করোনায় মানুষের পাশে থাকার প্রতিদান পেলেন যুক্তরাষ্ট্রের আরএলবি গ্রুপের বাদল
করোনাকালে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পুরস্কার পাচ্ছেন বাংলাদেশি আমেরিকান ব্যবসায়ী আকতার হোসেন বাদল। মহামারিকালে তার আরএলবি গ্রুপের মাস্ক, হ্যান্ড সেনিটাইজার ও হ্যান্ড গ্লোভস বিতরণ করেছেন মধ্য মার্চ থেকে জুনের শেষ পর্যন্ত। সংক্রমণের ভীতিতে অনেকে দোকান খুলেননি সে সময়। অথচ এই যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাদলের দুটি স্টোরই লং আইল্যান্ডের অসহায় মানুষের পাশে ছিল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এমনকি টহল পুলিশ এবং হাসপাতালের নার্সরাও আরএলবি গ্রুপের মাস্ক, পিপিই, হ্যান্ড সেনিটাইজারে আপ্লুত।
এর পুরস্কার হিসেবে শুক্রবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্ক সিটির অদূরে লং আইল্যান্ডের বেবিলন সিটির মন্টক হাইওয়ের পাশে বিশাল এলাকা নিয়ে করোনা সত্ত্বেও উৎসব-আমেজে আরএলবি’র তৃতীয় শাখা উদ্বোধন হলো। এলাকাবাসী এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা জড়ো হয়ে বাদলের এই নতুন স্টোরকে সকলেই নিজের বলে মন্তব্য করেন এবং প্রয়োজনীয় নির্মাণ সামগ্রীর জন্যে আরএলবিকে তার তালিকার শীর্ষে রাখার অঙ্গিকার করলেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সকলে বাংলাদেশি আমেরিকান ব্যবসায়ী বাদলের পাশে দাঁড়ান এবং চরম দুঃসময়ে সাথে থাকার কথা কখনো ভুলবেন না বলে উল্লেখ করেন।
জানা গেছে, আরএলবির চতুর্থ শাখা আগেই খোলা হয়েছে কানেকটিকাট স্টেটে। এটি এখন গ্রুপ অব কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। ভয়ঙ্কর করোনার ছোবলে ক্ষত-বিক্ষত আমেরিকায় একের পর এক সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে বাদলের এগিয়ে চলার মাজেজা কি জানতে চাইলে তিনি স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে এ সংবাদদাতাকে বললেন, সততা, নিষ্ঠা এবং একাগ্রতায় সাফল্য আসবেই। আন্তরিক উদ্যোগ কখনো থেমে থাকেনি। যত কঠিনই মনে হউক, তা এক সময় হাতের মুঠোয় আসে। আমিও সে আলোকেই কাজ করছি। ব্যবসাকে সমাজসেবায় পরিণত করতে চেয়েছি। পরম করুনাময়ের শোকরানা আদায় করছি যে, তিনি আমাকে দৃষ্টির সীমানায় রেখেছেন।
বাদল উল্লেখ করেন, আমি যে সব এলাকায় স্টোর দিয়েছি সবগুলোতেই হান্ড্রেড পার্সেন্ট আমেরিকান। পেশাজীবী শ্বেতাঙ্গ এবং স্প্যানিশও রয়েছেন। তারাই আমার বড় ধরনের ক্রেতা। একবার যিনি আসছেন তিনি আর অন্য কোথায়ও যাবার প্রয়োজনবোধ করেন না। কারণ, আমার স্টোরের মূল্য তুলনামূলকভাবে কম। এবং মান খুবই উন্নত। এটাই গোপন তথ্য ব্যবসা প্রসারের ক্ষেত্রে। বাদলের মতে করোনার মহামারিতে সকলেই যখন হাত গুটিয়ে নিয়েছিলেন, আমি এবং স্টোরের কর্মীরা ছিলাম সচল। অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের প্রয়োজন একেবারেই কমদামে, কখনো কখনো গ্রাহকের দুর্দশায় বিনামূল্যে দিয়েছি। এ খাতে বেশ কয়েক হাজার ডলার ব্যয় হয়েছে।
আলহামদুলিল্লাহ, সেই সহযোগিতার স্বীকৃতি হিসেবেই এলাকাবাসীর অনুরোধে নতুন শাখা চালু হলো। এসময় সাফোক কাউন্টির লেজিজলেচার জেসন এ রিচবার্গ, কপিয়েগ ফায়ার ডিস্ট্রিক্টের কমিশনার আর্থার এ স্টিগার্ড, বিউটিফিকেশন প্রোগ্রামের ডিরেক্টর ভিসকেল মুরসহ জনপ্রতিনিধিরা বাদলকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করেন। অভিবাসী সমাজের সদস্য হিসেবে মূলধারায় নিজের অবস্থানকে সুসংহত করে আমেরিকান স্বপ্ন পূরণে দীপ্ত প্রত্যয়ে এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে বাদলের নাম লং আইল্যান্ড কমিউনিটিতে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে বলেও তারা মন্তব্য করেন। তারা অবলিলায় উচ্চারণ করেছেন, অভিবাসীরাই গড়েছেন এই আমেরিকা। বাদলকে কাছে পেয়ে তা আমরা নতুন করে উপলব্ধিতে সক্ষম হচ্ছি।
উল্লেখ্য, চাঁদপুরের সন্তান বাদল নব্বইয়ের দশকে উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন। লেখাপড়া শেষ করার পর কর্মজীবনের শুরুতে ব্রঙ্কসে একটি জুতার দোকানে সেলসপার্সনের কাজ নেন। সেখানেই হৃদ্যতা তৈরি হয় স্থানীয় এক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির সাথে। তার সহায়তায় চাকরির পরিবর্তে কন্সট্রাকশন ব্যবসায় ঢুকে পড়েন তিনি। গত ২৬ বছরে অনেক চড়াই-উৎরাই পেড়িয়ে বাদল এখন বহুজাতিক এ সমাজে নিজের ফ্র্যাঞ্চাইজ হতে চলেছেন।
এসএস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন