ফিচার্ড মত-মতান্তর

‘ষ্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন’ ভাষণ।। বাইডেন বয়সের পরীক্ষায় পাশ .

বাংলাদেশের-ভবিষ্যৎ-কি

‘ষ্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন’ ভাষণ।। বাইডেন বয়সের পরীক্ষায় পাশ .

শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক।। বৃহস্পতিবার ৭ই মার্চ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই টার্মে তাঁর শেষ ‘ষ্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন’ ভাষণটি ভালোই দিয়েছেন। এটি ছিলো জ্বালাময়ী, সতেজ-যেটি দরকার ছিলো, তিনি প্রমান করতে চেয়েছেন, বয়স হলেও তিনি ফিট। এমনকি শেষদিকে নিজের বয়স নিয়ে তিনি ‘জোকস’ পর্যন্ত করেছেন। নির্বাচনী বছরে এটি ছিলো নির্বাচনী প্রচারণামূলক ভাষণ, সতীর্থ ডেমক্রেটরা এটি পছন্দ করেছেন। বাইডেন বয়সের পরীক্ষায় পাশ করেছেন। ট্রাম্পের নাম না নিয়েই তিনি বারবার তার পূর্ববর্তী প্রশাসনের সমালোচনা করেছেন। ভাইস-প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস অসংখ্যবার হাততালি দিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছেন। স্পিকার জনসন সৌজন্যের খাতিরে দু’একবার উঠে দাঁড়িয়েছেন। বাইডেনের বক্তব্যের সময় তিনি বেশ ক’বার নেতিবাচকভাবে মাথা নেড়ে জানান দিয়েছেন। একঘন্টার ওপরে ভাষণ দেয়ার সময় বাইডেনের কথা ক’বার জড়িয়ে গেছে, তবে সেটা দৃষ্টিকটু ছিলোনা। 

ওয়াশিংটন পোষ্ট বলেছে, বাইডেনের ‘ষ্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন’ ভাষণটি ছিলো নির্বাচনী প্রচারণা। নাম উল্লেখ না করেও তিনি ১৩বার ট্রাম্পের বিপক্ষে বলেছেন। তিনি ‘গণতন্ত্র সুরক্ষা’ ও ‘গর্ভপাত অধিকার’-এর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। বাইডেন রিপাবলিকানদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘ইউ ক্যান নট লাভ ইউর কান্ট্রি অনলি হোয়েন উইন’। টাইম ম্যাগাজিন বলেছে, বাইডেন ইউক্রেন ও গাজার যুদ্ধ, গর্ভপাতের অধিকার, এবং সীমান্ত সুরক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন, এবং সবকিছুর জন্যে রিপাবলিকানদের দোষারুপ করেছেন। নিউজম্যাক্স বলেছে, পার্টিজান ভাষণ। সিএনএন বলেছে, বাইডেনের ভাষণে ডেমক্রেটদের ভয় হয়তো কেটে যাবে। বিভিন্ন ইস্যুতে বাইডেন তার সাথে ট্রাম্পের পার্থক্য তুলে ধরেছেন। এনবিসি বলেছে, বাইডেন’র ভাষণ ছিলো শক্তিশালী ও জ্বলাময়ী। সিএনএন/এনবিসি জানায়: জ্বালাময়ী ভাষণ দিয়ে বাইডেন ভোটারদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেছেন, এবং তাকে ২য় টার্ম সুযোগ দেয়ার ইঙ্গিত করেছেন।

বাইডেন শুরুতেই ইউক্রেনে সাহায্যের কথা বলেছেন। তিনি মহিলাদের গর্ভপাতের অধিকার পুরো আমেরিকায় সার্বজনীন করার অঙ্গীকার করেছেন। ইসরাইলের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে বাইডেন গাজায় মানবিক সাহায্যের ওপর জোর দিয়েছেন। পূর্বাহ্নে হাউস-স্পিকার রিপাবলিকান সদস্যদের সংযত আচরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন। রিপাবলিকানদের পক্ষে আলাবামার সিনেটর কেট ব্রিট, ৪২ প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে ধুইয়ে দিয়েছেন। তিনি মূলত বর্ডার ও ক্রাইমের ওপর জোর দেন্। কেট বলেছেন, ‘ওয়ার্ল্ড ডিজার্ভ বেটার’। ট্রাম্প বলেছেন, বাইডেনের ভাষণ মিথ্যাচার ও ভুয়া তথ্যে ভরপুর। ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় কেট ব্রিটের প্রশসা করেছেন। স্পিকার মাইক জনসন বলেছেন, প্রেসিডেন্টের ভাষণ পুরোপুরি দলীয়। ভাষণের পর বাইডেন ৩৩মিনিট হাউসে ছিলেন, এবং সবার সাথে কথাবার্তা বলেছেন, করমর্দন করেছেন, এটি হয়তো নির্বাচনী কৌশল। কংগ্রেসওমেন ইলহাম ওমর ও রাশিদা তালেব গাজায় যুদ্ধ বন্ধের দাবি সংক্রান্ত ছোট্ট প্ল্যাকার্ড দেখিয়েছেন।

ডেমক্রেটরা আশা করছেন, বাইডেন নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে ষ্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন ভাষণের মত জ্বলে উঠবেন। বাইডেন বলেছেন, গাজায় ৩০হাজারের ওপর ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। রেডিও ব্যক্তিত্ব সিড রোজেনবার্গ এ সময় চিৎকার করে বলে ওঠেন, ‘হু সেইজ’? নিরাপত্তা রক্ষীরা তাঁকে সরিয়ে নিয়ে যায়। ভাষণ শেষ হলে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। রোজেনবার্গ পরে এনবিসি-কে বলেন, মৃতের সংখ্যা নিয়ে প্যালেস্টাইন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য তিনি বিশ্বাস করেন না। বাইডেন হাউসে থাকা অবস্থায়ই স্পিকার হাউসের অধিবেশন মুলতবি করেন। এ সময় হাউসের বাতি নিভতে থাকে। বাইডেন স্পিকার জনসনের দিকে তাকান, স্পিকার ঘড়ি দেখিয়ে বলেন, ‘ইট্স টাইম টু লিভ’। ৯টায় ভাষণ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা শুরু হয় ৯:২৬মিনিটে। তিনি ৬৭মিনিট ভাষণ দেন। সিনেটর কেট ব্রিট তার প্রতিক্রিয়ার শুরুতেই বাইডেনকে ‘পার্মানেন্ট’ পলিটিশিয়ান বলে মন্তব্য করে বলেন, আমার জন্মের আগে থেকেই তিনি বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত আছেন।

বাইডেনের ভাষণকালে ‘আবে-গেট’ বলে চিৎকার দিয়ে ওঠেন আফগানিস্তানে নিহত ল্যান্স কর্পোরেল করিম নিকাউ’র পিতা ষ্টিভ নিকাউ। তাকে হাউস থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। তিনি আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারকালে কাবুল বিমানবন্দরের ‘আবে-গেট’-এ তার পুত্রসহ ১২জন মার্কিন সৈন্য নিহত প্রসঙ্গে প্রতিবাদ করছিলেন। বাইডেন যখন ভাষণ দিচ্ছিলেন বাইরে তখন গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে বিক্ষোভ হচ্ছিলো। ট্রাম্প পুনরায় তার সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘বাইডেন ইজ এন্ডোর্স বাই পুটিন’।

নিকি হেলি সরে দাঁড়িয়েছেন

সাউথ ক্যারোলিনার সাবেক গভর্নর, রিপাবলিকান দলে ট্রাম্পের একমাত্র প্রতিদ্ধন্ধী নিকি হেলি প্রাইমারি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমার কোন দু:খ নাই, তৃণমূল পর্যায়ে আমি সমর্থন পেয়েছি, তাতে আমি অভিভূত। বুধবার সকালে নিজ শহর চার্লস্টনে নিকি বলেন, সময় এসেছে সরে দাঁড়াবার, আমি আমার ক্যাম্পেইন স্থগিত ঘোষণা করছি। তিনি ট্রাম্পকে স্বাগত জানান ও তার সাফল্য কামনা করে বলেন, ট্রাম্পের এখন উচিত হবে, যারা তার সমর্থক নন, অথচ রিপাবলিকান, তাদের তার পক্ষে টানা, আমি আশা করি ট্রাম্প তা করবেন। উল্লেখ্য, প্রাইমারিতে নিকি দু’টি ষ্টেটে জয়ী হ’ন, ডিসি (ডিষ্ট্রিক্ট অফ কলম্বিয়া) ও ভারমন্ট।

নিকি সরে দাঁড়ানোর ফলে প্রাইমারিতে ট্রাম্পের আর কোন প্রতিদ্ধন্ধী থাকলো না। ডেমক্রেট জো বাইডেনের তেমন কোন প্রতিদ্ধন্ধী কখনোই ছিলোনা, তবে মিনেসোটার কংগ্রেসম্যান ডিন ফিলিপ্স রেসে ছিলেন। সুপার-টুইসডে’র তিনিও সরে দাঁড়িয়েছেন। ফলে প্রাইমারিতে বাইডেনেরও আর কোন প্রতিদ্ধন্ধী থাকলো না। উভয় দলে প্রাইমারি এখন আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। দুই প্রার্থী বাইডেন ও ট্রাম্প, ২০২০-র পুনরাবৃত্তি। ট্রাম্পের জন্যে সুখবর, সিনেট মাইনোরিটি নেতা ম্যাককোনেল সুপার-টুইসডে’র পরদিন ট্রাম্পের প্রতি তাঁর সমর্থন ঘোষণা করেছেন। সুপার টুইসডে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দলীয় মনোনয়নের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। মার্চ মাসের মধ্যেই দু’জন মনোনয়ন নিশ্চিত করবেন। এদিন বাইডেনের অপরাজেয় রেকর্ড ভেঙ্গেছে। ট্রাম্পের রেকর্ড আগেই ভেঙ্গেছিলো, তিনি আর একবার পরাজয়ের স্বাদ পেয়েছেন। প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাইমারি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছিলো সোমবার ১৫ই জানুয়ারি ২০২৪। প্রাইমারি শেষ হবে মঙ্গলবার ১০ই সেপ্টেম্বর। এরপর কনভেনশন এবং ৫ই নভেম্বরে মঙ্গলবার সাধারণ নির্বাচন। [email protected]; 3/8/24

এসএস/সিএ

সংবাদটি শেয়ার করুন