সড়কে নিভে গেল আশার আলো
অভিনেত্রী আশা চৌধুরীর স্বপ্ন ছিল একদিন প্রধান চরিত্রে অভিনয় করবেন। হবেন দেশসেরা অভিনেত্রী। দেশ-বিদেশ থেকে প্রশংসা কুড়াবেন। হাঁটছিলেনও ওই পথে। তার অভিনয় দক্ষতায় মুগ্ধ হয়েছিলেন অনেক নির্মাতা। সুযোগও হয়ে যায় একটি নাটকের প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের। যেদিন নাটকের নির্মাতা তাকে একটি গল্প দিয়ে জানালেন তিনিই এই নাটকের প্রধান চরিত্রে অভিনয় করবেন। সেদিন তার চোখে মুখে ছিল শুধুই আনন্দের ছাপ।
শুভাকাঙ্ক্ষীদের ফোন করে তিনি নিজেই আনন্দটা ভাগাভাগি করেছিলেন। শুভাকাঙ্ক্ষীরাও তাকে বড় অভিনেত্রী হওয়ার দোয়া করেছিলেন। কিন্তু আশার সেই স্বপ্ন আজ স্বপ্নই রয়ে গেল। একটি সড়ক দুর্ঘটনায় নিভে গেল আশার সব স্বপ্ন। দু’দিন আগে যে শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে আশার সফলতার বার্তা গেছে। আজ তাদের কাছেই গেল আশার মৃত্যু সংবাদ।
স্বজনরা জানিয়েছেন, সোমবার রাতে বোর্ডবাজার এলাকা থেকে ফিরছিলেন এই অভিনেত্রী। সেখানে তাদের নিজেদের বাড়ির নির্মাণ কাজ চলছে। সেটা দেখভাল করে ফেরার কথা ছিল তাদের রূপনগর আবাসিক এলাকার বাসায়। কিন্তু তার আর বাসায় ফেরা হয়নি। রাত দেড়টার দিকে টেকনিক্যাল মোড়ে আসার সঙ্গে সঙ্গেই একটি ট্রাক পেছন থেকে তাকে বহনকারী মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এতে মোটরসাইকেল থেকে তিনি অন্তত ২০ ফুট দূরে গিয়ে ছিটকে পড়েন। পাকা রাস্তায় পড়ে তার মাথা থেতলে যায়। গুরুতর অবস্থায় সেখান থেকে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রায় চার বছর আগে আশা চৌধুরী টেলিভিশন নাটকের মাধ্যমে অভিনয়ে আসেন। অভিনয়কেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। শিল্পী হিসেবে বিটিভি’র তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন। আশা সমপ্রতি বড় পর্দায়ও নাম লিখিয়েছিলেন। তার অভিনীত ছবিটির নাম ‘বাবা মেয়ে’। মুক্তির অপেক্ষায় আছে তার অভিনীত একাধিক নাটক এবং টেলিছবি। আশা চৌধুরীরা চার বোন। সে ছিল সবার বড়। ঢাকার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলোজিতে (বিইউবিটি) সপ্তম সেমিস্টারে পড়াশোনা করতেন। তার গ্রামের বাড়ি পাবনা। চলতি সপ্তাহে নির্মাতা রোমান রুনীর নাটক ‘দ্য রিভেঞ্জ’-এ অভিনয় করেছেন। এতে তিনি অভিনয় করেন জনপ্রিয় অভিনেতা সালাউদ্দিন লাভলু ও আনিসুর রহমান মিলনের সঙ্গে। এই নাটকের নির্মাতা রোমান রুনী বলেন, আশার একটা স্বপ্ন ছিল প্রধান চরিত্রে অভিনয় করার। তার অভিনয় দক্ষতার কারণে আমি সেই সুযোগ তাকে দিয়েছিলাম। আমি যখন তাকে গল্পটি দিয়ে জানাই, তিনিই প্রধান নায়িকা। তখন চরিত্রটি ঠিকভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য তিনি টানা এক সপ্তাহ ধরে পরিশ্রম করেছেন।
আশার মৃত্যুতে তার সহকর্মীরা শোক প্রকাশ করেছেন। অভিনেতা আনিসুর রহমান মিলন তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, সড়কে নিভে গেল আশার আলো আমার ২০২১ সালের শুরুর কাজটি ছিল ১ ও ২ তারিখ। যেখানে আশা চৌধুরী নামের এই মেয়েটি অভিনয় করেছেন, তার মানে দু’দিন আগেই কাজ করেছি একসাথে। এক সড়ক দুর্ঘটনায় আশা চিরতরে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন, (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আশার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
ঢাকা মেট্রাপলিটন পুলিশের মিরপুর বিভাগের দারুসসালাম জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মাহমুদা আফরোজ লাকী বলেন, ঘটনার রাতে অভিনেত্রী আশা ঢাকার বাইরে থেকে তার পরিচিত একজনের মোটরসাইকেলে করে ফিরছিলেন। রাত গভীর হওয়াতে ওই ব্যক্তি হয়তো একটু দ্রুত গতিতেই মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন। এমন সময় পেছন থেকে একটি ট্রাক এসে ধাক্কা মারে। খবর পেয়ে দারুসসালাম থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে জানান। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। -মানবজমিন
এস এস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন