ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে রাজধানীর উত্তাপ কমতে না কমতেই গতকাল পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় সিএএবিরোধী বিক্ষোভ হয়। ছবি : এএফপি
দিল্লিতে সহিংসতা
দাঙ্গার মধ্যেই হিন্দু-মুসলিম হাতে হাত রাখার গল্প
দাঙ্গার মধ্যেই হিন্দু-মুসলিম হাতে হাত রাখার গল্প …। মনোজ শর্মা আর জামালউদ্দিন সাইফী গত রবিবার বিকেলে তাঁদের বাড়ির কাছে পাশাপাশি বসেছিলেন। আর ঠিক তখনই প্রধান সড়কের দিক থেকে একদল সশস্ত্র দাঙ্গাবাজ ইট-পাটকেল ছুড়ে ও দোকানপাট ভাঙচুর করতে করতে এগিয়ে আসছিল বিজয় পার্কের দিকে। অবস্থা দেখে তখন পালানো ছাড়া শর্মা ও সাইফীর আর কোনো বিকল্প ছিল না। কিন্তু তাঁরা দীর্ঘ সময়ের জন্য পালিয়ে যাননি। কিছুক্ষণ পরই ওই এলাকার আরো লোকজনকে একত্র করে নিজেদের গলি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন দাঙ্গাকারীদের। এর মধ্যে পুলিশের কয়েকটি গাড়িও দেখা গেল সেখানে। ততক্ষণে দাঙ্গাকারীরা যা করেছে, প্রধান সড়কে তা দৃশ্যমান—জানালার ভাঙা গ্লাস, পুড়ে যাওয়া মোটরবাইক ও গাড়ি। পরে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা এসব সরিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করার কাজ শুরু করেন।
স্থানীয় অধিবাসী আব্দুল হামিদের অভিযোগ, ‘পুলিশই উসকানি’ দিয়েছে দাঙ্গাকারীদের, যারা রড আর লাঠি হাতে উত্তেজক স্লোগান দিচ্ছিল। অনেকে বলছেন গুলিও হয়েছে সেদিন, আর বিহার থেকে আসা একজন শ্রমিক মুবারক তাতে প্রাণ হারিয়েছেন।
জামালউদ্দিন সাইফী বলেন, ওই দিন দাঙ্গাকারীরা এলাকায় ঢুকতে না পারলেও পরের দিন, অর্থাৎ সোমবার তারা আবার চেষ্টা করে। তবে তিনি বলেন, ওই দিন তাঁদেরও যথেষ্ট প্রস্তুতি ছিল। তিনি বলেন, ‘এলাকার প্রধান লেনগুলো বন্ধ ছিল আর বহু মানুষ একসঙ্গে বসেছিল। সাইফীর নিজের বাড়িও ভাঙচুরের শিকার হয়।
ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে যাতে ইন্ধন জোগানোর অভিযোগ উঠছে পুলিশের বিরুদ্ধেও। মৌজপুর এলাকাতেই বিজয় পার্ক। আর ওই মৌজপুরই এবারের সহিংসতায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর একটি। মৌজপুর-বাবরপুর মেট্রো স্টেশন এখনো বন্ধ, যদিও অন্য এলাকায় ট্রেন চলছে স্বাভাবিকভাবেই।
বিজয় পার্ক এমন একটি এলাকা, যেখানে হিন্দু ও মুসলমান পাশাপাশি বাস করে। এলাকার দুটি লেনে মন্দিরও আছে, আবার মসজিদও আছে—ভারতের অন্য অনেক শহরের মতোই। ফলে যেকোনো ধরনের দাঙ্গায় এলাকাটির পরিণাম হতে পারে ভয়াবহ। পবন কুমার শর্মা একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি জানান, স্থানীয়রা একটি কমিটি করেছেন ২০ জন চেনাজানা ব্যক্তিত্বকে নিয়ে, যাদের মধ্যে হিন্দু ও মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মানুষই আছে। তারা ঘরে ঘরে গেছেন এবং লোকজনকে কোনো গুজবে কান না দিতে অনুরোধ করেছেন। শর্মা বহু বছর ধরে মন্দিরের একজন ট্রাস্টি। দাঙ্গাকারীরা ওই এলাকায় ঢুকতে চেষ্টা করার এক দিন পর মঙ্গলবার তাঁরা একটি শান্তি মিছিল করেছেন।
জুলফিকার আহমেদ পিস কমিটির একজন সদস্য। তিনি বলছেন, ‘গলির মুখে রাতভর আমাদের এলাকার লোকজন ছিল। যে গলিতে হিন্দু বেশি সেখানে তাদের দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে। আবার যেখানে মুসলিম বেশি সেখানে মুসলমানদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’ ধরম পাল একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী এবং এলাকায় এখন খুবই সক্রিয়। তিনি বলেন, ‘এখন পুলিশ যদি নাও থাকে তাহলেও কিছু হতে দেব না। বিজয়নগরের অলিগলিতে জীবনযাত্রা এখন স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে।’ হিন্দু সবজি বিক্রেতারা আবার সক্রিয় হয়েছেন। তবে তাঁরা যে এলাকা থেকে আসেন সেখানে তাঁরা দাঙ্গা দেখেছেন অনেকে। তবে গুলিতে তরুণ মুবারকের মৃত্যু মানুষকে বেশ কষ্টই দিয়েছে। আর গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে আছেন সুরেন্দ্র সিং রাওয়াত। সূত্র : বিবিসি।
আরও পড়ুনঃ
সর্বশেষ সংবাদ
কানাডার সংবাদ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন