পজেটিভ মাইন্ডসেট নিজেকে যোদ্ধা করে তুলে।
কোভিড-১৯ অদৃশ্য দানবের কবলে অসহায়ত্বের পরিসংখ্যান আমাদের মাইন্ডসেট কে দুর্বল করে তুলছে তা হলো ডর বা ভয়। নিজে ভয় পাওয়া এবং এই ভয়কে স্যোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া। মানুষের বোধশক্তি শরীরের উপর কিভাবে প্রভাব ফেলে এ নিয়ে আমেরিকান রিসার্চার ব্রুস লিপটনের দুই লাইন অনুবাদ করলে যা বুঝি, যে মুহুর্তে আমাদের চিন্তাশক্তি,ফোকাস ইতিবাচক দিক হারায় সেই মুহুর্তে আমাদের শরীরের রসায়ন পরিবর্তন হতে থাকে। শরীরের কর্টিসল হরমোন যা ইমিউন সিস্টেমে রিলিজ হয় তা দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়। তাই “বিপদে মোরে রক্ষা কর এ নহে মোর প্রার্থনা” আমাদের ইতিবাচক হয়ে থাকতে হবে। মৃতুর পরিসংখ্যান এর সাথে সাথে আশাদায়ক সংবাদ এবং পদক্ষেপ নিয়ে কথাবার্তা বললে তা আমাদের পজেটিভ মাইন্ডসেট, আমাদের ফোকাস পজেটিভ হয়, ইমিউন সিস্টেমর প্রতিরোধ ক্ষমতা ও বাড়ে।
টরন্টোতে শুরু থেকে সরকার ও হেলথ অফিসিয়াল যে স্টেপ ফলো করতে বলা হয়েছে কোভিড-১৯ নিয়ে, প্রাথমিক সাবধানতা, সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা, হাত বাড়ে বাড়ে ধুয়া, হাঁচি কে বাহুতে চেপে রাখা, হাত না মেলানো ইত্যাদি। সি,বি,সি ২৪ ঘন্টা প্রচার করছে এবং সেখানে এক্সপার্টদের শুনতে বলা হচ্ছে কিন্তু আমরা এক্সপার্ট বনতে চেষ্টা করছি। কেউ ফেইসবুক এ বললো কাল থেকে গলা ব্যাথা তো দশজন খারা হয়ে যায় ঢেলে দিই😃। মানে প্রেস্ক্রিপশান দিতেই থাকি।
তুলামুলকভাবে আমাদের কমিউনিটির মানুষ অনেক সচেতন। আমাদের নিজেদের পারস্পরিক সৌহার্দ্য, গ্রুপ করে, ব্যাক্তিগত ভাবে, দেখিয়ে, লুকিয়ে একে অন্যের পাশে দাঁড়ানো, উদাহরণ দেয়ার মত।
আর সার্বিক ভাবে এই শহরে করোনার সাথে যুদ্ধে সেবামূলক প্রফেশনের মানুষের সারা রীতিমতো বিপ্লব। সরকারি ভাবে হেলথকেয়ার প্রফেশনে সাহায্যের আবেদনে সারা দিয়েছেন তিন হাজার রেজিষ্টার্ড নার্স যাদের অধিকাংশই রিটায়ার জীবনে আছেন দীর্ঘদিন আবার কেউ সাম্প্রতিক রিটারমেন্টে গেছেন। স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এই মানুষ গুলি তাঁদের জীবন কে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছেন শুধু মানবতার সেবায়। টরন্টো স্টারের বরাত দিয়ে বলছি এই পর্যন্ত ১৩ জন ডাক্তার ও নার্স কোভিড-১৯ পজেটিভ ধরা পড়েছে। এই খবর চাউর হলে পড়েও কিন্তু কেউ রিজাইন করছেন না।
Brave Don’t give up, they live up to The challenges life throws at their life.
বৃটিশ কলাম্বিতে একশতর উপর রিটায়ারে যাওয়া ডাক্তার তাঁদের লাইসেন্স রিনিউ করার আবেদন করেছেন সেচ্ছাসেবা দেওয়ার জন্য। সিলভি জেফ্রয় নামে এক নার্স ৫৯ বছর বয়সে চাকরি ছাড়েন আর্লি রিটায়ার নিয়ে স্ট্রেস মুক্ত জীবনের আশায়। স্ট্রেস কে তুড়িমেরে উড়িয়ে তিনি আবার ফিরতে চাইছেন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সেবায়। তাঁর ভাষায়
“With the current situation, no, I won’t let them down,” she said in a phone interview. “If I can help, I will.”
এই প্রেরণা জাগানিয়া, আশা জাগানিয়া মানুষের কথা আমরা যত জানবো আমাদের মাইন্ডসেট আমাদের ফোকাস, চিন্তাশক্তি লড়াকু হয়ে উঠবে। আমাদের কে কেউ হিরো হতে বলছে না। প্রধানমন্ত্রি একদিন অন্তর অন্তর লাইভে আসছেন এবং বাড়ে-বাড়ে স্মরণ করছেন ফ্রন্ট লাইনারদের। নাগরিক হিসাবে আমাদের কাছে প্রশাসনের দাবী শুধু সামাজিক দুরত্ব রাখা এবং আজকে বলা হয়েছে পারলে সপ্তাহে একদিন বের হওয়ার জন্যে।
সমাজ-সংসারের তাবৎ ভাড় নিজের কাঁধে নিয়ে স্টেটাস না দিয়ে, দায়িত্বশীল হয়ে যে যার জায়গা থেকে, সচেতন থেকে একে অন্যের পাশে দাঁড়ানো, আমিই মনে হয় দুধ ঢালছি প্রতিদিন পুকুরে। এটাও একধরনের ভাইরাস,একে ও মারতে হবে। এই দুর্যোগে সবাই কিছু না কিছু করছে। যে চুপ হয়ে বসে আছে ঘরে, জীবানু ট্রান্সমিশন চেইন ভাঙায় তাঁর অবদান অনেক বেশি এবং এই মুহুর্তে ফ্রন্ট লাইনাররা সবার কাছ থেকে এটাই আশা করছেন।
সশ্রদ্ধ চিত্তের নমস্কার রেখে যাই প্রতিটি উদ্যোগ কে এবং আমাদের ফোকাসটাকে ঘুরিয়ে দেই উত্তোরণের দিকে।মৃত্যুর বিভীষিকা কে আড়াল করে, বেঁচে থাকার অদম্য গল্প শুনি। শ্বাস চললেইতো হবেনা , ফাইটার হতে হলে ইতিবাচক হয়ে জীবন কে জীবিত রাখতে হবে।
এই বিষ সনের ভিতরেই করোনার বিষক্ষয় হবে, সাঙ্গ হবে ছুঁয়াছে খেলা, আর নয় বেশি দিন একেলা, আদরে আবদারে মানুষ, মানুষ কে জড়িয়ে কাটাবে সারাবেলা।
হিমাদ্রী রয় সঞ্জীব।। লেখক, আবৃত্তিকার
২৪/৩/২০ টরন্টো
কাঅ/এসএস