অভিবাসী শ্রমিকদের মজুরি চুরি!
অভিবাসী শ্রমিকরা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন অনেকে। ৮ ঘণ্টার জায়গায় ১৮-১৯ ঘণ্টা কাজ করানো হচ্ছে তাদের। মাসের পর মাস বেতন না পেয়ে দেশে থাকা পরিবারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে টিকিট কেটে ফিরে আসার পর লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন বেশ কয়েকজন শ্রমিক।
গতকাল সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (রামরু) এবং মাইগ্র্যান্ট ফোরাম ইন এশিয়া (এমএফএ) আয়োজিত ‘মজুরি চুরি বিষয়ে অভিবাসী শ্রমিকদের গণসাক্ষ্য’- বিষয়ক অনুষ্ঠানে বিদেশফেরত শ্রমিকরা তাদের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেন।
প্রবাসী শ্রমিকেরা জানান, যে চাকরির কথা বলে বিদেশে নেয়া হয়, সেই চাকরি তারা পাননি। যে বেতনের কথা বলা হয়, সেই বেতনও দেয়া হয়নি। বাধ্যতামূলকভাবে শ্রমিকদের অতিরিক্ত কাজ করানো হয়েছে। চলেছে নির্যাতন। অনুষ্ঠানে সৌদি আরব, দুবাই, লেবানন থেকে করোনাকাল ও এর আগে ফিরে আসা ১২ জন শ্রমিক তাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
তারা দেশ থেকে যাওয়ার সময় স্থানীয় দালাল ও রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে প্রতারিত হয়েছিলেন। ভুক্তভোগীরা জানান, শর্ত অনুযায়ী তারা ছুটি পান না।
আলোচনা ছাড়াই যখন তখন বেতন কমানো হচ্ছে। এ ছাড়া বীমা, চিকিৎসা, পরিবহন খরচ ও দক্ষতা বাড়ানোর প্রশিক্ষণের অজুহাতে শ্রমিকদের বেতনের টাকা কেটে রাখছেন মালিকেরা। যা পরবর্তীতে আর ফেরত পাচ্ছেন না তারা। চাকরি, মজুরি ও সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে প্রবাসী শ্রমিকদের যেসব শর্ত রয়েছে, তার অধিকাংশই মানা হচ্ছে না। আর এভাবেই মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে প্রবাসী শ্রমিকদের মজুরি চুরির ঘটনা ঘটছে।
অনুষ্ঠানে রামরুর নির্বাহী পরিচালক সি আর আবরার প্রবাসী শ্রমিকদের মজুরি চুরি ধারণাপত্র পড়ে শোনান। ধারণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রবাসী শ্রমিকেরা মৃত্যুর পরও তাদের মজুরি এবং প্রাপ্য অধিকার কেড়ে নেয়া থেকে রেহাই পান না। কারণ, এ ধরনের অভিযোগ করতে যে বিশাল আইনি খরচ রয়েছে, সেটি তাদের ঢাল হিসেবে কাজ করে। মজুরি চুরির কারণে যে ক্ষতি, তা কেবল অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। মজুরি চুরি দেশের মোট দেশজ উন্নয়নের (জিডিপি)’র ওপর একটি আক্রমণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা আখ্যায়িত করেছেন।
সূত্রঃ যুগান্তর