প্রসঙ্গ করোনাভাইরাস এবং বিশ্ব বিপর্যয় ! ক্যানাডার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাষ্টিন ট্রুডোর স্ত্রী সোফি গ্রেগরিও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন । গত বুধবার ১১মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)কে বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণা করার পরদিনই ১২মার্চ বৃহস্পতিরার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন প্রধানমন্ত্রী জাষ্টিন ট্রুডোর স্ত্রী সোফি গ্রেগরি । সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে লন্ডনে গিয়েছিলেন সোফি গ্রেগরি । আর সেখান থেকে ফেরার পরই সোফির করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা দেয় । হিসাব অনুযায়ী, ক্যানাডায় সোফি গ্রেগরি ১৫৮তম কোভিড-১৯ রোগী ।সরবশেষ খবরে সারা ক্যানাডায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত আক্রান্ত হয়েছেন এ পর্যন্ত ১৯৮ জন । এক বিবৃতিতে নিজের অস্বস্তিকর অনুভূতি জানিয়েছেন সোফি । তবে এও বলেছেন, তিনি খুব দ্রুত সেরে উঠবেন বলে আশা করছেন। স্ত্রী সোফি গ্রেগরি প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও তার লক্ষণ খুব গুরুতর নয় বলে জানিয়েছেন তার স্বামী প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো । তবে স্ত্রী সোফি গ্রেগরির রোগ প্রতিরোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান স্বামী ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো । গতকল্য শুক্রবার ১৩ মার্চ এক ভাষনে ক্যানাডার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, আমি ১৪ দিন স্বেচ্ছা আইসোলেশনে থাকবো । আমার আক্রান্ত হওয়ার কোনও লক্ষণ এখন পর্যন্ত নেই । আমি বেশ ভালো অনুভব করছি। প্রযুক্তি আমাকে ঘরে বসে কাজ করতে সাহায্য করছে । ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো আরও বলেন, ‘সারাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রতিটি পরিবারের কথা একইভাবে তিনি চিন্তা করছেন । ‘সবকিছুর পরও আমরা সামাজিক মানুষ- এটাই সত্যি’ করোনা ভাইরাসের কারণে ক্যানাডাকে নিরাপদ রাখতেও সব Levels of Government এক সাথে কাজ করছে বলে জাস্টিন ট্রুডো জানান । ক্যানাডায় ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসা বাণিজ্যকে সহায়তা দিয়ে অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে বিশেষ প্রণোদনা দিতে প্রস্তুত রয়েছে কানাডা সরকার । কানাডার উপপ্রধানমন্ত্রী ক্রিষ্টিয়া ফ্রিল্যান্ড সরকারের এই প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন । করোনা ভাইরাসের প্রতিক্রিয়ায় কানাডার শেয়ার বাজারে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় পতন ঘটেছে । একদিনের পতনের ইতিহাস পর্যালোচনায় ১৯৪০ সালের পর এই ধরনের পরিস্থিতি এই প্রথম বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা মন্তব্য করেছেন ।বন্ড বাই ব্যাকের মাধ্যমে বাজারে তারল্য সংকট দূর করার ঘোষনা দেয় ক্যানাডার কেন্দ্রিয় ব্যাংক ‘ব্যাংক অব কানাডা ‘। এদিকে ক্যানাডার অর্থমন্ত্রী Bill Morneau ক্যানাডার অর্থনীতিকে গতিশীল ও চাঙ্গা রাখতে ১০ বিলিয়ন ডলারের Stimulus Packageও ঘোষনা করেন ১৩ মার্চ ।
চীনের পর বর্তমানে ইউরোপ করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের উৎপত্তি চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে। সেখান থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১৩৬টির অধিক দেশ ও অঞ্চলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে।চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজারেরও অধিক ।চীনে মৃতের সংখ্যা ৩ হাজারের অধিক া চীনের পর এর মধ্যে ইতালির পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত হয়ে চীনের পর এখন ইতালিতে প্রতিদিন সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে এবং এ পর্যন্ত ইতালিতে মৃত্যুর সংখ্যা ১২৬০ ছাড়িয়েছে । গত ২৪ ঘণ্টায় ইতালিতে কোভিড-১৯–এ মারা গেছে ২৫০ জন, আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ২৬৬ জন। মোট আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৬৬০ । ইতালির পর ইরানে আক্রান্তের সংখ্যা ১১৩৬৪ জন এবং ইরানে মৃতের সংখ্যা ৬ শত ছাড়িয়েছে । ইতালির পর ইউরোপের আরেক দেশ স্পেনের পরিস্থিতিও খারাপ। সেখানে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত মৃত মানুষের সংখ্যা ৫০ শতাংশ বেড়ে ১২০–এ দাঁড়িয়েছে। মোট আক্রান্ত হয়েছে ৫০০০ জন । স্পেনের পরের অবস্থানে রয়েছে ফ্রান্স, সেখানে আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ৮৭৬ জন। । ফ্রান্সে ৬১ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মোট মৃত মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৯। জার্মানিতে মোট আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৩ হাজার ৬২। মারা গেছে পাঁচজন। বিশ্বের ১৩৩টি অধিক দেশের ১ লাখ ৪৫ হাজার এর বেশি মানুষ কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত হয়েছে । সারা বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা পাঁচ হাজারের অধিক । করোনাভাইরাসের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রে মোট আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ২৩ শত ছাড়িয়েছে এবং মারা গেছেন এ পর্যন্ত ৫০ জন । করোনা ঠেকাতে ৫০ বিলিয়ন ডলার সাহায্য তহবিল ঘোষণা করেন ট্রাম্প। একই সাথে সুখবর এই যে, বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুস্হও হয়ে উঠেছেন ৬৮ হাজারের বেশী মানুষ । বাংলাদেশে সতর্কতামূলক ১৬১৫ জন কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান ড. টেড্রস আধানম গেব্রেইয়েসাস বলেছেন, (Tedros Adhanom Ghebreyesus), বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারির কেন্দ্র এখন ইউরোপ। তিনি দেশগুলোর সরকারকে মানুষের জীবন বাঁচাতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ, সংহতি রাখা এবং সামাজিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই আগুনকে আর জ্বলতে দেবেন না।’
বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে আমরা সর্বান্তকরণে সকলের সুস্হতা, মঙ্গল ও কল্যান প্রর্থনা ও কামনা করছি । প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের কবলে আন্তর্জাতিক ব্যবসায়, পর্যটন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, খেলাধুলা-সবকিছুতেই একধরনের অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে । কোনভাবেই আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে দয়াকরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম মেনে চলুন ও নিজ নিজ সরকারের দেওয়া Guidelines মেনে চলুন ।
সূত্র: করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম
বিদ্যুৎ ভৌমিক, কলামিষ্ট, লেখক ও সিবিএনএ’এর উপদেষ্টা।
মন্ট্রিয়ল, ক্যানাডা, ১৪ মার্চ, ২০২০