দোজখে দুজনে ।।।। পুলক বড়ুয়া
আজো আমি এপার থেকে ওপারে যাই নাই
কোনো মহাসাগর পাড়ি দিই নাই
একবার গিয়ে একবার ফিরেও আসি নাই
যেমন তোমার আটলান্টিক—না ভুলেও পাড়ি দিই নাই
সেদিন কী জানি কী হয়ে গেল
সেদিন কী জানি কী ঘটে গেল
অতঃপর যে-কোনো কিছু সম্পর্কে ভাবতে গেলে
তারপর থেকে যে-কোনো কিছু সম্পর্কে বলতে গেলে
ইদানিং আমার মাঝে একটা কিছু ঘটে যায়
আজকাল কিছু একটা লেগে যায়
একটা কিছু গায়ে লাগে আমার বোধে বাধে
যেমন মাছের কাঁটা গলায় আটকায়
যেমন আটলান্টিকের আটখানা ঘ্রাণ
তোমার তনুমনে আজও উদ্ভিন্ন যৌবনা
যেমন ইছামতী-কর্ণফুলী ওই
নেপথ্য মানবসৃষ্ট মিলন-সন্ধিক্ষণ ভাঙন
জেলেপাড়া হৃতসর্বস্ব হয়ে গেলেও আজো
তার আঁশটে গন্ধ শহুরে হাওয়ায় ভেসে বেড়ায়
আমার চোখে ঠুলি নেই
আমার পিঠে কুলো নেই
আমার কানে তুলো নেই
আমার মুখে রুমাল নেই
বাহাসের বদলে গলায় মেলানো গলা
সমসুরে নির্বিবাদ গান, আবৃত্তি
তোমাকে লক্ষ্য করে না
সুনির্দিষ্ট কাউকে না
হয়তো কাউকে কিছু বললাম
মানুষই তো মানুষের মৌল লক্ষ্য একক নিশানা
কিন্তু, তার প্রতিবাদে তোমার উদ্ধত চোখ-মুখ
কী সুন্দর পাশ দিয়ে গেল হেঁটে—বুনোমোষ যেন
মৌনমেঘ মহাকাশ মহাশূন্য ফুঁসতে ফুঁসতে মিধিলি
তোমার মুখের মানচিত্রে সোয়ারী
মাঝে মাঝে প্রকৃতিও জেগে ওঠে মুখর হয়
বোবা মানুষের ভেতর দাবানলের মতো লেলিহান
মাইলের পর মাইল স্বেচ্ছাচারী প্রতিশোধে দাউ দাউ
মেঘ না-হলেও বৃষ্টিপাত আমার বেজায় প্রিয়
সেদিন ঘূর্ণিঝড়ের দিকে তাকিয়েছিলাম
ঝড়তুফান আমার বুকের মধ্যে আছড়ে পড়ছে
ঝড়তুফান আমার বুকের মধ্যে মুষড়ে পড়ছে
নিসর্গ আর নারী চিরপ্রণম্য
ওদের সাথে আমার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক
ওদের সঙ্গে আমার ভালোবাসা মধুর
ওরা আমার প্রাণপ্রিয়-প্রাণপ্রিয়া মানে প্রিয়তম-প্রিয়তমা
কেননা, ওদের সাথে আমার কোনো বৈরিতা নেই
কারণ, ওদের সঙ্গে আমার কোনো কলহ নেই
এই অমিয়ভূমির ওরা যুগলবন্দী
এই প্রাণপ্রিয়ভূমির ওরা পবিত্র যমজ
নাড়ীর সঙ্গে আমার কোনো আড়ি নেই
যুগপৎ এই পৃথিবী আমার একটি খামার একটি বাড়ি
সমস্ত ভালোবাসা এখানে আমাদের
আমি ওদের প্রেমে মজে আছি
আমি ওদের প্রীতিতে ঋদ্ধ
আমি ওদের পিরিতে মুগ্ধ
আমি ওদের রীতিতে শুদ্ধ
আমি ওদের নীতিতে স্তব্ধ
কারো সঙ্গে বিভেদ আর বিবাদ তো এককথা না
এবং কোনো ঝগড়ার সম্পর্কে আমরা বিরোধী নই
এবং কোনো ঝগড়ার সম্পর্কে আমরা পৃথক নই
এই বুনো উদ্দাম বনভূমি আর ওই বিমূর্ত বনবালা
ওদের যুগ্ম মনোবাসনা বুনোনদীর মতো বিকশিত
আমাকে ভালোবেসে না-বেসে কিন্তু
বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালা না-ঝুলিয়ে
মানুষের গলায় গানের মালা
অনেকগুলো ফুলের মালা
পবিত্র পরিয়ে দিয়েছ—হয়তো শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান
কিংবা নির্ভেজাল সহবাসও করেছ
(একথা শুনেও কুদীর্ঘকাল পরে হলেও, জানি,
তুমি বলবে না, ‘তোমার মুখে ফুল-চন্দন পরুক’)
হ্যাঁ গিয়েছ গা ভাসিয়ে গড্ডালিকা স্রোতে
গায়ে হাওয়া লাগিয়ে গা-না-ভিজিয়ে
সাত সমুদ্র তের নদী … পগার পার … কেল্লাফতে
কথাটি প্রতীকী—আচমকা একটি প্রজাপতির মতো
গায়ে বসে একটু কাছে এসে গা-ছুঁয়ে পাশ দিয়ে
ওড়ে উড়ে যায় মনে লাগে
এ স্রেফ প্রজাপতি অনুপ্রবেশ নয় তার
হাওয়া লেগে দুলে ওঠে মানুষের বুনোফুল
এসব প্রজাপতি-কথা বাদ দাও, তার চে’,
তোমার কথার নীলসিয়া আসমান নীলে নীল দুনিয়া
উড়ে এসে জুড়ে বসুক কবির ঠোঁটে
ওষ্ঠ-চর্চিত-ললিত-অঙ্গুরীয় তোমার
পরিয়ে দাও নিশ্চুপ ওষ্ঠ-অঙ্গুলিতে
সেই নীলবিষবিশ্বে আমি নীলকন্ঠ হব হলাহলে
হেমলকের পেয়ালার মতো দুলে ওঠো
হে রাজকন্যে, হে আমার রোজকেয়ামত
হে নিখিলনারী তোমাকে নূহের নৌকো ভেবে
দেব না আমি এখনি পাড়ি দেব না আমি কখনো পাড়ি
তুমি আমার শেষ পারানির নও কড়ি
আমার বুক পকেট খালি প্যান্টের পকেট শূন্য
কোথাও একবিন্দু অবশেষ কানাকড়ি অবশিষ্ট নেই
নিঃশেষ আমার শেষ পারানির শেষতম কড়িটি
হাশরের ময়দানে—এস—শেষবারের মতোন
তুমি-আমি-অন্তর্যামী—আমরা ত্রয়ী—
আবার মুখোমুখি হব অমর সঙ্গী হব
নির্বাণের আগে শিখা চির অনির্বাণ
জ্বলব দুঃখের দোজখে দুজনে