৮০০ পরিচারক, ১৫০ দেহরক্ষী নিয়ে ‘প্রাসাদে’ থাকেন! বেকার পুরুষকে বিয়ে করতে চেয়ে হাসির খোরাক ‘বিগ বস্’ প্রতিযোগী
২০১৮ সালে ‘মিস এশিয়া ট্যুরিজম ইউনিভার্স ২০১৮’ খেতাব অর্জন করেন তানিয়া। এর পরেই নেটপ্রভাবী হিসাবে তাঁর পথ চলা শুরু হয়।
মহাকুম্ভ পরিদর্শনের একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ার পরেই নেটপাড়ার ‘নয়নের মণি’ হয়ে উঠেছিলেন গ্বালিয়রের উদ্যোগপতি তানিয়া মিত্তল। তার পরেই ডাক মেলে বিতর্কিত রিয়্যালিটি শো ‘বিগ বস্’ থেকে। ‘বিগ বস্’-এর ১৯তম সিজ়নের অন্যতম প্রতিযোগী তিনি।
তবে ‘বিগ বস্’-এর ঘরে বড় বড় দাবি করে বর্তমানে ট্রোলের মুখোমুখি তানিয়া। তাঁর দাবিগুলিকে কেন্দ্র করে হইচইও পড়ে গিয়েছে।
নিজেকে কোটি কোটি টাকার মালিক দাবি করা তানিয়া জানিয়েছেন, একটি ২৬ হাজার বর্গফুটের বাড়ির মালিক তিনি। ৮০০ জন কাজ করেন তাঁর বাড়িতে। ১৫০ দেহরক্ষীও রয়েছে তাঁর।
এর পরেই তানিয়াকে নিয়ে হইচই পড়ে। তাঁর পরিচয় জানার জন্য কৌতূহলী হয়ে ওঠে নেটপাড়া। সেই আবহে তানিয়ার একটি পুরোনো সাক্ষাৎকার নেটাগরিকদের কৌতূহল আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
পুরোনো সেই সাক্ষাৎকারে তানিয়াকে দাবি করতে শোনা গিয়েছে, তিনি সানন্দে এক জন ‘বেকার’ পুরুষকে বিয়ে করতে প্রস্তুত।
সংবাদমাধ্যম ‘নিউজ়স্কুপ’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারের সময় ওই মন্তব্য করেছিলেন তানিয়া। তিনি বলেছিলেন, “আমি জানি না যে আমার মনের মতো পুরুষ পৃথিবীতে আছেন কি না। তবে এক জন বেকার ছেলেকে বিয়ে করতে আমার আপত্তি নেই। আপত্তি নেই তাঁর পা টিপে দেওয়ায় বা প্রকাশ্যে তাঁর পা ছুঁয়ে প্রণাম করাতেও। আমি সত্যিই বিশ্বাস করি যে সম্পর্কে ছোট-বড় বলে কিছু হয় না।”

তানিয়া সেই সাক্ষাৎকারে আরও মন্তব্য করেছিলেন, একেবারেই রোম্যান্টিক নন তিনি। প্রাক্তন প্রেমিকের জন্য তিনি কী করেছিলেন, সেই অভিজ্ঞতাও ভাগ করে নিয়েছিলেন তানিয়া। ‘বিগ বস্’ প্রতিযোগীর কথায়, ‘‘যখন আমি সম্পর্কে ছিলাম, তখন আমি একেবারেই রোম্যান্টিক ছিলাম না। আমার প্রেমিক খাওয়ার পর তার হাত মুছে দিতে আমি গরম তোয়ালে নিয়ে আসতাম। আমি জানি আমার স্বামীর সঙ্গেও একই আচরণ করব। ব্যক্তিগত ভাবে চাই আমার স্বামী রাজার মতো অনুভব করুক।’’
একজন ধনী ব্যক্তিকে বিয়ে করতে আগ্রহী না হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তানিয়া এ-ও বলেছিলেন, “আজ আমার তিনটি কারখানা আছে। আমার কাছে যথেষ্ট টাকা আছে। এত কিছুর পরেও, আমি চাই না যে অন্য কেউ আমার জন্য উপার্জন করুক। এটা ভুল। আমি মনে করি ঘর কী ভাবে চলবে, খাবার কী ভাবে আসবে তা নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই পুরুষদের। আমি উপার্জনও করব। আবার স্বামীর জন্য রান্নাও করব। আমি ঘরের সব কাজ জানি।”
তানিয়া আরও বলেন, “আমি দৃঢ় ভাবে বিশ্বাসী যে, নারীবাদের নামে আমরা আমাদের স্বামীদের ছাড়িয়ে যেতে শুরু করেছি। এটা ভুল। দেবী সীতাও ভগবান রামের পা ছুঁয়েছিলেন।”
বর্তমানে বেকার পুরুষকে বিয়ে করতে রাজি থাকলেও তানিয়া সাক্ষাৎকারে এ-ও জানিয়েছিলেন, একটা সময় ছিল যখন সঙ্গী হিসাবে এক জন ধনী ব্যক্তিকে চাইতেন তিনি।
তানিয়ার কথা, ‘‘আমি এক জনের সঙ্গে মেলামেশা করছিলাম। আমার ব্যবসা যদি না চলে তবে তাকে বিয়ে করার কথাও ভেবেছিলাম। সে খুব ধনী ছিল। কিন্তু আমি কিছু বলার আগেই, সে আমার সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে দেয়। আমায় বলেছিল যে আমি সুন্দর নই।”
তানিয়ার দাবি, এর পরেই তিনি ভ্লগিং শুরু করেছিলেন। উদ্যোগপতি হওয়ার পাশাপাশি তানিয়া এক জন আধ্যাত্মিক বিষয়স্রষ্টা (কন্টেন্ট ক্রিয়েটর)।
২০০০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর মধ্যপ্রদেশের গ্বালিয়রে তানিয়ার জন্ম। স্থানীয় একটি স্কুল থেকে পড়াশোনা করেন তিনি। পরে চণ্ডীগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
২০১৮ সালে ‘মিস এশিয়া ট্যুরিজ়ম ইউনিভার্স ২০১৮’ খেতাব অর্জন করেন তানিয়া। এর পরেই নেটপ্রভাবী হিসাবে তাঁর পথ চলা শুরু হয়।
‘বিগ বস্’-এ এসে যদিও বিভিন্ন অতিরঞ্জিত দাবি করে হাসির খোরাক হতে হচ্ছে তানিয়াকে। ‘বিগ বস্’-এর ঘরে একাধিক অদ্ভুত দাবি করেছেন তানিয়া। তাঁর দাবি, স্নানের আগে কী কী জিনিস নিয়ে যেতে হয়, তা তাঁর অজানা। মহাকুম্ভে তাঁর দেহরক্ষীরা অনেক মানুষকে বাঁচিয়েছেন বলেও দাবি করেছেন।

তানিয়া এ-ও দাবি করেছেন, পরিবারের সদস্যেরা তাঁকে ‘বস্’ বলে ডাকেন। তাঁর বাড়ি নাকি বিলাসবহুল হোটেলের থেকে কোনও অংশে কম নয়। সেই বাড়ির একটি তলায় শুধুমাত্র তাঁর পোশাক থাকে বলেও দাবি করেছেন ‘বিগ বস্’ প্রতিযোগী। এমনকি সলমন খান সঞ্চালিত শোয়ে ৮০০ শাড়ি, সাত বাক্স গয়না এবং দু’টি স্যুটকেস নিয়ে এসেছেন বলেও দাবি করেছেন নেটপ্রভাবী। যদিও নেটাগরিকদের দাবি, তানিয়া তাঁর সম্পত্তি এবং জীবনযাত্রা নিয়ে যে সব দাবি করেছেন, সে সবই মিথ্যা। ‘বিগ বস্’-এর প্রাক্তন প্রতিযোগী অভিষেক মলহান-সহ বেশ কয়েক জন নেটতারকা নিজের প্রতিপত্তি সম্পর্কে মিথ্যা বলার জন্য তানিয়ার সমালোচনা করেছেন। বিষয়স্রষ্টা তানিয়া তাঁর নিজস্ব ব্র্যান্ডও শুরু করেছিলেন। মূলত শাড়ি, ব্যাগের ব্যবসা করে সংস্থাটি। বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, তানিয়া নাকি মাত্র ৫০০ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন।
ইনস্টাগ্রামে নেটপ্রভাবী তানিয়ার ফলোয়ারের সংখ্যা ২৫ লক্ষেরও বেশি। মহিলাদের সমতা এবং স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কেও নেটমাধ্যমে কথা বলতে শোনা গিয়েছে তানিয়াকে। অনেকের দাবি, গ্বালিয়রের কাছে দু’টি গ্রামও দত্তক নিয়েছেন তিনি। সেই দুই গ্রামে মহিলাদের স্বাস্থ্য প্রকল্প নিয়ে কাজ করেন তিনি।
কিন্তু মোট কত সম্পত্তি রয়েছে তানিয়ার? বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি মাসে ৬ লক্ষ টাকারও বেশি আয় করেন তানিয়া। তাঁর আয়ের বেশির ভাগই আসে ব্র্যান্ড সহযোগিতা, এনডোর্সমেন্ট এবং তাঁর ব্যবসা থেকে। মোট সম্পত্তির পরিমাণ আনুমানিক ২ কোটি টাকা। একাধিক গাড়িও নাকি হয়েছে তাঁর।
এ-ও খবর যে, তানিয়ার বাবা অমিত মিত্তল একজন সফল ব্যবসায়ী। কিন্তু স্পটলাইট থেকে দূরে থাকতেই নাকি বেশি পছন্দ করেন তিনি।
-আনন্দবাজার থেকে