চট্টগ্রামে পথে-ঘাটে নবজাতক !চট্টগ্রামে জানুয়ারি মাসে ৩ জন ও গত বছর ফেব্রুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯ জন নবজাতক কুড়িয়ে পাওয়া গেছে। এদের কেউ পথের ধারে, কেউ রেল লাইনে, কেউ ময়লার স্তূপে, আবার কেউ ডাস্টবিনে ছিল। যা অমানবিক। এ বিষয়ে সিএমপি অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম বলেন, ইয়াবার পাশাপাশি চট্টগ্রামে আরেক দুশ্চিন্তার নাম ধর্ষণ। উঠতি তরুণ সমাজ এতই বেপরোয়া যে, যাদের নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন। বিশেষ করে চলন্ত বাসে যৌন হয়রানি ও শিশু ধর্ষণ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ প্রশাসন, বিআরটিএ, জেলা প্রশাসনসহ কয়েকটি সংস্থা হিমশিম খাচ্ছে। এরমধ্যে পাগলিও রেহাই পাচ্ছে না এদের ধর্ষণ থেকে। ফলে নগরীর যত্রতত্র নবজাতক কুড়িয়ে পাওয়ার হার বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
আমেনা বেগম বলেন, এমন অবস্থা আগে তেমনটা ছিল না। গত এক দশক ধরে নবজাতক কুড়িয়ে পাওয়ার ঘটনা বাড়ছে। যা থেকে সহজেই অনুমেয়-ধর্ষণ এখন মহামারি রূপ নিয়েছে। তবে ধর্ষণে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি চলন্ত বাসে যৌন হয়রানি সচেতনতামূলক কাজও করছি আমরা।
সূত্রমতে, চট্টগ্রাম মহানগরীতে প্রতিমাসে একাধিক নবজাতক মিলছে প্রতিমাসে। এরমধ্যে গত শুক্রবার সকালে সর্বশেষ একটি মেয়ে নবজাতক পাওয়া গেছে ডবলমুরিং থানাধীন দেওয়ানহাট রেললাইনের পার্শ্ববর্তী ডকের কাছে।
ডবলমুরিং মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আলাউদ্দিন জানান, ৩১শে জানুয়ারি শুক্রবার সকালে একজন লোক এসে জানালেন রেললাইনের পাশে এক নবজাতক কান্না করছে। একটু এগোনোর পর দেখা যায়, রক্তমাখা শিশুটি রেললাইনের পাশে পড়ে আছে। দূরে দাঁড়িয়ে আছে এক মানসিক ভারসাম্যহীন নারী। ধারণা করা হচ্ছে- তিনিই শিশুটির জন্মদাত্রী। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে তার নাম রিনা ছাড়া আর কিছুই বলতেই পারেননি। পরে স্থানীয় এক নারীর সহযোগিতায় শিশুটি ও তার মাকে নিয়ে যাওয়া হয় আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে। জন্ম হওয়ার পরবর্তী চার ঘণ্টা খালি গায়ে পড়ে থাকার কারণে শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। শিশুটিকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) এবং তার মাকে গাইনি ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের চিকিৎসায় সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
এর আগে গত ১৯শে জানুয়ারি রোববার নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার মোস্তফা কলোনির পশ্চিম শহীদনগর ওয়েল মিলস জি.সি ফ্যাক্টরীর পাশে ময়লার স্তূপ থেকে এক নবজাতক শিশুকন্যাকে উদ্ধার করে পুলিশ। চিকিৎসার পর সুস্থ থাকায় অভিভাবকহীন নবজাতকটিকে চমেক হাসপাতাল থেকে লালন-পালনের জন্য রৌফাবাদ সরকারি ছোট মণি শিশুনিবাসে পাঠানো হয়।
বায়েজিদ বোস্তামী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রিটন সরকার জানান, রাকিব (১৩) নামে এক পথশিশু রোববার সকালে ময়লার স্তুপের মধ্যে কাগজ কুড়াতে গিয়েছিল। সেখানে নবজাতক শিশুর কান্না শুনতে পেয়ে সে পুলিশের কাছে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শিশুকন্যাটিকে উদ্ধার করে।
এর আগে গত ৭ই জানুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আগ্রাবাদের গ্রামীণ ফোন সেন্টারের সামনে রাস্তার উপর সন্তান প্রসব করে রোজিনা। খবর পেয়ে রোজিনার পাশে গিয়ে দাঁড়ায় মানবিক পুলিশ সদস্য এসআই মাসুদুর রহমান। তিনি ডবলমুরিং থানার দেওয়ানহাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত। এসআই মাসুদুর রহমান বলেন, রোজিনা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল। তার ছেলের নাম রাখা হয়েছে আয়াত। সে এখন এক ধনাঢ্য পরিবারে বেড়ে উঠছে।
এর আগে ৮ই ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার পশ্চিমচাল কবিরার এলাকায় রাস্তার ধারে এক দোকানের সামনে এক পাগলীর গর্ভে জন্ম হয় এক নবজাতক। রাতের আঁধারে প্রসব বেদনায় গগনবিদারী চিৎকার শুনে গন্তব্যে ছুটে যান পশ্চিমচাল কবিরা গ্রামের স্থানীয় কিছু যুবক ও নারী। সেখানে জন্ম হয় ছেলে শিশুটির। এ সময় তাদের উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসেন এক নারী।
সেদিন রাতের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে মোহাম্মদ ইলিয়াছ নামে একজন বলেন, মানসিক অসুস্থ অবস্থায় বাজারের বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরি করতো পাগলী মেয়েটি। চিৎকার শুনে রোববার রাতে স্থানীয় নারী ও কয়েকজন যুবক নবজাতকসহ প্রসূতি পাগলী মাকে আশ্রয় দেন। ডাক্তার এনে তাদের চিকিৎসা করায়। বর্তমানে মা ও শিশু দুজনেই সুস্থ আছেন।
গত বছর ১৭ই নভেম্বর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পূর্ব গেটের কাছে একটি ডাস্টবিনে দুই নবজাতককে নিয়ে কুকুর টানাটানি করছিল। খবর পেয়ে পাঁচলাইশ থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক ইমাম হোসেন কুকুরের মুখ থেকে বাচ্চা দুটি উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে পাঠান।
ইমাম হোসেন বলেন, বাচ্চাগুলো অপরিণত ছিল। তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পূর্ণতা পায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, কোনো ক্লিনিকে অবৈধ গর্ভপাতের পর কাপড় মোড়িয়ে তাদের ডাস্টবিনে ফেলে গেছে। লাশ দুটির ময়নাতদন্ত শেষে দাফনের জন্য আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের কাছ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে ১৮ইঅক্টোবর চট্টগ্রামের পতেঙ্গার নাজিরপাড়া এলাকার সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেডের (এসএপিএল) পাশে রাস্তার পাশ থেকে এক নবজাতককে পান সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর শাহানূর বেগম। তখন নবজাতকটির মানসিক ভারসাম্যহীন মা পাশে ছিল। উদ্ধারের পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে যায়। কাউন্সিলর নিজেই এই শিশুটির পরিচর্যা করছেন এখন।
এর আগে ২২ মে চট্টগ্রামে নালা থেকে জীবিত একজন এবং ডাস্টবিন থেকে মৃত দুই নবজাতককে উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে গত ২০শে ফেব্রুয়ারি রাতে চট্টগ্রামের কর্নেলহাট এলাকার ডাস্টবিনে পাওয়া যায় আরেক নবজাতক। তার নাম রাখা হয় একুশ। চট্টগ্রামের সমাজবিদ ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. অনুপম সেন মনে করছেন, প্রথমত ধর্মীয় অনুশাসন থেকে সরে যাওয়ার কারনে যৌন অপরাধে লিপ্ত হয়ে পড়ছে মানুষ। বিশেষ করে উঠতি তরুণ সমাজ ধর্মীয় অনুশাসন থেকে দুরে সরে যাচ্ছে। যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের প্রভাবে যৌনতায় আকৃষ্ট হচ্ছে।