ফিচার্ড বিশ্ব

‘অপারেশন আল আকসা ফ্লাড’ কি? ফিলিস্তিন-ইসরাইল যুদ্ধ আবার শুরু হল কেন?

অপারেশন-আল-আকসা-ফ্লাড

আবারো নতুন করে ফিলিস্তিন-ইসরাইল ‘যুদ্ধ’ শুরু হয়েছে। প্রথমে গাজা উপত্যকার যোদ্ধাগোষ্ঠী হামাস ইসরাইলের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন আল আকসা ফ্লাড’ অভিযানে কয়েক হাজার রকেট নিক্ষেপ করেছে। এতে কমপক্ষে ২২ জন ইসরাইলি নিহত হয়।

এর জবাবে গাজায় বিভিন্ন স্থাপনায় নির্বিচারে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এতে বেশ কিছু মানুষ হতাহত হয়েছেন। আল আকসা মসজিদকে অপবিত্র করা এবং বসতি স্থাপনকারীদের ক্রমবর্ধমান সহিংসতার জবাবে আকস্মিক রকেট হামলা শুরু করে হামাস। হামাসের এই অভিযানের নাম ‘অপারেশন আল আকসা ফ্লাড’ ।

জবাবে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধের ঘোষণা দেন। এর পরপরই আকাশপথে বোমা হামলা শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী। গাজা উপত্যকায় অবস্থানরত আল জাজিরার সাংবাদিক হেবা আকিলা বলছেন, এই হামলা চালানো হচ্ছে জাবালিয়া, বেইত লাহিতা, বেরেইজ, গাজার মধ্যাঞ্চল, খান ইউনুস, রাফায়। কাতার ইউনিভার্সিটি থেকে মাহকুব জওয়েরি বলেছেন, ইসরাইল সরকারের জন্য পরিস্থিতি সংকটজনক।

এই উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য ইসরাইলকে দায়ী করেছে কাতার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে সহিংসতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য এককভাবে দায়ী ইসরাইল। গাজায় আল শিফা হাসপাতালে হতাহতদের নিয়ে ছুটছেন আত্মীয়রা। অনেকে হাসপাতালে ছুটে যাচ্ছেন নিকটজনের খবর নিতে। আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে হাসপাতালে রক্ত দেয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হামাস।

ইসরাইলের সেনাবাহিনীর দাবি, গাজা থেকে বেশ কিছু ফিলিস্তিনি যোদ্ধা অনুপ্রবেশ করেছে ইসরাইলে। এ জন্য তেলআবিব সহ ইসরাইলের কেন্দ্রীয় ও দক্ষিণাঞ্চলে সতর্কতা সাইরেন বাজানো হয়। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, আমরা যুদ্ধে আছি। এ অবস্থার মধ্যে আল জাজিরার সাংবাদিক বলছেন, গাজা উপত্যকা থেকে রকেট নিক্ষেপ হয়। তিনি আরও বলেন, ইসরাইলি সেনা নিহত ও তাদের গাড়িতে আগুন ধরে যাওয়ায় ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদেরকে সেলিব্রেট করতে দেখা গেছে। দু’জন ইসরাইলি সেনাকে আটক করার ভিডিও পাওয়া গেছে। এতে তাদেরকে জীবন্ত অবস্থায় দেখা যায়।

ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট আইজাক হারজগ বলেছেন, যারা আমাদের ক্ষতি করার ইচ্ছা করে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা সব কাটিয়ে উঠতে পারবো। গাজা থেকে আক্রমণের ফলে খুব কঠিন একটি সময়ের মুখোমুখি ইসরাইল। ইসরাইলে যারা হামলার মুখে রয়েছেন, সেইসব নাগরিকদের উৎসাহ ও শক্তি দিচ্ছি।

ওদিকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে বৈষম্যহীনভাবে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন জেরুজালেমে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স স্টেফানি হ্যালেট। এক্সে (সাবেক টুইটার) তিনি বলেছেন, ইসরাইলের বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে হামাসের বৈষম্যহীন রকেট হামলার নিন্দা জানাই। ইসরাইলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। এমন সন্ত্রাসী কর্মকা- থেকে নিজেদের রক্ষায় ইসরাইলকে আমরা পূর্ণাঙ্গ সমর্থন দিচ্ছি।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। এর মধ্যে আছে সৌদি আরব, মিশর, তুরস্ক। ইসরাইলে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন, ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মাইকেল, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজ, বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক, ডাচ্ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুথ প্রমুখ।

সৌদি আরব বলেছে, তারা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে ঘনিষ্ঠভাবে দৃষ্টি রাখছে। উভয় পক্ষকে উত্তেজনা বন্ধ করার অনুরোধ করা হয় তাৎক্ষণিকভাবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে বলেছে, অব্যাহত দখলদারিত্ব এবং ফিলিস্তিনি জনগণের বৈধ অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখায় বিপজ্জনক পরিস্থিতি সম্পর্কে আগে অনেকবার সতর্ক করা হয়েছে। মাঝে মাঝেই দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করে মিশর। তারা রক্তপাত বন্ধে উপায় খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছে এরই মধ্যে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শুকরি বলেছেন, তিনি এ বিষয়ে জোরালো যোগাযোগ শুরু করেছেন।

রাজনৈতিক এক কনফারেন্সে বক্তব্যকালে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান বলেছেন, তার দেশ এ অবস্থায় সব পক্ষের প্রতি বিরত থাকার আহ্বান জানায়।

সূত্র: মানবজমিন

অনলাইন ডেস্ক (এফএইচ/বিডি)
সংবাদটি শেয়ার করুন