বাবা পরপারে, পুরস্কার নিতে ছেলে মঞ্চে
সিবিএনএ অনলাইন বিনোদন ডেস্ক/২৮ মার্চ । পৃথিবীর বুকে নক্ষত্র ছিলেন ইরফান খান। এখন হয়তো আকাশের তারা হয়ে জ্বলেন! চিরতরে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাওয়ার আগে অনেক পুরস্কার উঠেছে তাঁর হাতে। এর মধ্যে আছে ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডসের চারটি ‘ব্ল্যাকলেডি’। জীবনের শেষ ছবি ‘অ্যাংরেজি মিডিয়াম’-এর জন্য সেরা জনপ্রিয় অভিনেতা হিসেবে আরেকবার এই স্বীকৃতি যোগ হলো তাঁর নামের পাশে। এবারের আসরে তাকেই আজীবন সম্মাননা দিয়েছে ভারতের ফিল্মফেয়ার ম্যাগাজিন।
ইরফানের পক্ষ থেকে দুটি পুরস্কারই নিয়েছেন তাঁর ছেলে। শনিবার (২৭ মার্চ) রাতে ৬৬তম ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস অনুষ্ঠানে বাবার পোশাক পরেই গিয়েছিলেন তিনি। এজন্য মায়ের সহায়তা পেয়েছে ছেলে। ঘরে ফিরে বাবিল জানান, ফ্যাশন শো ও র্যাম্প ওয়াকে অংশ নিতে মোটেও ভালো লাগতো না প্রয়াত অভিনেতার। তবে নিজের স্বাচ্ছন্দ্য বদলে দিতেই এমন পোশাক বানাতেন তিনি। বাবার পথই ধরেছে ছেলে!
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাবিল লিখেছেন, ‘বাবার পুরস্কার গ্রহণের পর আমার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেছি, কিছু বলার জন্য এটা আমার জায়গা নয়। লোকে বলে, বাবার সমকক্ষ হতে পারবো না আমি। তবে অন্তত তাঁর পোশাকে তো মানিয়ে নিয়েছি। আমাদের পরিবারকে ভালোবাসায় জড়িয়ে নেওয়ার জন্য দর্শক ও চলচ্চিত্র শিল্পের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। এটুকু বলতে পারি, আমরা একসঙ্গে পথ চলে ভারতীয় চলচ্চিত্রকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবো। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।’
হোমি আদাজানিয়া পরিচালিত ‘অ্যাংরেজি মিডিয়াম’ মুক্তি পায় গত বছরের ১৩ মার্চ। এরপর ২৯ এপ্রিল মুম্বাইয়ে চিরবিদায় নেন ইরফান। ক্যান্সারের সঙ্গে দীর্ঘদিন লড়ে শেষ পর্যন্ত হার মানেন তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর। তিনি রেখে গেছেন স্ত্রী সুতপা এবং দুই ছেলে বাবিল ও আয়ান খানকে।
২০০৪ সালে সেরা খল অভিনেতা (হাসিল), ২০০৮ সালে সেরা পার্শ্ব অভিনেতা (লাইফ ইন অ্যা…মেট্রো), ২০১৩ সালে সমালোচকদের চোখে সেরা অভিনেতা (পান সিং তোমর) এবং ২০১৮ সালে সেরা জনপ্রিয় অভিনেতা (হিন্দি মিডিয়াম) হন ইরফান। ‘অ্যাংরেজি মিডিয়াম’ তার ‘হিন্দি মিডিয়াম’ ছবিতে অনুপ্রাণিত সিক্যুয়েল। এতে একা বাবার চরিত্র ফুটিয়ে তোলেন তিনি।
এদিকে ‘গুলাবো সিতাবো’তে কৃপণ বৃদ্ধের ভূমিকায় অসামান্য কাজের জন্য সমালোচকদের চোখে সেরা অভিনেতার স্বীকৃতি পেয়েছেন বলিউড ‘শাহেনশাহ’ অমিতাভ বচ্চন। তার সহশিল্পী ফররুখ জাফর হয়েছেন সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী। এছাড়া সংলাপ, চিত্রগ্রহণ, পোশাক পরিকল্পনা ও শিল্প নির্দেশনায় সেরা হয়েছে সুজিত সরকার পরিচালিত ‘গুলাবো সিতাবো’।
‘থাপ্পড়’ ছবিতে স্বামীর চড় খেয়ে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া দৃঢ়চেতা গৃহিণীর চরিত্রে অনবদ্য নৈপুণ্য দেখানো তাপসী পান্নুর হাতে উঠেছে সেরা জনপ্রিয় অভিনেত্রীর সম্মান। এটি তার দ্বিতীয় ফিল্মফেয়ার। এর আগে ‘সান্ড কি আঁখ’ ছবির জন্য সমালোচকদের চোখে সেরা অভিনেত্রী হন তিনি। গল্পকার, আবহসংগীত, সম্পাদনা এবং শব্দসজ্জায় সেরা হয়েছে অনুভব সিনহার ‘থাপ্পড়’।
সমালোচকদের চোখে সেরা অভিনেত্রী ‘স্যার’ ছবির তিলোত্তমা সোম। গৃহকর্মী থেকে সেলাই মেশিনের কাজ শিখে ডিজাইনার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া নারীর চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন তিনি। ‘জাওয়ানি জানেমান’ ছবিতে প্রশংসনীয় অভিনয়ের সুবাদে আলায়া এফ হয়েছেন সেরা নবাগতা অভিনেত্রী।
* (বাঁ থেকে) তাপসী পান্নু, বাবা কবির বেদির সঙ্গে আলায়া এফ এবং তিলোত্তমা সোম
‘তানহাজি: দ্য আনসাং ওয়ারিয়র’ ছবির জন্য সাইফ আলি খান সেরা পার্শ্ব অভিনেতা এবং ওম রাউত হয়েছেন সেরা পরিচালক। এছাড়া সেরা অ্যাকশন ও সেরা ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস শাখায় সেরা হয়েছে ছবিটি। সমালোচকদের চোখে সেরা চলচ্চিত্র হয়েছে প্রতীক বৎসের ‘ইব আলে ও!’।
নৃত্য পরিচালক ফারাহ খান সপ্তমবারের মতো ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস পেয়েছেন। ‘দিল বেচারা’র শিরোনাম সংগীতের জন্য তার ঘরে এসেছে এটি। ছবিটি মুক্তির কয়েক মাস আগে এর অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত আত্মহত্যা করেন। তাই পুরস্কারটি গ্রহণের কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানাতে গিয়ে তাঁকে স্মরণ করেন ফারাহ খান। এটাই ছিল তাদের একসঙ্গে একমাত্র কাজ।
করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বলিউডের অনেক তারকা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। মঞ্চ মাতিয়েছেন হৃতিক রোশন, সারা আলি খান, আয়ুষ্মান খুরানা, রাজকুমার রাও, নোরা ফাতেহি, সানি লিওনি। অভিনেতা রিতেশ দেশমুখ ও রাজকুমার রাও এই আয়োজন সঞ্চালনা করেন। আগামী ১১ এপ্রিল ভারতের কালারস টিভিতে প্রচার হবে ৬৬তম ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডসের ধারণকৃত অনুষ্ঠানটি।
ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস ২০২১ বিজয়ী তালিকা
সেরা চলচ্চিত্র: থাপ্পড় । সেরা অভিনেতা: ইরফান খান (অ্যাংরেজি মিডিয়াম), সেরা অভিনেত্রী: তাপসী পান্নু (থাপ্পড়), সেরা পার্শ্ব অভিনেতা: সাইফ আলি খান (তানহাজি: দ্য আনসাং ওয়ারিয়র), সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী: ফররুখ জাফর (গুলাবো সিতাবো), সেরা অভিনেতা (সমালোচক): অমিতাভ বচ্চন (গুলাবো সিতাবো), সেরা অভিনেত্রী (সমালোচক): তিলোত্তমা সোম (স্যার), সেরা পরিচালক: ওম রাউত (তানহাজি: দ্য আনসাং ওয়ারিয়র), সেরা চলচ্চিত্র (সমালোচক): ইব আলে ও! (প্রতীক বৎস), সেরা গল্প: থাপ্পড় (অনুভব সুশিলা সিনহা, ম্রুনময়ী লাগু ওয়াইকুল), সেরা চিত্রনাট্যকার: রোহেনা গেরা (স্যার), সেরা সংলাপ রচয়িতা: জুহি চতুর্বেদি (গুলাবো সিতাবো), সেরা নবাগত পরিচালক: রাজেশ কৃষ্ণান (লুটকেস), সেরা নবাগতা অভিনেত্রী: আলায়া এফ (জাওয়ানি জানেমান), সেরা গানের অ্যালবাম: লুডো (প্রীতম চক্রবর্তী), সেরা গীতিকার: গুলজার (ছাপ্পাক), সেরা গায়ক: রাঘব চৈতন্য (এক টুকরা ধুপ, ছবি: থাপ্পড়), সেরা গায়িকা: অসীস কৌর (মালাং, ছবি: মালাং), আজীবন সম্মাননা: ইরফান খান, আরডি বর্মণ অ্যাওয়ার্ড: গুলজার, সেরা অ্যাকশন: তানহাজি: দ্য আনসাং ওয়ারিয়র (রমাজান বুলুত, আরপি যাদব), সেরা আবহসংগীত: থাপ্পড় (মঙ্গেশ উর্মিলা ধাকড়ে), সেরা চিত্রগ্রাহক: অভীক মুখোপাধ্যায় (গুলাবো সিতাবো), সেরা নৃত্য পরিচালক: ফারাহ খান (দিল বেচারা, ছবি: দিল বেচারা), সেরা পোশাক পরিকল্পনা: বীরা কাপুর (গুলাবো সিতাবো), সেরা সম্পাদনা: যশা পুষ্প রামচান্দানি (থাপ্পড়), সেরা শিল্প নির্দেশক: মানসি ধ্রুব মেহতা (গুলাবো সিতাবো), সেরা শব্দসজ্জা: কামোদ খারাদে (থাপ্পড়), সেরা ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস: তানহাজি: দ্য আনসাং ওয়ারিয়র (প্রসাদ সুতার)।
স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের পুরস্কার
সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র (ফিকশন): অর্জুন (শিবরাজ ওয়াইচাল), সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র (নন-ফিকশন): ব্যাকইয়ার্ড ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি (নিতেশ রমেশ পারুলেকার), সেরা অভিনেত্রী: পূর্তি সাবারদেকার (দ্য ফার্স্ট ওয়েডিং), সেরা অভিনেতা: অর্ণব আবদাগিরে (অর্জুন), সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র (জনপ্রিয়): দেবী।
– সূত্রঃ ইত্তেফাক। ( বাবা পরপারে, পুরস্কার নিতে ছেলে মঞ্চে )
এস এস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান