এসি আপনাকে ঠান্ডা দিচ্ছে, গরম বাড়াচ্ছে সবার
দেশজুড়ে চলছে প্রচণ্ড দাবদাহ। তাপমাত্রা বাড়ার কারণে মানুষের জনজীবনে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে হিটস্ট্রোকে মৃত্যু ও গরমজনিত অসুস্থতা বেড়েছে। এমতাবস্থায় দেশজুড়ে চলছে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট। এই গরমে বিশেষ করে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন–মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষরা। যারা গরম উপেক্ষা করে রাস্তায় বের হচ্ছেন।
এদিকে গরম থেকে মুক্তির জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি প্রার্থনা করে ‘ইসতিসকার’ নামাজ ও বিশেষ মোনাজাত করছেন মুসল্লিরা। এছাড়াও অনেক জায়গায় বৃষ্টির জন্য ‘ব্যাঙের’ বিয়েও দেয়া হচ্ছে। তবুও স্বস্থির বৃষ্টির দেখা মিলেনি।
চলমান তাপদাহে রাজধানীসহ দেশের জেলা শহরগুলোতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র (এসির) শোরুমগুলোতে ভিড় বেড়েছে ক্রেতাদের। এক সময়কার উচ্চবিত্তদের বিলাসিতা এসি এখন উচ্চবিত্ত–মধ্যবিত্তের প্রয়োজনীয়তায় রূপ নিয়েছে। যতই গরম বাড়ছে ততই এসির দোকানে ভিড় করছে মানুষ। বিশেষ করে রাজধানীর এসির শোরুমগুলোতে ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
বাসাবাড়ি, শপিংমল, হোটেল–রেস্টুরেন্ট গরমে শীতল রাখার জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) বসানো হচ্ছে। তবে এসব যন্ত্র আপনাকে শীতল করলেও, অন্যদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলছে। এমনটিই জানিয়েছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। তাদের দাবি, এসি থেকে নির্গত গ্যাস পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কোনো এলাকায় অধিক সংখ্যক এসির ব্যবহার, ওই এলাকার তাপমাত্রা বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। ঘরকে ঠান্ডা রাখলেও বাইরের তাপমাত্রা বাড়ায়।’
তাহলে এসির বিকল্প কী জানতে চাইলে বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিল্প কলকারখানা, বড় বড় শপিংমলগুলো পরিবেশবান্ধব তথা গাছ রেখেই করা গেলে এসির ব্যবহার কমানো সম্ভব। এতে গরমে অন্যদের জন্য স্বস্থিদায়ক হতে পারে। এছাড়াও বিদ্যুৎ ব্যবহার কমানো সম্ভব।‘
সোমবার রাজধানীর বাংলামোটরে ওয়ালটন প্লাজায় এসি কিনতে আসেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আব্দুর রহিম। বাসায় ৫ বছরের সন্তানের কথা মাথায় রেখে তিনি ইনভার্টার একটি এসি কিনতে আসেন। তিনি বলেন, শহরে যা গরম পড়েছে তাতে জীবন চলা কঠিন। বিশেষ করে বাচ্চাদের বেশি কষ্ট হচ্ছে। তাই এসি কিনবো।’
এসি পরিবেশের জন্য কতটা ক্ষতিকর জানতে চাইলে তিনি জানান, এ বিষয়ে আমার তেমন জানা নেই। সব জায়গায় এখন এসি ব্যবহার করা হয়। আর ক্ষতির দিকটা আমি জানি না, তাই বলতেও পারছি না।’
জানা গেছে, এসির অত্যন্ত ক্ষতিকর দিক হলো সিএফসি গ্যাস নিঃসরণ করা। যা ওজোনস্তর ধ্বংস করাসহ বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম নিয়ামক। শীতলীকরণের জন্য এসি ও ফ্রিজে যে রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস ব্যবহার করা হয়, সেটি প্রথম আসে ১৯৩০–এর দশকে। তখন থেকে ক্লোরোফ্লোরো কার্বন (সিএফসি) নামের এই রাসায়নিক ফ্রেয়ন বাতাসে ছড়িয়ে ওজোনস্তরের ক্ষতি করে চলেছে।
এ গ্যাস ব্যবহার হয় হিমকারক যন্ত্রে (এসি, রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজ প্রভৃতি) ফোম শিল্পে, খাদ্য সংরক্ষণ, প্রসাধনী, কীটনাশক উৎপাদনে। গ্রিন হাউজ প্রভাব সৃষ্টিতে সিএফসির ভূমিকা প্রায় ১৬ শতাংশ।
১৯৮৭ সালে ‘মন্ট্রিয়ল প্রটোকল’ একটি আন্তর্জাতিক চুক্তিতে সিএফসি গ্যাস উৎপাদন নিষিদ্ধ করা হয়। বর্তমানে নিষিদ্ধ সিএফসির বদলে হাইড্রোফ্লোরো কার্বন (এইচএফসি) ব্যবহার করা হচ্ছে। এ গ্যাস ওজোন স্তরের ক্ষতি না করলেও বৈশ্বিক উষ্ণায়নে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। তা কার্বন ডাই–অক্সাইডের তুলনায় ১৪ গুণ বেশি ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশ ১৯৯০ সালে এই চুক্তিতে সই করে। ২০১৮ সালে ওজন স্তরের ক্ষয় রোধে মন্ট্রিয়ল প্রটোকল বাস্তবায়নে নেওয়া বিভিন্ন কার্যক্রমের সফলতায় বাংলাদেশকে সার্টিফিকেট অফ অ্যাপ্রিসিয়েশন অর্থ্যাৎ প্রশংসা সনদ দেয় জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি)।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. শহিদুল ইসলামের সঙ্গে সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘সামগ্রিক বিষয়ে ‘এসি’ ক্লোরোফ্লোরো কার্বন নিঃসরণ ঘটায়। ফলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির একটি বড় সোর্স হতে পারে এসি। এসির ব্যবহার সারাবছর ধরেই চলে। কিন্ত গ্রীষ্মকালে এর ব্যবহার বেড়ে যায়। এই মুহুর্তে ঢাকা শহর বা পাশ্ববর্তী অঞ্চল তিনটি কারণে গরম হচ্ছে। প্রথমত জলবায়ুগত কারণে উষ্ম বায়ু প্রবাহিত হচ্ছে। এটা বৈশ্বিক কারণ বলতে পারেন। দ্বিতীয়ত আমাদের ভূমিতে সবুজায়ন কম। তাই খোলা ভূমি উষ্ম হয়ে তাপ বাড়াচ্ছে। কারণ ওই ভূমিতে বালু, ইট তথা কনক্রিট বাড়ছে। তাই তাপমাত্রাও বাড়ছে। তৃতীয়ত বলতে পারেন এসি বা ফ্রিজের কথা।
এসি যেমন ঘরকে ঠান্ডা রাখে, তেমনি বাহিরে গরম হাওয়া ছাড়ে। ধরেন ঢাকা শহরে শতশত হাজার হাজার এসি থেকে একটা তাপ নিঃসরিত হয়। এগুলো একসঙ্গে হয়ে শহরে বাতাসের মধ্যে কেন্দ্রীভূত হয়ে বাতাসকে গরম করছে। ফলে যারা এসি ছাড়া থাকেন, তারা স্বাভাবিক তাপের তুলনায় দুই থেকে তিন ডিগ্রি বেশি তাপ অনুভব করেন। একজন সুখ নিচ্ছে, বিনিময়ে আরেকজনের জন্য দুঃখ ছেড়ে দিচ্ছে। তাই এসি ব্যবহারের বাইরে থাকা মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ছে।’
গাছ রেখে পরিবেশবান্ধব ভবন নির্মাণে এসির ব্যবহার কমবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাস্তার পাশটা আমরা সবুজ রাখতে পারছি না, এছাড়াও নতুন ভবন নির্মানের ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটছে। আমরা সবুজ রেখেই অবকাঠামো নির্মাণ বা রাস্তাঘাট করতে পারলে হয়তো তাপমাত্রা আজকের পর্যায়ে নাও আসতে পারতো। তখন এসির ব্যবহার এমনিতেই কমে যেতো।
সূত্র: দেশ রূপান্তর
CBNA24 রকমারি সংবাদের সমাহার দেখতে হলে
আমাদের ফেসবুক পেজে ভিজিট করতে ক্লিক করুন।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেল ভিজিট করতে পোস্ট করুন।