শিমু হত্যা রিমান্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য নোবেলের
রিমান্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমুর স্বামী খন্দকার শাখাওয়াত আলীম নোবেল। হত্যাকাণ্ডের সময় শিমুর ছোট সন্তান মায়ের পাশেই ঘুমিয়ে ছিল। জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে শিমুর লাশ গুমের সহযোগী এবং নোবেলের বাল্যবন্ধু আব্দুল্লাহ ফরহাদের নানা কর্মকাণ্ড। এদিকে মেয়েকে হারিয়ে পাগলপ্রায় তার বাবা সাবেক ইউপি সদস্য মো. নুরুল ইসলাম রাঢ়ী। মেয়ের হত্যাকারীদের মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন শিমুর বাবা। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ১৫ই জানুয়ারি শনিবার ভোররাতে স্বামীর মাদকাসক্ত জীবন এবং শিমুর প্রফেশনাল বিষয়সহ তাদের সাংসারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তুমুল কথাকাটাকাটি হয়। হত্যাকাণ্ডের আগে শিমুর ৭ বছর বয়সী ছেলে মায়ের সঙ্গেই ঘুমিয়ে ছিল। ৩৪, গ্রিনরোডের তৃতীয় তলার নিজস্ব ফ্ল্যাটটিতে দাম্পত্য কলহের জেরে হত্যাকাণ্ডের সময় তাদের ১৬ বছর বয়সী মেয়ে পাশের কক্ষেই ঘুমিয়ে ছিল।
শিমুকে শ্বাসরোধে হত্যার সময় ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে যখন মৃত্যু নিশ্চিত হয় এ সময়ও ঘুমিয়ে ছিল শিশুটি। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পরে মরদেহ কক্ষের ভেতরে লুকিয়ে রাখে নোবেল। এ সময় অন্যান্যদের ঘুম ভাঙার পর ছেলে-মেয়ের সঙ্গে তিনি স্বাভাবিক আচরণ করেন।
মা কোথায় গেছে জানতে চাইলে সন্তানদের জানায়, শুটিংয়ের কাজে তাদের মা বাইরে গেছেন। তখন পর্যন্ত সন্তানরা জানতো না তাদের মা’কে হত্যা করে বাসার ভেতর মরদেহ লুকিয়ে রেখেছেন বাবা। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাল্যবন্ধু ফরহাদকে মুঠোফোনে গ্রিনরোডের বাসায় আসতে বলে নোবেল। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে বাসায় চলে আসেন ফরহাদ। এ সময় তারা প্রথমে একটি পাটের বস্তায় মরদেহ ভরতে চাইলেও বস্তার ভেতরে মরদেহ প্রবেশ করানো যাচ্ছিল না। পরবর্তীতে বস্তুাদুটি কেটে ভেতরে মরদেহ প্রবেশ করিয়ে অফ হোয়াইট রংয়ের সুতা দিয়ে বস্তাটি সেলাই করেন। এরপর তারা সিদ্ধান্ত নেন রাজধানীর অদূরে কোনো নির্জন স্থানে মরদেহটি ফেলে রেখে আসবেন। মরদেহটি নিয়ে তারা সরাসরি আশুলিয়ার দিকে যেতে চাইলেও মিনিটে মিনিটে তারা মত বদলান। প্রথম দফায় ব্যর্থ হয়ে দ্বিতীয় দফায় রোববার রাতে তারা মরদেহটিকে কেরানীগঞ্জের কলাতিয়ার একটি নির্জন স্থানে ফেলে আসেন।
সূত্র জানায়, নোবেলের পৈতৃক বাড়ি ফরিদপুর। চার ভাই-বোনের মধ্যে সে সবার বড়। খুব বেশিদূর পড়ালেখা করেননি। প্রায় ১৮ বছর আগে তারা নিজেদের পছন্দে বিয়ে করেন। গ্রিনরোডের ভবনের জায়গাটি একটি ডেভেলপার কোম্পানিকে দিয়ে ৩টি ফ্ল্যাট পেয়েছেন। একটিতে নিজেরা থাকেন। বাকি দুটি ফ্ল্যাট ভাড়া দেয়া রয়েছে। ফ্ল্যাট থেকে যে মাসিক ভাড়া আসতো তার কিছু অংশ দিয়ে নিজের নেশার টাকা এবং বন্ধু ফরহাদের মাদকের খরচ থেকে শুরু করে যাবতীয় খরচ তিনি বহন করতেন। নোবেল আর ফরহাদের মধ্যে প্রায় ৪০ বছরের বন্ধুত্বের সম্পর্ক। ফরহাদ বর্তমানে সম্পূর্ণ বেকার জীবনযাপন করছে। সে দীর্ঘ প্রায় ৪ বছরের মতো কাতার প্রবাসী ছিলেন। গত চার থেকে পাঁচ বছর ধরে কিছুই করেন না। ফরহাদ শাহবাগের একটি মেসবাড়িতে ভাড়া থাকেন। ফরহাদের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক বেশি খারাপ হওয়ায় সে নোবেলের উপর নির্ভরশীল। নোবেলের কাছ থেকে টাকা পয়সা ধার নিয়ে চলতেন ফরহাদ। ফরহাদের ভাই-বোন ঢাকায় থাকলেও তার সঙ্গে কারও যোগাযোগ নেই। ব্যক্তিগত জীবনে ফরহাদ ডিভোর্সি। তার গ্রামের বাড়ি পিরোজপুর। তরুণ বয়স থেকেই ফরহাদ এবং নোবেল একসঙ্গে বেড়ে উঠেছেন। একসঙ্গে নেশা করতেন। নানা প্রয়োজনে নোবেলের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা পেয়ে ফরহাদ তার আস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। নোবেলের গ্রিনরোডের বাসায় নিয়মিত যাতায়াত ছিল ফরহাদের। এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক চুন্নু মিয়া মানবজমিনকে বলেন, রিমান্ডের প্রথমদিনে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে মামলার দুই প্রধান আসামি নোবেল এবং তার বন্ধু ফরহাদ। তাদের দেয়া তথ্যগুলো চাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে শিমুর ভাই হারুন বলেন, এখন আমার বোনের দুই সন্তানের ভবিষ্যত কী হবে সেটা নিয়ে আমরা চিন্তিত। বোনের মৃত্যুর খবরে আমার বয়স্ক বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি গ্রামের বাড়ি বরগুনার আমতলীতে থাকেন। এ বিষয়ে ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুপার শাহাবুদ্দিন কবির বলেন, নোবেলের দেয়া তথ্যমতে হত্যকাণ্ডের বিষয়টি পূর্বপরিকল্পিত ছিল না। স্বামীর মাদকাসক্তিসহ বিভিন্ন পারিবারিক বিষয় নিয়ে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে শিমুর মৃত্যু নিশ্চিত করে তার স্বামী। পরবর্তীতে তারা মরদেহ গুম করে বিভিন্ন নাটকীয় ঘটনার জন্ম দেয়। এ বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদে আরও তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
-মরিয়ম চম্পা, মানবজমিন
এস এস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান