জয়িতা চট্টোপাধ্যায়-এর একগুচ্ছ কবিতা
কতটুকু আর দূরত্ব তোমার আমার মাঝে
সহস্র আলোকবর্ষ চোকিতে পার হতে পারি
তুমি দাঁড়িয়ে থাকলে বিপরীত পারে
রোজ মনে হয় তোমার পায়ের কাছে হাঁটু গেরে বসি
তোমার নগ্ন বুকে উষ্ণ নিঃশ্বাস ফেলার আগে ভাগে
স্বীকার করে নিই আমি দোষী
শঙ্খের মতো অলঙ্কিত পায়ের পাতা
দুটো বুকের কাছে টানি
চুম্বনে , অশ্রুর জলে অভিষেক হয় তোমার
আমি বুকের ভেতর একটু একটু করে কাঁপি
বাইরের সমস্ত জীবন মিথ্যে হয়ে যায়
বহুকাল পর অশ্রু বিস্মৃত তোমার কণ্ঠস্বর
সমস্ত শব্দ ভীষণ মায়াময় মনে হয়
তোমার দুঃখের সঙ্গে দুঃখ মিশিয়ে আদর করি
সমস্ত সেলাই করা সামাজিক বন্ধন তছনছ করি
স্ফুরিত হয় ব্রহ্ম মুহূর্ত
আমি এসে বসি তোমার পায়ের কাছে
আবহাওয়ায় তখনও নিম্নচাপ আছে
ধারাবাহিক ফসল ধ্বংস করে
আমরা সৃষ্টির বীজ বুনি
নিজস্ব নিয়মে ঘাম হয়
ওটাই আমাদের শ্রেষ্ঠ সময়
সবকিছু তুচ্ছ করে বারবার ফিরে আসি
আমরা ব্যক্তিগত স্বর্গে
অতৃপ্ত সিঁড়ি দিয়ে উঠে যাই তোমার বন্দী শরীরে
এলাচের গন্ধের মতো তোমার মুখের ঘ্রাণ
আমার স্থির দৃষ্টি
তোমার তেজী অভিমান
দুলিয়ে দেয় ভুলিয়ে দেয় ভূলোক দুলোক সীমানা
ত্রিকাল দুলিয়ে ছুঁয়ে যাই তোমার গ্রীবা ভঙ্গি
ওষ্ঠ, চিবুক ,নরম গলা
আমার বুক কেঁপে ওঠে
বুকের ওপর বুকের স্পর্শ
অসম্ভব দূরত্ব পেড়িয়ে এসেছি
ব্যাথা সরিত সাগরে
তোমাকে চুম্বনের আগে অশ্রু ঝরে
আমার মন কেমন করে।।
২. নতুন দিন
স্নানসিক্ত পৃথিবীতে নতুন মহিমায় যদি আমাদের আবার মনুষ্য জন্ম ঘটে
অচেনা ভাষার মতো তোমার দিকে থাকব চেয়ে
মূঢ়ের মতন
চতুর্দিকে হাহাকার মুছে যাবে
ছড়িয়ে পড়বে স্নিগ্ধ সুখ
আসবে নতুন দিন
শ্রেণীহীন স্পর্ধা হীন
থাকবে আমাদের জন্য নতুন সমাজ
লোভ হিংসার কড়ালো দাঁত ভেঙ্গে পড়ে যাবে
একাকিত্ব বা জনতায়
আমাদের স্বপ্ন শব্দের মুক্তি পাবে
একটা নতুন দিন গ্লানিহীন
থাকবে কালো অন্ধকারে ঢাকা ঘোর কালবেলা
হৃদপিণ্ডের অন্ধকার দিনে রাতে কণ্ঠরুদ্ধ করবে না
চাইনা অগ্নিকুন্ড
চাই প্রদীপ জ্বালা আলো
চাই শ্মশানের শান্তির মতো তোমার বুক
চতুর্দিকে রক্ত শুধু রক্ত
ছিন্ন ভিন্ন শরীর
না চাইনা রক্ত মাখা নোংড়া সিঁড়ি
নতুন একটা দিনের স্বপ্ন নিয়ে
আমি তোমার দিকে পাশ ফিরি।।
৩. পসরা
আমার রক্তে প্রবাহমান চেতনা
তুমি আমার গৃহীত সঞ্চয়
আমার ছায়ায় যে অবুঝটুকু আছে
তা যত্ন করে রাখো
শরীরী তাপে আছে রোদের পসরা
গলির মোড় ভিজে থাকে কাঁচা শব্দে
ট্রেনের হাওয়া বয়ে যায় চেতনার গা ঘেঁষে
স্নায়ুর ভেতর তুমি নামের জ্যোৎস্না এসে মেশে।।
বন্ধন
আমাকে ঠেলে ফেলো না জটিল কোনো বোধে
বিশ্বাস করো আমি সহ্য করতে পারিনা
আমার বয়স আমারই মুখোমুখি বসে
ধোঁয়াতে আমি কিছু দেখতে পাই না
আমার অবকাশ মুখর হয়
ঝুঁকে পরে তোমার কাছে
ভালোবাসার ধর্ম দিয়ে
তোমায় জটিল করে বাঁধে।।