করোনার পর দেড় লাখ আমেরিকানের আত্মহত্যার শংকা রয়েছে বলে প্রকাশ হয়েছে। দীর্ঘদিন লকডাউনে থাকায় অধিকাংশ আমেরিকানের মানসিক বিপর্যয় ঘটেছে। শারীরিক এবং আর্থিক বিষয়েও দুশ্চিন্তা গ্রাস করেছে। এ অবস্থায় করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলেও পরবর্তী সময়ে আরো দেড় লক্ষাধিক আমেরিকান আত্মহত্যা অথবা ড্রাগ, মাদক বা অ্যালকোহলের অপব্যবহারে মারা যাবে বলে আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে। করোনায় ক্ষত-বিক্ষত আমেরিকায় চলমান অর্থ সংকট, বেকারত্ব বৃদ্ধি ইত্যাদির জের দ্রুত কাটিয়ে উঠতে চাই আর্থিক কর্মকান্ডে গতি আনা। সেটি যদি সম্ভব না হয় তাহলেই মানসিকভাবে বিষন্ন লোকজন আত্মহত্যার মাধ্যমে নিজেকে মুক্ত করার কথা ভাববে। এমন আশংকা প্রকাশ করেছে ন্যাশনাল পাবলিক হেলথ গ্রুপের ‘ওয়েল বিইয়িং ট্রাস্ট’। করোনা পরবর্তীতে আমেরিকানদের জীবন-ধারা নিয়ে পরিচালিত এক গবেষণায় এমন আভাস পাওয়া গেছে বলে এই গবেষণা কর্মের নেতৃত্ব প্রদানকারি টিমের চীফ স্ট্যাটেজি অফিসার মানসিক বিশেষজ্ঞ ড. বেনজামিন মিলার বলেছেন। শুক্রবার উদ্বেগজনক এবং ভয়ংকর এ তথ্য প্রকাশকালে ড. মিলার বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন যে, ‘তবে করোনা পরবর্তী সময়ে যদি আর্থিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি উন্নতমানের মানসিক স্বাস্থ্য-চিকিৎসা ও কমিউনিটির সমর্থনে ফেডারেল, রাজ্য এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষসমূহ ব্যাপক ব্যবস্থা নিলে ড্রাগের অপব্যবহারজনিত মৃত্যু এবং আত্মহত্যার পরিস্থিতি ততটা খারাপের দিকে নাও যেতে পারে।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, এটি একটি তথ্যগত ধারণা, রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপের ফলে মৃত্যুহার পরিবর্তিত হতে পারে। মিলার বলেন, ‘যেহেতু এখনই মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে শুরু করেনি, ফলে আমরা চাইলে সংখ্যাটায় পরিবর্তন আনতে পারি। এক্ষেত্রে এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি আমাদের ওপরে বর্তায়।’
ড. মিলারের ধারণা, আগস্টের মধ্যে করোনায় এক লাখ আমেরিকানের মৃত্যুর আংশকা করা হচ্ছে। এটিও বাড়তে পারে। কারণ, বাস্তবতার আলোকে লকডাউন উঠিয়ে না নেয়ায় ইতিমধ্যেই ঐসব রাজ্যের পরিণতি সকলে উপলব্ধি করছেন। অর্থাৎ যে ধারায় সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে আসছিল এবং মৃত্যুর সংখ্যাও কমছিল, সেটি ক্রমান্বয়ে উল্টো পথে ধাবিত হতে শুরু করেছে লকডাউন শিথিল করা সিটি ও রাজ্যসমূহে। কারণ, অধিকাংশ মানুষই মাস্ক ব্যবহার করছে না, সামাজিক দূরত্বও বজায় রাখছে না।
ড. মিলারের মতে, মন্দা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হলেও কমপক্ষে ২৭৬৪৪ জনের প্রাণহানী ঘটতে পারে। আর যদি মন্দা কাটিয়ে উঠতে ঢিলে ঢালা প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয় তাহলে আত্মহত্যাসহ নেশার কারণে মৃত্যুর সংখ্যা এক লাখ ৫৪ হাজারের অধিক হতে পারে।
চির পরিচিত সামাজিক বন্ধন অটুট নেই। একা ঘরে থাকতে থাকতে মানুষের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছেন। সেটি ক্রমান্বয়ে দীর্ঘ হচ্ছে করোনা পরিস্থিতির অবসান নিয়ে সুস্পষ্ট কোন দিন-তারিখ না থাকায়। এক ধরনের ভীতি এবং অস্থিরতা গ্রাস করছে মানুষকে।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের মন্দার সময় বেকারত্বের পাশাপাশি আত্মহত্যা ও মাদক উভয় কারণে মৃত্যুর হার বেড়েছিল। সংস্থাটির মতে, ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্ব ছিল ৪.৬ শতাংশ, যা বেড়ে ২০০৯ সালের অক্টোবরে ১০ শতাংশে পৌঁছেছিল। ২০১০ এর গোড়ার দিকে তা অবিচ্ছিন্নভাবে হ্রাস পেয়ে ৩.৫ শতাংশে নামে।
স্বাস্থ্য এবং মানবসেবা দফতরের সহকারি সচিব এবং মানসিক স্বাস্থ্য প্রশাসনের প্রধান ড. এলিনোর ম্যাককেন্স-কাটজ এ গবেষণা কর্মের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, সারা দেশেই ভয়ংকর একটি পরিস্থিতির ভাব দেখছি। নেশার প্রবণতা বাড়তে পারে, অপকর্ম সীমা ছাড়াতে পারে, গৃহদাঙ্গা বাড়বে এবং একইসাথে শিশুদের অবজ্ঞা-অবহেলা তথা শিশু নির্যাতনের হারও চরমে উঠতে পারে। ম্যাককেন্স-কাটজ উল্লেখ করেন, মানসিক বিপর্যয়ের এই আশংকা থেকে রক্ষার জন্যে বিপুল অর্থ প্রয়োজন মানসিক-স্বাস্থ্য চিকিৎসা ও নেশাগ্রস্থদের চিকিৎসার জন্যে। এ দুটি সেক্টরে ইতিমধ্যেই তহবিল ঘাটতি শুরু হয়েছে। কারণ, কোয়ারেন্টাইন অথবা আইসোলেশনে থাকলে সিংহভাগ মানুষই মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ম্যাককেন্স-কাটজ বলেন, করোনায় সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, পেনসিলভেনিয়াসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যসমূহে ইতিমধ্যেই মানসিক চিকিৎসার কল বেড়েছে। অনেকে বেকার ভাতার প্রথম ৬০০ ডলারের চেক পাবার পর অপেক্ষায় রয়েছেন। চেক আর আসছে না। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঘরে অবস্থানকারি গৃহকর্তার জন্যে এটি বড় ধরনের মানসিক যন্ত্রনা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।