প্রসঙ্গ: পাঠান মুভি এবং বাংলাদেশের হিরো আলম
শিতাংশু গুহ, নিউ ইয়র্ক থেকে।। পাঠান ম্যুভি বাংলাদেশে মুক্তির জন্যে তাবৎ ভারত-বিরোধী গোষ্ঠী রাজি, এরমধ্যে একটি ‘কিন্তু’ আছে। সামনে নির্বাচন, এ সময়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা প্রায় সবাই ‘ভারতপন্থী’ হয়ে গেছেন, নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর এদের অনেকেই আবার ‘চীন-প্রেমিক’ হয়ে যাবেন, এখানেও একটি ‘কিন্তু’ আছে। এই ‘কিন্তু’র রহস্য সবাই জানেন, আমিও জানি, কিন্তু বলবো না!
কোথায় যেন পড়েছি বা শুনেছি যে, এক ভক্ত সাধুবাবা’র কাছে যান ‘সৌভাগ্য কিনতে’। সাধুবাবা ভাল ভাল গল্প শুনিয়ে একটু পর পর ‘কিন্তু’ বলে ডান হাতটা বাড়িয়ে দেন্, ভক্ত তখন ঐ হাতে কিছু টাকা গুঁজে দেন্। এভাবে এক-সময় ভক্তের টাকা ফুরিয়ে যায়, সাধুবাবা পুনরায় হাত বাড়িয়ে ‘কিন্তু’ শুধালে ভক্ত বলে, ‘কিন্তু তো আর নাই বাবা’! সাঁধু বলেন, তাহলে বাড়ী যা–।
পাঠান ম্যুভি মুক্তির বিপক্ষেও ‘কিন্তু’ মানুষ আছেন। তাঁরা বলছেন, এতে দেশি ম্যুভি’র ক্ষতি হবে! আরে ভাই, ম্যুভি থাকলে তো ক্ষতি! ৫০ বা ৬০’র দশকের অর্ধেকটা সময় ভারত-পাকিস্তান-হলিউড’র ম্যুভি ছিলো, তখন প্রতিযোগিতা ছিলো, সুচিত্রা-উত্তম-এর মত তারকা ছিলেন, তদুপরি পূর্ব–বাংলার ছায়াছবি মান ভাল ছিলো। ৭০’র দশকেও হলে মানুষ যেতো, ‘কিন্তু’ এখন যায় না?
ম্যুভি আমার সাবজেক্ট নয়, ‘কিন্তু’ ধর্মান্ধতার কারণে বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক জগৎ যে মুখ থুবড়ে পড়ছে এটি জানিয়ে রাখা ভালো। আমাদের রাজনীতি, সমাজনীতি, শিক্ষানীতি, গণতন্ত্র, নির্বাচন, সবকিছুর ষ্ট্যান্ডার্ড এখন ‘হিরো আলম’ বা ‘পরীমনি’। হিরো আলম দু’টি আসনে হেরেছেন, ‘কিন্তু’ তাঁর জেতা উচিত ছিলো, এতে স্থবির সংসদ কিছুটা হলেও প্রাণ ফিরে পেতো।
তবে, আমরা ‘কিন্তু’ ভাষণে এক্সপার্ট, যদিও সত্য ভাষণ বা সত্যকথা বলার ক্ষেত্রে অনেকটা পিছিয়ে। বিরোধী বা সরকারি দলের নেতারা, বুদ্ধিজীবী, বা সমাজের বৃহদাংশ কি জানি কি কারণে এখন আর আগের মত সত্য বলেননা বা বলতে সাহস পাচ্ছেন না? ‘কিন্তু’ কেন? বলা হচ্ছে: লোকে আগে মিথ্যা বলতো না পাপ হবে বলে, এখন সত্য বলেনা বিপদের পড়বে বলে।
দেশ ‘কিন্তু’ তবু এগিয়ে যাচ্ছে। দেশে উন্নয়নের সুবাতাস বইছে। সরকারি নেতারা বলছেন, উন্নয়নের জোয়ারে বিএনপি’র মাথা খারাপ হয়ে গেছে। ফখরুল সাহেব বললেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের পালানোর সময় হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী বললেন, আওয়ামী লীগ পালায় না। ওবায়দুল কাদের বললেন, যদি পালাতেই হয় তবে ফখরুল সাহেবের বাসায় গিয়ে উঠবো।
কথা ‘কিন্তু’ চমৎকার। এজন্যে লোকে বলে, ওপরতলায় নেতাদের মধ্যে প্রচুর মিল, ওঁরা দিনের বেলায় এঁকে ওপরের বিরুদ্ধে ভাষণ দিয়ে রাতে একত্রে পার্টি করে, সেখানে আওয়ামী লীগ-বিএনপি-রাজাকার-মুক্তিযোদ্
আমি ‘কিন্তু’ হিরো আলমের পক্ষে। দেশের বুদ্ধিজীবীরা সব চুপচাপ, মানুষ তাদের কথা শুনছে না, কিন্তু হিরো আলমের কথা শুনছে, পরীমনি’র কথা শুনছে। বড় বড় নেতা, উপাচার্য, উচ্চ ডিগ্রীধারীরা খালেদা জিয়াকে ‘ম্যাডাম’ ডাকতে পারলে, হিরো আলমকে ‘স্যার’ বলতে অসুবিধা কোথায়? হিরো আলম থেকে বুদ্ধিজীবীদের শেখার আছে, কিন্তু তাঁরা শিখবেন না! [email protected];