকাল বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূইয়াসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। প্রত্যাহার করা হয় আরও তিন সদস্যকে।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) জ্যোতির্ময় সরকার জানান, দায়িত্বে অবহেলার কারণে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ আকবর হোসেন ভুইয়া, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, তৌহিদ মিয়া ও টিটু চন্দ্র দাসকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রত্যাহার করা হয়েছে ফাঁড়ির এএসআই আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজিব হোসেনকে। গত রবিবার সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রায়হান উদ্দিনকে গুরুতর আহত অবস্থায় ভর্তি করেন বন্দরবাজার ফাঁড়ির এএসআই আশেক এলাহী। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭টা ৫০ মিনিটে রায়হান মারা যান। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। হাতের নখও উপড়ানো ছিল। রায়হানের মৃত্যুর পর পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় সে ছিনতাইকারী। নগরীর কাস্টঘর এলাকায় ছিনতাই করতে গিয়ে গণপিটুনিতে তার মৃত্যু হয়েছে।
এ ব্যাপারে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই (পরবর্তীতে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া) আকবর হোসেন ভূইয়া জানান, ঘটনার সময় তিনি ফাঁড়িতে ছিলেন না। রাত সাড়ে ৪টার দিকে এএসআই আশেক এলাহী তাকে জানায়, কাস্টঘর এলাকা থেকে একজন ছিনতাইকারী ধরা হয়েছে। ছিনতাইর সময় সে একজনকে ছুরিকাঘাতও করেছে। পরে গণধোলাই দিয়ে ওই ছিনতাইকারীকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। সকাল ৭টায় তিনি ফাঁড়িতে আসেন। ৮টার দিকে হাসপাতালে মারা যায় রায়হান।
তবে ছিনতাই করতে গিয়ে রায়হান জনৈক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাত করেছে দাবি করলেও আহত ওই ব্যক্তির পরিচয় জানাতে পারেননি এসআই আকবর। এ ছাড়া কাস্টঘর এলাকায় রায়হান গণপিটুনির শিকার হয়েছে বলে এসআই আকবর দাবি করলেও ওই এলাকার সিসি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মুনিম জানিয়েছেন, সেখানে কোনো গণপিটুনির ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে, রায়হানের পরিবারের অভিযোগ, যে মোবাইল থেকে ফোন দিয়ে ১০ হাজার টাকা দাবি করা হয়েছিল সেই ফোনটি বন্দরবাজার ফাঁড়ির তৌহিদ মিয়ার। মামলা দায়েরের পর থেকে মোবাইলে ফোন করে টাকা চাওয়াসহ সব অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সৌমেন মৈত্র।
রায়হান উদ্দিনকে পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন করে হত্যার প্রতিবাদে গতকাল বিকাল ৩টা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় লোকজন। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের আখালিয়া এলাকায় মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করেন তারা। এ সময় রাস্তায় বসে ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে অঝোরে কাঁদেন রায়হানের মা সালমা বেগম। ছেলে হত্যার বিচার চান তিনি।
সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন
বাঅ/এমএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন