যুক্তরাষ্ট্রে ‘আজীবন সম্মাননা’ পেলেন সুবির চৌধুরী
লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র || বড় বড় কোম্পানীগুলোর মন্দা কাটিয়ে উঠতে কিংবা উৎকৃষ্ট পণ্যের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যে বাস্তবভিত্তিক পরামর্শ প্রদানকারী ব্যক্তিত্ব তথা ‘কোয়ালিটি-গুরু’ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে বিশেষভাবে সমাদৃত বাংলাদেশি-আমেরিকান ড. সুবির চৌধুরী আরেকটি মর্যাদাপূর্ণ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।
সারাবিশ্বের মেধাবি ৮০ হাজার পেশাজীবীর (জ্ঞানভিত্তিক গ্লোবাল কমিউনিটি) প্রতিনিধিত্বকারি ‘আমেরিকান সোসাইটি ফর কোয়ালিটি’র সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ চলতি বছরের “সিসিল সি ক্রেগ লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড” প্রদান করা হয় সুবির চৌধুরীকে।
গত বুধবার এটি ভার্চুয়াল ইভেন্টে সুবির চৌধুরীকে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য, ‘আমেরিকান সোসাইটি ফর কোয়ালিটি’ তথা এএসকিউ’র গত ৭৪ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম একজন বাংলাদেশিই শুধু নন, প্রথম এশিয়ান হিসেবে চট্টগ্রামের সন্তান এবং ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাসরত সুবির চৌধুরী এই ‘আজীবন সম্মাননা’ লাভ করলেন।
এ অর্জনের বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে সুবির চৌধুরী বলেন, ‘আমি গভীরভাবে সম্মানিত এবং কৃতজ্ঞতাবোধ করছি আমার জীবনকে এভাবে সমৃদ্ধ করার জন্য আমার ক্লায়েন্ট এবং সহকর্মীদের কাছে। তারাই বছরের পর বছর ধরে এই পুরস্কার অর্জনের জন্যে আমাকে যোগ্য করতে আন্তরিক অর্থেই সহযোগিতা করেছেন। একইসাথে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মকে (এখানে ও বাংলাদেশে) বলতে চাচ্ছি, নিষ্ঠার সাথে কাজ করলে কেউই প্রতিভাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারে না। মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ‘দ্য ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব স্ট্যান্ডার্ডস এ্যান্ড টেকনোলজি’ (এনআইএসটি)র সমন্বয়ে উইসকনসিন স্টেটের মিলওয়াকি সিটিতে অবস্থিত ‘এএসকিউ’র সদস্যরা ১৫০ দেশে বিস্তৃত এবং এর আঞ্চলিক কার্যালয় রয়েছে দক্ষিণ এশিয়া, উত্তর এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায়।
কোয়ালিটি-গুরু সুবির চৌধুরীকে বেশ ক’বছর আগে নিউইয়র্ক টাইমস ‘লিডিং কোয়ালিটি এক্সপার্ট’ বা ‘নেতৃস্থানীয় উৎকর্ষ বিশেষজ্ঞ’ হিসেবে অভিহিত করে। সুবির বিশ্বের ১ নম্বর বেস্টসেলিং লেখক, যার লেখার বিষয় ‘সিক্স সিগমা দর্শন’। বিজনেস উইক তাকে আখ্যা দিয়েছে ‘উৎকর্ষের ভবিষ্যদ্বক্তা’ বলে। সুবীর চৌধুরীর বই ‘দ্য ডিফারেন্স’ ইউএসএ টুডের সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের তালিকায় স্থান পেয়েছে। ‘দ্য থিংকারস ৫০’ তাঁকে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিন্তাবিদের তালিকায় স্থান দিয়েছে চারবার-২০১১ সালে ৫০, ২০১৩ সালে ৪০, ২০১৫ সালে ৩৯ আর ২০১৭ সালে থিংকারের তালিকায় তার স্থান ২৭।
সুবীর চৌধুরী কোয়ালিটি বা গুণগত উৎকর্ষ বাড়াতে পরামর্শ দেন বড় বড় কোম্পানিকে। এসব কোম্পানির বিপুল অর্থ সাশ্রয়ে তিনি সাহায্য করেন, তেমনি বিলিয়ন ডলার লাভ করতেও সহযোগিতা দেন। তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট বা ব্যবস্থাপনা পরামর্শকদের একজন। ফরচুন ১০০ তার গ্রাহক, যাদের বিলিয়ন ডলার বাঁচাতে তার কনসালট্যান্সি কাজে লেগেছে। তিনি এএসআই কনসালটিং গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। জেনারেল মোটর, হুন্দাই, কিয়া মোটরস, জেরক্স, ক্যাটারপিলার, আমেরিকান অ্যাক্সেল, বোস, দায়িয়ু, ফোর্ডস-এ রকম বড় বড় কোম্পানি তার গ্রাহক।
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলেতে এক মিলিয়ন ডলার দিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন সুবীর চৌধুরী-মালিনী চৌধুরী বাংলাদেশ স্টাডিজ সেন্টার। যুক্তরাষ্ট্রে অন্যতম সেরা ইউনিভার্সিটিতে বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীরা উভয় দেশে গিয়ে ভাষা-সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করেন। মাতৃভূমির প্রতি নিজের দায়বদ্ধতা থেকেই সুবির চৌধুরীর এ প্রয়াস। করোনার প্রকোপ মহামারিতে রূপ নেয়ায় এই সেন্টারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি নিয়ে বেশ কটি ভার্চুয়াল সেমিনার-সিম্পোজিয়াম হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সুবির চৌধুরীর সরল উচ্চারণ, ‘নিজে বড় হলেই চলবে না, জন্মভূমির প্রতিও দায়বদ্ধতা রয়েছে, সেটি পূরণে সকলেই যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেষ্ট থাকি, তাহলেই বাংলাদেশ আরো এগুতে সক্ষম হবে’।
বিশ্বখ্যাত বস্টনের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তার নামে ফেলোশিপ আছে। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসেও ফেলোশিপ আছে এই বাঙালির নামে।
এস এস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন