সিলেট নগরীর হযরত মানিকপীর (রহ.) মাজার প্রাঙ্গণে বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের জানাযা অনুষ্ঠিত হয়
বাবা-মায়ের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। সোমবার দুপুর ২ টা ২০ মিনিটে নগরীর হযরত মানিকপীর (রহ.) মাজার গুরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এ সময় দলীয় নেতাকর্মী ও স্বজনেরা চোখের জলে দীর্ঘদিনের প্রিয় ‘মেয়র সাবকে’ শেষ বিদায় জানান।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে দাফনের আগে মানিকপীর গুরস্থানে কামরানের দ্বিতীয় জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগ ছাড়াও বিভিন্ন দলের নেতা ও প্রশাসনের শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তা অংশ নেন। দ্বিতীয় দফা জানাযার পর দাফনের আগে আওয়ামী লীগ ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী কামরানের মরদেহ ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কামরানের জানাযায় অন্যান্যের মধ্যে অংশ নেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. গোলাম কিবরিয়া, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, মহানগরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ প্রমুখ।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কামরান রোববার দিবাগত রাত পৌনে ৩টার দিকে মারা যান। এরপর অ্যাম্বুলেন্সযোগে তার মরদেহ সিলেটে নিয়ে আসা হয়। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কামরানের মরদেহ নগরীর ছড়ারপারে তার বাসায় পৌঁছলে স্বজন, দলের নেতাকর্মী ও এলাকাবাসী করোনার ভয় উপেক্ষা করে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
নিজের বাসায় স্বাস্থ্যবিধি ও ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী গোসল দেওয়ার পর কামরানের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী পার্শ্ববর্তী ছড়ারপার জামে মসজিদে প্রথম জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জীবদ্দশায় কামরান এই মসজিদের মোতাওয়াল্লী ছিলেন। মরহুমের ভাতিজা ইমতিয়াজ আহমদ আবদান প্রথম জানাযায় ইমামতি করেন। এতে আত্মীয়-স্বজন ও এলাকার লোকজন অংশ নেন।
এদিকে কামরানের মরদেহ দেখতে ও জানাযায় অংশ নেওয়ার ব্যাপারে সোমবার সকাল থেকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়। সকালে নগরীর চৌহাট্টায় রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সিলেট ইউনিট কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বৈঠক করেন। এই সভায় পরিবারের মতামতের ভিত্তিতে আত্মীয়-স্বজনের জন্য বাসার পাশে জানাযার ব্যবস্থা করা হয়।
গত ৫ জুন ওসমানী মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় কামরানের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। এরপর দিন তীব্র জ্বর ও বমি হলে তাকে নগরীর শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ৭ জুন কামরানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারযোগে ঢাকার সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়।
সিএমএইচে কামরানকে ‘প্লাজমা থেরাপি’ দেওয়া হলে প্রাথমিকভাবে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়। তবে রোববার মধ্যরাত থেকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে বলে জানান তার বড় ছেলে ডা. আরমান আহমদ শিপলু। অসুস্থ বাবার সঙ্গে সার্বক্ষণিক ছিলেন ডা. শিপলু। গত ২৭ মে কামরানের স্ত্রী আসমা কামরানের করোনা শনাক্ত হয়। তিনি নিজ বাসায় আইসোলেশনে আছেন।- সমকাল
প্রিয় শহর প্রতিদিন মিস করবে কামরানকে
এম এস সেকিল চৌধুরী || সিলেটের জনগণের নিত্যদিনের কাছের মানুষ বদরুদ্দিন আহমদ কামরান আর নেই । প্রতিদিনের ঘটনাবলীতে বদরুদ্দিন কামরান ছিলেন সদাসর্বত্র । মাটি কামড়ানো সাধারণ মানুষের মধ্য থেকে ওঠে আসা একজন পরিশ্রমী নিরহংকারী মানুষের সফলতার গল্পের নাম কামরান।
সূর্যোদয় থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হাসিমুখে মানুষের সামনে হাজির। সালাম দিচ্ছেন আর হাত মেলাচ্ছেন। একদিন আমাকে বললেন,
সেকিল ভাই, রাজনীতি ও মানুষের সাথে মিশে থাকা অনেক পরিশ্রমের কাজ। সারাদিন অসংখ্য মানুষের সাথে হাত মেলানো ও সালাম বিনিময় করে রাতে যখন বাড়ি ফিরি হাতে ও কাধেঁ ব্যথা হয়ে যায়। গরম পানি দিয়ে শেক দিই অনেকক্ষণ।
সকল মত ও পথের মানুষের সাথে মিশতেন। কথা শুনতেন, কাজ করতেন সাধারণ থেকে অসাধারণ সকলের। প্রবাসীদের প্রতি ছিল বিশেষ দরদ। মানুষ কামরান সাধারণভাবে সবাইকে বিশ্বাস করতেন। সিলেট শহরের সাথে লন্ডন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের চুক্তি করার প্রস্তাব এলো লন্ডনপ্রবাসী কয়েকজন সিলেটপ্রেমী কাউন্সিল নেতা ও সমাজসেবীর কাছ থেকে । কামরান ভাই সব কাগজপত্র পাঠিয়ে দিলেন আমার কাছে। পরদিন অফিসে চায়ের দাওয়াত দিলেন। দেখলাম সকল দলের কাউন্সিলর ও প্যানেল চেয়ারম্যান উপস্থিত। বললেন সেকিল ভাই, সিলেটের জন্য যা ভাল হয় তাই করুন। চিঠিপত্র লিখুন। আমাকে বলবেন কোথায় সই করতে হবে। সেই প্রতিনিধি দলের উপনেতা
হিসেবে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি এ জাতীয় কাজে তিনি কোন প্যাঁচ গোচ করতেন না। নগরপিতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও তাকে সব সময় পাওয়া যেত।
একদিন অফিসে গেছি। দেখি যা সামনে আসছে তাই সই করছেন। বললাম, বিস্তারিত না দেখে অবিরাম সই করছেন দাপ্তরিক কোন অসুবিধা হয়না ? বললেন, সবাইকে বলে রেখেছি বিশ্বস্ত থেকে নিজের বিবেক মত ফাইল তৈরী করার জন্য। সাধারণভাবে সহকর্মীদের বিশ্বাস করার
এক অনন্য নজির দেখলাম সেদিন। লায়ন্স সেবা হাসপাতালকে জমি প্রদান সহ অসংখ্য সমাজসেবা কাজে অরাজনৈতিক ও সার্বজননীন ভূমিকায় দেখেছি মেয়র বদরুদ্দিন আহমদ কামরানকে। সিলেট শহর ও সিলেটের মানুষ প্রতিদিন মিস করবে সকলের সুহ্রদ, সাধারণের বন্ধু বদরুদ্দিন কামরানকে।
সি/এসএস
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন