মত-মতান্তর

বিভীষিকার শেষ কবে ৮৪ দিনে মৃত্যু ৫৬৯৮৯

বিভীষিকার শেষ কবে

 

সবার প্রশ্ন একটাই  বিভীষিকার শেষ কবে ৮৪ দিনে মৃত্যু ৫৬৯৮৯ ! বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা গত ২৬ মার্চ পর্যন্ত ছিল প্রায় পাঁচ লাখ ৩২ হাজার। এর সাত দিনের মাথায় ২ এপ্রিল এটা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ লাখ ১৫ হাজারে। এ সময় মৃতের সংখ্যা ২৪ হাজার থেকে বেড়ে ৫৩ হাজারে পৌঁছায়। ২৬ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল সাড়ে ৮৫ হাজার। ২ এপ্রিল তা বেড়ে দাঁড়ায় দুই লাখ ৪৫ হাজারে। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা এক হাজার ২৯৫ থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ছয় হাজার ৭০ জনে।

করোনাভাইরাস এভাবেই বিশ্বজুড়ে বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। পণ্ডিতরা এখনও পূর্বাভাস দিয়ে যাচ্ছেন, কোন দেশে পরিস্থিতি কত খারাপ হতে পারে, আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কত হতে পারে। তবে নজিরবিহীন এই সংকট থেকে বিশ্ব কবে মুক্তি পাবে তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। অবশ্য লকডাউন ও কারফিউর মতো কঠোর ব্যবস্থা জারি ও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ, সাশ্রয়ী মূল্যের শনাক্তকরণ কিট আবিস্কারসহ নানা পদক্ষেপে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়তো কিছুটা ঠেকানো গেছে। করোনা রোধে অ্যান্টিবডির সন্ধান ও ভ্যাকসিন তৈরিতে সর্বশক্তি নিয়োগও আশা জাগাচ্ছে। তা সত্ত্বেও করোনার দুশ্চিন্তামুক্ত হয়ে মানুষ কবে ঘুমাতে যেতে পারবে, তা কেউ জানে না।

করোনাভাইরাসে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যু ঘটছে যুক্তরাষ্ট্রে। এর পরই আছে স্পেন, ইতালি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জার্মানিসহ বহু দেশ। করোনার হানায় গতকাল যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ডসংখ্যক এক হাজার ১৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্পেনে মারা গেছেন আরও ৯৩২ জন। ইরানে ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১৩৪ জন।

 

বিভীষিকার শেষ কবে!

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সার্বক্ষণিক হিসাব রাখা ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, গতকাল রাত ১২টা পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১০ লাখ ৭৪ হাজার ২৯০ জন। আক্রান্তদের মধ্যে দুই লাখ ২৬ হাজার ৫২ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। মারা গেছেন ৫৬ হাজার ৯৮৯ জন। করোনায় প্রথম মৃত্যু হয় গত ১১ জানুয়ারি, চীনে। এ হিসাবে গত ৮৪ দিনে মৃত্যু হয়েছে এসব মানুষের। আক্রান্তদের মধ্যে ৩৯ হাজারের বেশি মানুষের (মোট আক্রান্তের ৫ শতাংশ) অবস্থা গুরুতর বা সংকটাপন্ন। করোনায় ইউরোপে পাঁচ লাখ ৭৪ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন প্রায় ৪১ হাজার লোক। মধ্যপ্রাচ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৭ হাজার এবং মারা গেছেন তিন হাজার ৪৪৬ জন। অবশ্য উপসর্গবিহীন আক্রান্তদের চিহ্নিত করা কঠিন হওয়ায় বিশ্বে করোনায় সংক্রমিতের প্রকৃত সংখ্যা ৫ থেকে ১০ গুণ বেশিও হতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রেন্ডন মারফি।

করোনায় গতকাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখ ৬৫ হাজার ৫০৬ জনে পৌঁছেছে। মারা গেছেন ছয় হাজার ৭৮৬ জন। করোনার হানায় লণ্ডভণ্ড ইতালি ও স্পেনে যত মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন, তার চেয়ে বেশি শনাক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রে ঘরের বাইরে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও নাগরিকদের মাস্ক পরার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন। দেশটিতে ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। কেবল নিউইয়র্ক রাজ্যেই মৃতের সংখ্যা আড়াই হাজারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। আক্রান্ত ও মৃত্যু বিবেচনায় পরের অঙ্গরাজ্যগুলো হচ্ছে- নিউজার্সি, ক্যালিফোর্নিয়া, মিশিগান ও লুইজিয়ানা।

 

বিভীষিকার শেষ কবে!

যুক্তরাজ্যে ২৪ ঘণ্টায় ৬৮৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৬০৫ জনে। মৃতদের মধ্যে দুই ব্রিটিশ নার্সও আছেন। আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ৩৮ হাজার ১৬৮ জনে। দেশটিতে করোনাভাইরাসে মৃত্যু বাড়তে থাকায় এ মহামারি নিয়ে রোববার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে চলেছেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। জাতির উদ্দেশে রানীর এমন সরাসরি ভাষণ খুবই বিরল। প্রতিবছর কেবল বড়দিনের বার্তা দিতেই টিভিতে রানীর ভাষণের রেকর্ড সম্প্রচার করা হয়। কিন্তু এবার করোনাভাইরাস সংকটের কারণে রানী যুক্তরাজ্য এবং কমনওয়েলথের উদ্দেশে এই বিশেষ ভাষণ দিতে চলেছেন। এটি আগামীকাল প্রচার করা হবে।

স্পেনে গতকাল মৃত্যু বেড়ে পৌঁছেছে ১০ হাজার ৯৩৫ জনে। আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে এক লাখ ১৭ হাজার ৭১০ জনে। তবে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সেখানে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কমছে। জার্মানিতে আক্রান্তে সংখ্যা চীনকে ছাড়িয়ে গেছে। তবে দেশটি মৃতের সংখ্যা সর্বনিল্ফেম্ন রাখতে সক্ষম হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত জার্মানিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৮৭ হাজার ২৪৪ জন। মারা গেছেন এক হাজার ১৩৮ জন। জার্মান সরকার বলছে, তারা করোনার বিস্তার রোধে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তা কাজে দিচ্ছে।

ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ১৯ হাজার ৮২৭ জনে পৌঁছেছে। গতকাল মারা গেছেন ৭৬৬ জন। মোট মৃত্যু হয়েছে ১৪ হাজার ৬৮১ জনের। তবে নতুন এক গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশটিতে মৃতের সংখ্যা এর চেয়ে ঢের বেশি। দেশটিতে সুস্থ হয়েছেন ১৮ হাজারের বেশি মানুষ। ইরানে গতকাল মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে তিন হাজার ২৯৪ জনে। আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৫৩ হাজার ১৮৩ জন। দক্ষিণ কোরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা গতকাল ১০ হাজার অতিক্রম করেছে। দেশটিতে ২৭ হাজার মানুষ সেলফ কোয়ারেন্টাইনে আছেন।

 

বিভীষিকার শেষ কবে!
করোনাভাইরাসের ‘অন্ধকার মোকাবিলায়’ দেশবাসীকে আলো জ্বালিয়ে কভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে জাতীয় সংহতি দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আগামীকাল রোববার স্থানীয় সময় রাত ৯টায় সবাইকে একযোগে ঘরের সব আলো নিভিয়ে নিজ নিজ বাড়ির দরজা, জানালা কিংবা বারান্দায় ৯ মিনিটের জন্য মোমবাতি, প্রদীপ ও মোবাইলের ফ্লাশলাইট জ্বালাতে অনুরোধ করেছেন তিনি। ঘরবন্দি অবস্থায় কেউ যেন নিজেকে একা মনে না করেন সেজন্য এই কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে বলে জানান মোদি।

করোনাভাইরাস সংক্রমণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এবার পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে শীর্ষে উঠে গেছে প্রতিবেশী ভারত। গতকাল শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ভারতে করোনা শনাক্ত হয়েছে দুই হাজার ৫৬৭ জনের। আর পাকিস্তানে রোগী আছে দুই হাজার ৪৫০ জন। এক দিন আগেও পাকিস্তান ছিল শীর্ষে। গত ২৯ জানুয়ারি প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত করে ভারত। পাকিস্তানে প্রথম রোগী শনাক্ত হয় ২৫ ফেব্রুয়ারি। গতকাল পর্যন্ত ভারতে মারা গেছেন ৭২ জন আর পাকিস্তানে ৩৫ জন।

দক্ষিণ এশিয়ায় গত ২৩ জানুয়ারি প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত করে নেপাল। আর ভুটানে প্রথম শনাক্ত হয় ৫ মার্চ। করোনা শনাক্তের শুরুতেই লকডাউন ঘোষণা করে নেপাল ও ভুটান। এর ফল পেয়েছে দেশ দুটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নেপাল ও ভুটানে স্থানীয়ভাবে কেউ করোনায় আক্রান্ত হননি। দুই দেশের আক্রান্ত ব্যক্তিরা বিদেশফেরত। দুই দেশেই আক্রান্ত হয়েছেন মাত্র পাঁচজন করে। একটু দেরিতে হলেও লকডাউন ঘোষণা করে অনেকটা প্রতিরোধ করেছে মালদ্বীপ। দেশটিতে শনাক্ত হয়েছেন ১৯ জন। এ তিনটি দেশে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কেউ মারা যাননি।

 

পাকিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম সিন্ধু প্রদেশ করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে শুক্রবারের জুমার নামাজ পড়া ঠেকাতে তিন ঘণ্টার জন্য কারফিউ জারি করা হয়। নামাজে অংশ না নেওয়ার ব্যাপারে সরকারি সতর্কতা জারি থাকার পরও গত শুক্রবার বহু মানুষ মসজিদগুলোতে জুমার নামাজে অংশ নেওয়ায় এবার এ কড়াকড়ির পদক্ষেপ নেওয়া হলো। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে কেবল জরুরি সেবা ছাড়া স্কুলসহ বেশিরভাগ অফিস-আদালত এক মাসের জন্য বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিঙ্গাপুর। আগামী ৭ এপ্রিল অর্থাৎ মঙ্গলবার থেকে শুরু হবে এ লকডাউন। সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এখন সেখানে দিনে ৫০ জনের বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। গতকাল পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে এক হাজার ১১৪ জনের শরীরে মিলেছে কভিড-১৯। মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের। গতকাল নতুন আক্রান্ত হয়েছে ৬৫ জন। চীনে গতকাল আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। মোট মারা গেছেন তিন হাজার ৩২২ জন।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সিরিয়া, লিবিয়া ও ইয়েমেনে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, সামনে আরও কঠিন সময় আসছে। সৌদি বাদশাহ সালমান নাগরিকদের সহায়তার জন্য ২৩৯ কোটি ডলার তহবিল অনুমোদন করেছেন। এতে দেশটিতে বেসরকারি খাতে কর্মরত ১২ লাখ মানুষ উপকৃত হবেন। করোনা মোকাবিলায় চীন মাত্র ১০ দিনে এক হাজার বেডের অস্থায়ী হাসপাতাল বানিয়ে বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল। এবার যুক্তরাজ্য সরকারও কয়েক দিনের মধ্যে চার হাজার বেডের অস্থায়ী হাসপাতাল বানিয়েছে। লন্ডনে স্থাপিত হাসপাতালটি অনলাইনে গতকাল উদ্বোধন করেছেন প্রিন্স চার্লস।
সূত্র :বিবিসি, আলজাজিরা, এএফপি ও রয়টার্স।

 

সিবিএনএ/এসএস


 

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

six + 14 =