কিরে তুই কি করোনা পেসেন্টের রুমে ঢুকিস?
হ্যঁ গো ঢুকি।
কি সর্বনাশের কথা !
এটা তুই কি বললি রে বাবা ! না করতে পারিস না ?
মাগো না বলাটা যদি সহজ হত তাহলেতো বলে দিতাম।
আমার তো তোর জন্য ভয়ে পেটে বুকে কামড়াচ্ছে।আমার অস্হির অস্হির লাগছে। আমি বললাম মা অস্হির হয়ে কোন লাভ নেই । তোমার অস্হিরতা আমার সমস্যার সমাধান দিতে পারবে না। বরং তুমি অস্হির হয়ে অসুস্হ হলে আমার উপর আরো একটা এক্সট্রা সমস্যার সৃস্টি হবে ।তুমি কি চাও আমার এই মানসিক চাপের মধ্যে অযথাই তোমার জন্য আরো চাপ নেই?
না রে বাবা মায়ের মন তো বুঝিস না?
আমি বললাম এই মুহূর্তে একটা জিনিস চাই আমার পরিবারের মানুষ গুলো যেন মানসিক ভাবে সুস্হ থাকে। যে কোন সমস্যা সামনে আসুক মনোবল দিয়ে যেন লড়তে জানে। আর মানসিক ভাবে সুস্হ থাকতে হলে পজেটিভ থাকতে হয়, মনের সাথে যুদ্ধ করা জানতে হয়। শোন মা সারাদিন যদি চিন্তা করো আমার মেয়ে করোনা রোগীর সেবা করে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মরে যাবে। অযথাই দেখা যাবে আমার মরনের চিন্তা করতে করতে তুমিই মরে যাবে।আমি ঠি ক বেঁচে থাকব।দু:চিন্তা মাথা থেকে ঝেরে ফেলো।প্রথমে ভাবো পৃথিবীর সব মানুষ করোনায় মারা যাচ্ছে না ,যাবেও না।নব্বইভাগ করোনা রোগীরা ঘরেই সুস্হ হয় ।করোনা ছাড়াও হাজার ব্যাধি পৃথিবীতে আছে । যে ব্যাধিগুলোতে মানুষ প্রতিদিন মরছে। দ্বিতীয়ত ভাবো তোমার মেয়ে সুরক্ষা নিয়ে রোগীর সাথে সরাসরি কন্টাক করছে। অনেক মানুষ আছে যাদের কোন সুরক্ষা নেই তারপরেও মানুষের বিপদে ঝাপিয়ে পড়ছে।এই দেখো মা আমি প্রপার পি পি ই পড়েছি।যে গাউনটি পড়েছি এটার নাম গ্রোটেক্স গাউন যেটা আমার শরীরকে সম্পূর্ন সুরক্ষা দিচ্ছে।n95 মাস্ক পড়েছি যেন দুষিত বায়ু আমার নাক মুখে প্রবেশ করতে না পারে। ফেইস শিল্ড পড়েছি চোখদুটোকে নিরাপদে রাখার জন্য।ডবল পেয়ার গ্লোবস পড়েছি হাতদুটোকে জীবানু মুক্ত রাখতে।চুলগুলো কভার করে দিয়েছি।প্রত্যেকটি রুমের পাশে হাত ধোয়ার সুব্যবস্হা আছে ।।কিন্তু বাহিরে যারা দোকান পাটে যাচ্ছে ব্যংকে যাচ্ছে এমনকি গ্যাস ভরতে যাচ্ছে তারা সুরক্ষা ছাড়াই করোনা রোগীর সাথে কন্টাক্ট হচ্ছে।অসুস্হ হচ্ছে।সব চেয়ে বড় কথা মা পৃথিবীর সবাই এখন অসুখী ।কারো মনে সুখ নেই শান্তি নেই স্বস্তি নেই।একটা অস্হির সময় পার করছি ।এই অস্থিরতার মধ্যে ভালো থাকার জন্য সর্বচ্চ চেস্টা করতে হবে।এই চেস্টায় যদি তুমি ব্যর্থ হও তাহলে জেনো আসল করোনা নয় নকল করোনায় তোমাদের খেয়ে ফেলবে।
এবার বলো ঘরে বাজার আছে?
হ্যঁ আছে ।
তাহলে ভালো কিছু রান্না করে খাও।
না রে বাবা মুখে কোন স্বাদ নাই কোন কিছু রাধতেও ইচ্ছা করে না খেতে ও ইচ্ছা করে না।একদিকে তোমার চিন্তা অন্যদিকে ভাবি বুড়ো বুড়ি দুজন ঘরে থাকি যদি একজন মরে ও যাই কেউ তো ভয়ে সৎকার করতেও আসবে না।মা যা ঘটার সেটা ঘটবে যখন ঘটার তখন ঘটবে কিন্তু আগাম ঘটার আগেই যদি মনের মধ্যে ঝড় তোল সে ঝড় তো কেউ থামাতে পারবে না।
বললাম মা তোমরা মরার আগেই যদি মরে যাও তাহলে বেঁচে থাকার আর মানে কি? প্লিজ মা এসব না ভেবে ভালো কোন মুভি দেখো। হঠাৎ ক্যামেরায় চোখ পড়ল মায়ের কপালে টি প নেই।মাকে টি প ছাড়া দেখার অভ্যাস নেই এজন্য বেশ খারাপ লাগছিল।কি গো মা তোমার কপালে টিপ প নেই কেন?আর —টি প ! স্নান করে মাথায় চিরুনী লাগাতেও ভালো লাগে না।প্লিজ মা কপালে টিপ পড়ো ,নখে নেইল পলিশ দাও একটু সাজগোজ করো ,ঘরে হাল্কা সুরে গান বাজাও দেখবে মনটা একটু ফুরফুরে লাগবে।
মা সত্যি সত্যি আমরা কেউ ভালো নেই তারপরেও দেখো ফেসবুকে কত কিছু আবিস্কার করছে মানুষকে বিনোদন দিয়ে ভালো রাখার জন্য ।প্রিয় মানুষ প্রিয় বন্ধু প্রিয় স্বজনদের সাথে গ্রুপ চ্যাট করে ভিডিও কল করে আনন্দ করবার সুযোগ করে দিয়েছে।লাইভে কত গুনী শিল্পীরা ঘরোয়া সাজে গান পরিবেশন করে শ্রোতাদের মুগ্ধ করতে চেস্টা করছে।কত জন নানারকমের বাহারী রান্না করে ফেসবুকে দিচ্ছে সেটা দেখে কেউ কেউ নুতন কিছু রান্না করতে অনুপ্রানিত হচ্ছে।কি করবে মা এক অদৃশ্য দানবের হাতে আমাদের স্বাভাবিক জীবন বন্দী ।যতদিন না মুক্ত হই এই ছোট ছোট আনন্দগুলো নিয়ে ভালো থাকার চেস্টা করতে হবে।জানি মা চারপাশের এই অকাল মৃত্যু কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না।ভালো থাকা যায় না।স্বার্থপর্রের মত বলছি মরনের আগে যেন কারো মরন না হয় ।
শর্মিলা ধরের ফেসবুক থেকে নেওয়া
-শর্মিলা ধর, কানাডার সুপরিচিত সংগীত শিল্পী, উপস্থাপিকা এবং একজন স্বাস্থ্য কর্মী
সিবিএনএ/এসএস
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন