দেশের সংবাদ ফিচার্ড

ক্যাপিটাল লেটারে লেখাই হলো না

ক্যাপিটাল লেটারে লেখাই হলো না

অস্পষ্ট প্রেসক্রিপশন লিখে ভুল ওষুধ সেবনে দেশের মানুষকে বাধ্য করা হচ্ছে। চিকিৎসকের লিখা ব্যবস্থাপত্র নিয়ে দোকানের পর দোকান খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না ওষুধ। ঘুরতে ঘুরতে হয়রান মানুষকে বিক্রেতারা ধরিয়ে দিচ্ছেন ভুল ওষুধ। তখন মোটা অংকের ফি দিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পাওয়া ব্যবস্থাপত্রে নয়, বরং দোকানির দেয়া ওষুধেই আস্থা রাখতে হচ্ছে মানুষকে। ফলে দিন দিন স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে।

বাড়ছে ভুল ওষুধ সেবনজনিত নানান রোগ ব্যাধি। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ থেকে ক্যাপিটাল লেটারে ওষুধের নাম লিখার নির্দেশনা দেয়া হয়। ২০১৭ সালে দেয়া সেই নির্দেশনা থোড়াই কেয়ার করছেন দেশের অধিকাংশ চিকিৎসক। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, আমরা কী এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাবো না?

যদিও এ বিষয়ে রয়েছে উচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা। আদালত বলেছে, ক্লিয়ার ক্যাপিটাল লেটারে (স্পষ্ট বড় অক্ষরে) লিখতে হবে প্রেসক্রিপশন। কিন্তু আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এখনো দেশের প্রায় ৯০ ভাগ চিকিৎসক লিখেন অস্পষ্ট প্রেসক্রিপশন। ফলে অস্পষ্ট অক্ষরের প্রেসক্রিপশন নিয়ে প্রায়ই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগীদের।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ডিজিটালাইজেশনের যুগে দেশের সর্বত্র আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগলেও প্রেসক্রিপশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি এখনো পুরানো পদ্ধতিতেই রয়ে গেছে। এছাড়াও স্পষ্ট বড় অক্ষরে প্রেসক্রিপশন লিখার ব্যাপারে হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকলেও চিকিৎসকরা তা মানছেন না। এটি সত্যিই আমাদের চিকিৎসা খাতের জন্য ইতিবাচক সংবাদ নয়।

অস্পষ্টভাবে লেখা প্রেসক্রিপশনের বিষয়ে জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, বর্তমানে দেশের ওষুধ বাজারে প্রায় দুই হাজার ৭০০ আইটেমেরও বেশি ওষুধ রয়েছে। কোম্পানিভেদে একই জেনেরিকের ওষুধের ভিন্ন ভিন্ন বাণিজ্যিক নাম রয়েছে। আর প্রতিযোগিতার এই বাজারে কোম্পানি প্রতিনিধিরা চিকিৎসকদের বিভিন্ন উপঢৌকনের লোভ দেখিয়ে এসব ওষুধ লিখেতে বাধ্য করছে। কিন্তু অধিকাংশ সাধারণ শিক্ষিত ও অশিক্ষিত রোগীর পক্ষে এসব ওষুধের নাম মুখস্থ করা অসম্ভব।

তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চাইলে অন্যান্য রাষ্ট্রের মতো দেশের চিকিৎসকদেরও ওষুধের জেনেরিক নাম লিখার নিয়ম করে দিয়ে তা বাস্তবায়নে নজরদারি করলে জনগণ ঠকবে না। পাশাপাশি টাইপ আকারে চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র লেখা ও স্বয়ংক্রিয় প্রিন্ট কপি ব্যবস্থ্যা বাধ্যতামূলক করলে ভুল চিকিৎসার শিকার হবে না।

আদালত সূত্র বলছে, ২০১৭ সালের ৯ জানুয়ারি চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) স্পষ্টভাবে বা বড় অক্ষরে বা ছাপানো আকারে দিতে চিকিৎসকদের প্রতি নির্দেশনা দিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে সার্কুলার জারির নির্দেশ দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত। বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিট শুনানি শেষে রুলসহ এ আদেশ দেন।

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে দুই আইনজীবী একটি রিট করেন। শুনানি শেষে আদালত রুল দেন। রোগীদের জন্য স্পষ্টভাবে ব্যবস্থাপত্র লিখায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না এবং ব্যবস্থাপত্রে জেনেরিক নাম লিখার কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যসচিব, বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সেক্রেটারিসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক তরুণ চিকিৎসক বলেন, যারা জনপ্রিয় চিকিৎসক— দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ রোগীই তাদের কাছে ভিড় জমান। ফলে তাদের অতিরিক্ত রোগী দেখতে হয়, অতিরিক্ত প্রেসক্রিপশন লিখতে হচ্ছে। ফলে দ্রুত লিখতে গিয়ে হাতের লেখা খারাপ হচ্ছে। এখানে চিকিৎসকের ইচ্ছাকৃত ভুল কিংবা গাফিলতি নেই। নিছক অনিচ্ছাকৃত ভুল।

ক্যাপিটাল লেটারে প্রেসক্রিপশন লেখার অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চাইলে রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ব্যবস্থাপত্রে অস্পষ্ট লেখার কারণে জটিলতা সৃষ্টি হয়। রোগীরাও বুঝতে পারেন না, ফার্মেসির বিক্রেতারাও বুঝতে পারেন না। অনেক ক্ষেত্রে ভুল ওষুধ দেয়া হয়। ফলে রোগীরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েন। এ জন্য ব্যবস্থাপত্র স্পষ্ট করে এবং জেনেরিক নামে লেখা উচিত। এ জন্য আমরা রিট করেছিলাম। আদালত নির্দেশনাও জারি করেছেন। আগের চেয়ে সমস্যা কিছুটা কমলেও অনেক চিকিৎসক আদালতের নির্দেশনা মানছে না। দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি দপ্তরও তাদের তদারকি করছে না।

তিনি বলেন, রিট আবেদনে আমরা লিখেছিলাম ডাক্তাররা যেন ক্যাপিটাল লেটারে বা বড় হাতের হরফে ব্যবস্থাপত্র লিখেন অথবা কম্পিউটারে কম্পোজ করে ব্যবস্থাপত্র দেন। সব ডাক্তারের হাতের লেখা খারাপ হবে কেন?

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন-বিএমএর মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল বলেন, মহামান্য আদালতের নির্দেশনা জারি করার পর আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার প্রচারণা চালিয়েছিলাম। এখনো তার ধারা অব্যাহত রয়েছে। আমরা জাতীয় চিকিৎসক সংগঠন হিসেবে ক্যাপিটাল লেটারে ও স্পষ্ট প্রেসক্রিপশন লিখার বিষয়ে প্রচার প্রচারণা ও নির্দেশনা জারি করেছি। এখনো যেকোনো সভায় আদালতের নির্দেশনা বিষয়ে কথা বলি। বিষয়টি নিয়ে আমরা আদালতের সাথে একমত। একাধিকবার নোটিসও দিয়েছি। এরপরও কেউ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে অস্পষ্ট প্রেসক্রিপশন লিখলে সেটা ব্যক্তির দায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডা. মো. ফরিদ হোসেন মিয়া বলেন, আদালতের নির্দেশনাটি বেশ আগের। তার সময়ে এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা জারি করা না হলেও আদালত যখন নির্দেশনা দিয়েছিল তখন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দেশের চিকিৎসকদের নির্দেশনা জারি করা হয়েছিল।

-সূত্রঃ আজকের সংবাদ





সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন