করোনার কারণে ধসে পড়তে পারে ভারতের অর্থনীতি
সিবিএনএ নিউজ ২৭ এপ্রিল, ২০২১ । করোনা ভাইরাস মহামারীতে বিপর্যস্ত ভারতের পাশে দাঁড়াতে অক্সিজেন, টিকা তৈরির কাঁচামালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী নিয়ে এগিয়ে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ। দেশটির বড় বড় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ধনী অভিনেতারা দিচ্ছেন নগদ অর্থ। কিন্তু এত কিছুর পরেও এই বিভীষিকাময় পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ মিলবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের ডুবতে বসা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নৌকার সব ছিদ্র বন্ধ করতে যেসব আন্তর্জাতিক সহায়তা আসছে তা কতটুকু যথেষ্ট তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। দেশটির সেন্টার ফর ডিজিজেস ডায়নামিকস, ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিসির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ডা. রামানন লক্ষ্মীনারায়ণ বিভিন্ন দেশের সহায়তার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েই বলেছেন, ভারতের এখন মরিয়া অবস্থা। এসব সহায়তায় সংকটের ছিটেফোঁটা হয়তো মিটবে কিন্তু পুরোপুরি না।
মূলত ইদানীং ভারতে কোভিডের যে সুনামি দেখা যাচ্ছে তার কারণেই বৈশ্বিক রেকর্ড আবারও ভাংলো। ২৭ এপ্রিল ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী একমাত্র ভারতে সর্বশেষ একদিনে কোভিড শনাক্ত হয়েছে ৩ লাখ ৬২ হাজার ৯০২জন। এটিও বিশ্বের কোনো রাষ্ট্রে একদিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণ। দেশটিতে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ডও হয়েছে। ভরতে ২৪ ঘণ্টায় কোভিডে প্রাণ হারিয়েছেন ৩ হাজার ২৮৫জন। এতে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ২ লাখ ১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে । ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী শনাক্তের দিক থেকে বিশ্বে ২য় অবস্থানে থাকা ভারতে এ পর্যনত করোনায় ১ কোটি ৭৯ লাখ হাজারের বেশি মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন। একই সাথে ভারতে এ পর্যন্ত মারা গেছে ২ লাখ ১ হাজার ৬৫ জন এবং ভারতে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১ কোটি ৪৮ লক্ষ ৭৭ হাজার ৪ জন।
এর আগে গত রবিবার যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে চিকিৎসা, করোনা পরীক্ষার কিট, ভেন্টিলেটর এবং পিপিই সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেয়। সেইসঙ্গে টিকা তৈরির কাঁচামাল রপ্তানিতে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, তাও তুলে নেওয়া হয়। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক টুইটে বলেন, মহামারীর শুরুতে আমাদের হাসপাতালগুলোতে যখন চাপ বাড়ছিল, তখন ভারত যেভাবে আমাদের সহায়তা পাঠিয়েছে, ভারতের প্রয়োজনেও আমরা সহায়তা দিতে বদ্ধপরিকর। সামনের মাসগুলোতে নিজেদের মজুদ থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি ছয় কোটি টিকার ডোজ অন্যান্য দেশকে দেওয়া হবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য ভারতকে ৪৯৫টি অক্সিজেন তৈরির যন্ত্র ও ১৪০টি ভেন্টিলেটর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অক্সিজেন পাঠানোর চিন্তা করছে ফ্রান্স এবং অস্ট্রেলিয়াও। এমনকি ভারতের চির শত্রু হিসেবে পরিচিত প্রতিবেশী পাকিস্তানও এক্স-রে মেশিন, ভেন্টিলেটর এবং অন্যান্য সহায়তা দিতে চেয়েছে। আবার মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী সত্য নাদেলা এবং গুগল প্রধান সুন্দার পিচাই জানিয়েছেন, ভারতকে অর্থ সহায়তা দেবে তাদের প্রতিষ্ঠান।
নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছে, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট এখন প্রতিদিন ২৪ লাখ ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা তৈরি করছে। কিন্তু তারপরও টিকাদানের গতি বাড়াতে দেশটি হিমশিম খাচ্ছে। ১৪০ কোটি মানুষের দেশটিতে মোট জনসংখ্যার মাত্র ২ শতাংশকে টিকার আওতায় আনা গেছে। অথচ মহামারীর মধ্যে ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে দিয়েছে ভারত। পাশাপাশি বিক্রির লক্ষ্য রেখে টিকা নীতি ঘোষণা করেছিল নরেন্দ্র মোদি সরকার। আবার ২০২১ সালের শুরুতে যখন ভারতে সংক্রমণ একটু কমে এসেছিল তখন নরেন্দ্র মোদি সরকারের কথায় মনে হচ্ছিল, ভারত করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছে। অথচ দেখা গেল বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে সেখানে বিশাল সভা-সমাবেশ চলেছে। বিপুল সংখ্যক পুণ্যার্থীর ভিড় দেখা গেছে কুম্ভ মেলায়। ফলে সংক্রমণ রুখতে সরকার কতটুকু আন্তরিক তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এখন যখন পরিস্থিতি খারাপের দিকে তখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কণ্ঠ অনেক গম্ভীর। জাতির উদ্দেশে ভাষণে তিনি বলেছেন, করোনা ঝড়ে ভারত কেঁপে উঠেছে। মূলত করোনা ভাইরাস মোকাবিলার প্রস্তুতি এবং সক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের চেয়ে পিছিয়ে ছিল ভারত। এখন এই সমস্যার একমাত্র সমাধান হতে পারে টিকা। ডা. রামানন লক্ষ্মীনারায়ণ বলেন, ভারত যদি দ্রুততার সঙ্গে টিকা উৎপাদন বাড়াতে পারে এবং জরুরি ভিত্তিতে অন্য কোম্পানিকে টিকা তৈরির অনুমোদন দেয়, তাহলে করোনা ভাইরাসের এই সংকট নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। এটাই এই সংকটের একমাত্র দীর্ঘমেয়াদি সমাধান। ভারত যদি চায়, তবে সেটা করার সামর্থ্য তাদের আছে।
এদিকে চলমান বিপর্যয়কর পরিস্থিতি ভারতের অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলবে বলে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্রের চেম্বার অব কমার্স। তারা বলছে, মহামারীর এই ধাক্কায় ধসে যেতে পারে ভারতের অর্থনীতি। যুক্তরাষ্ট্রের চেম্বার অব কমার্সের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইরন ব্রিলিয়ান্ট বলেছেন, তাদের অনেক কোম্পানি ভারতীয় কর্মীদের তাদের কাজে ব্যবহার করে। এ জন্য ক্ষতির ঝুঁকি রয়েছে। তাদের ধারণা, ভারতের পরিস্থিতি উন্নত হওয়ার আগেই ভয়াবহ অবনতি ঘটতে পারে। এ অবস্থায় ভারতের অর্থনীতির জন্য বড় রকম ঝুঁকি আছে। করোনার কারণে ধসে পড়তে পারে ভারতের অর্থনীতি সংবাদ সহযোগিতায়Ñ আমাদের সময়
এস এস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান