সংখ্যালঘু-বান্ধব আওয়ামী সরকারের আমলে হিন্দু কমে যাওয়া সম্প্রীতির চমৎকার দৃষ্টান্ত!
শিতাংশু গুহ, ২৭শে জুলাই ২০২২, নিউইয়র্ক।। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু, বিশেষত: হিন্দু’র সংখ্যা কমে গেছে। মুসলমানের সংখ্যা বেড়েছে। ২০১১ সালের আদমশুমারীতে হিন্দু জনসংখ্যা ছিলো ৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ, ২০২২-এ সেটি কমে এখন ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ। দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন; তন্মধ্যে মুসলিম জনসংখ্যা ৯০ দশমিক ৩৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশে পৌঁছেছে। জনসংখ্যা ও আবাসন শুমারি-২০২২ এর প্রাথমিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। বর্তমান আদম শুমারী অনুসারে দেশে এখন হিন্দু’র সংখ্যা ১কোটি ৩১লক্ষ ৩০হাজার ১১০জন (৭.৯৫%)। বৌদ্ধ জনসংখ্যা শূন্য দশমিক ০.৬২% থেকে কমে ০.৬১%; খৃষ্টান জনসংখ্যা ০.৩১% থেকে কমে ০.৩০% এবং অন্যান্য ধর্মের জনসংখ্যা ০.১৪% ০.১২%এ নেমে এসেছে।
বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা কমে যাচ্ছে বলে দেশে-বিদেশে যথেষ্ট হৈচৈ হচ্ছিলো। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার ২০১৫ সালে একটি প্রতীকী শুমারী করে জানান দে যে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু জনসংখ্যা বেড়ে ১১.৮% হয়েছে, এরমধ্যে হিন্দু ১০.৫%। সরকার বিদেশীদের বোঝাতে সক্ষম হলো যে, হিন্দু জনসংখ্যা কমছে না, বরং বাড়ছে? এখন বোঝা যায়, ২০১৫-র ওই গণনা ছিলো একটি সরকারি ধাপ্পা। দেশে এখন অমুসলিম ১০০-৯১.৪=৮.৬%। ২০১৫ সাল থেকে ২০২২, অর্থাৎ ৭বছরে সংখ্যালঘু কমেছে ১১.৮-৮.৬= ৩.২%। এই হারে হিন্দু বা সংখ্যালঘু কমতে থাকলে ‘মদিনা সনদ’-র পুরোপুরি বাস্তবায়ন অর্থাৎ দেশটি ১০০% মুসলিম-এ পৌঁছতে বা সংখ্যালঘু শূন্য হতে কতটা সময় লাগবে, সেই হিসাবটি খুব কঠিন নয়?
২০১১ থেকে ২০২২, এ সময়-টায় ক্ষমতায় ছিলো বা আছে সংখ্যালঘু ও হিন্দু-বান্ধব আওয়ামী লীগ সরকার। হিন্দু কমে যাওয়ার জন্যে বিএনপি-জামাতকে দায়ী করার কোন উপায় নেই, এর দায় সম্পূর্ণভাবে সরকারের, দল হিসাবে আওয়ামী লীগের। সরকার ডিজিটাল পদ্ধতিতে এর একটা যুৎসই উত্তর খুঁজে বের করে ফেলবে বটে? এই যে আদম শুমারী নিয়ে কথা হচ্ছে, এটি প্রাথমিক প্রতিবেদন, চূড়ান্ত রিপোর্টে হয়তো সঠিক অঙ্ক কষে সংখ্যালঘু’র সংখ্যা বেড়ে যেতেও পারে? বাংলাদেশে সবই সম্ভব, দিনের ভোট রাতে হলে কম্পিউটার বিভ্রাটে অংকে ভুল হওয়া মোটেও বিচিত্র নয়! মনে হয় বিবিএস (বাংলাদেশ ব্যুরো অফ স্যাটিস্টিক্স) বিএনপি’র সাথে মিলে সরকারকে বিপদে ফেলতে এ ষড়যন্ত্র করেছে? আওয়ামী সরকারের আমলে হিন্দু কমে যাওয়া সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি চমৎকার দৃষ্টান্ত।
হিন্দু বা সংখ্যালঘু কমে যাওয়ার অনেক কারণ আছে, এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘নিরাপত্তাহীনতা’। সরকার হিন্দুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ তা নয়, দিচ্ছে না। বাংলাদেশে একমাত্র দেশ যেখানে সন্ত্রাসীকে নয়, ভিকটিমকে আগে গ্রেফতার করা হয়? অসংখ্য উদাহরণ আছে, নাসিরনগর, শাল্লা বা সর্বশেষ লোহাগড়ায় পুলিশ দ্রুত আকাশ সাহা ও তাঁর বাবাকে ধরেছে, কারণ এঁরা হিন্দু। সর্বত্র একই দৃশ্য, পুলিশ হিন্দুদের নিরাপত্তা দেয়নি, সন্ত্রাসীদের প্রচ্ছন্ন সমর্থন দিয়েছে। হিন্দু শিক্ষক পরিষ্কার বলেছেন, দুইশ’ পুলিশের সামনে তৌহিদী জনতা তাঁর গলায় জুতার মালা পড়িয়েছে। সংখ্যালঘুর প্রতি সর্বত্র বৈষম্য, ঘৃণা প্রকাশ, বিচার না পাওয়া এবং নিরাপত্তাহীনতায় হিন্দুরা দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। এরমধ্যে নুতন সংযোজন, ইসলাম অবমাননার ভুয়া অজুহাতে হিন্দুদের ওপর চরম অত্যাচার হচ্ছে, এতে হিন্দুরা দেশত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছে।
স্পষ্ট করেই বলা যায়, হিন্দু বা সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন বন্ধে প্রশাসন ও সরকারের ভূমিকা লজ্জ্বাজনক। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি শুধু মুখে! আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এখন দিনে বঙ্গবন্ধুর শ্লোগান দিয়ে রাতে সাঈদীর ওয়াজ শুনে ঘুমাতে যায়। ২০০১-র পর বিএনপি আমলে হিন্দুদের ওপর যে আক্রমন হয়েছে, গত এক যুগে আওয়ামী লীগের শাসনামলে সেই রেকর্ড ম্লান হয়ে গেছে। দেশে এখন একটি ধর্মান্ধ গোষ্ঠী সুপরিকল্পিত ভাবে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাগুলোতে সন্ত্রাস চালাচ্ছে। লক্ষ্য ভয়ভীতি সৃষ্টি করে এদের দেশত্যাগে বাধ্য করা। এই ‘বিশেষ ধর্মান্ধ গোষ্ঠী’ তৈরির দায় সম্পুর্নভাবে আওয়ামী লীগের। আওয়ামী লীগ জঙ্গীবাদ দমন করেছে, সর্বহারা বা নক্সালীদের নিশ্চিহ্ন করেছে, সরকার চাইলে সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ করা সম্ভব ছিলো, সরকার তা করেনি। জীব বিজ্ঞান বলে, জীব (শুধু মানুষ তা নয়) নিরাপত্তাহীনতায় ভুগলে স্থানত্যাগ করে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ অঞ্চলে চলে যায়, হিন্দু’র সংখ্যা কমে যাওয়ার এটিই কারণ, বাদবাকি সব গৌণ! [email protected];
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান