আন্দোলন করে চাপের মুখে পড়েছেন সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও প্রাইমারি স্কুলের সহকারী শিক্ষকরা। চাকরি হারানো ও বেতন না পাওয়ার ভয় কাজ করছে তাদের মধ্যে। ‘সচিবালয় ভাতা’র দাবিতে আন্দোলনে নেমে অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদকে তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনার পর গ্রেফতার হওয়া ১৪ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তারা সচিবালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারী। বিশৃঙ্খলায় জড়িত আরো অনেকের নাম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে রয়েছে। এতে অনেকে চাকরি হারানোর ভয় পাচ্ছেন। এদিকে কর্মস্থলে উপস্থিতির প্রত্যয়ন ছাড়া প্রাথমিক শিক্ষকরা বেতন পাবেন না বলে আদেশ জারি করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এতে লাখো শিক্ষক বেতন না পাওয়ার আতঙ্কে রয়েছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তপশিল ঘোষণার পর সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, অন্যায় বা বেআইনি দাবি তুলে রাস্তায় নেমে বিশৃঙ্খলা তৈরির যে কোনো চেষ্টা সরকার কঠোরভাবে মোকাবিলা করবে। এরপর থেকে আন্দোলন এক অর্থে উধাও হয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো গত সোমবার সবিচালয়ের ঐসব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করে পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করে। বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চার জন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের। তারা হলেন বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের একাংশের সভাপতি মো. বাদীউল কবির, অফিস সহায়ক মো. কামাল হোসেন, মো. আলিমুজ্জামান ও মো. নজরুল ইসলাম। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ মিলিয়ে সাত কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন বরখাস্তের তালিকায়। তারা হলেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা রোমান গাজী, শাহীন গোলাম রব্বানী, অফিস সহায়ক মো. আবুল বেলাল, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. তায়েফুল ইসলাম, প্রশাসনিক কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র রায়, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ইসলামুল হক, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. মহসীন আলী। এছাড়া তথ্য মন্ত্রণালয়ের অফিস সহায়ক মো. মিজানুর রহমান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অফিস সহায়ক মো. নাসিমুল হক এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অফিস সহায়ক বিপুল রানা বিপ্লবকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সচিবালয়ে কর্মরত সব কর্মচারীর জন্য ২০ শতাংশ ‘সচিবালয় ভাতা’র দাবিতে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের একাংশের নেতৃত্বে আন্দোলন করে আসছিলেন সচিবালয়ে কর্মরত নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর অংশ হিসেবে ১০ ডিসেম্বর অর্থ উপদেষ্টাকে তার কার্যালয়ে দীর্ঘ সময় অবরুদ্ধ করেন তারা। পরদিন আবারও আন্দোলনে নামলে নেতৃত্ব দেওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে তাদের ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেফতার দেখানো হয়।
এদিকে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের বেতন পেতে হলে কর্মস্থলে উপস্থিতির সঠিক প্রত্যয়নপত্র থাকা অত্যাবশ্যকীয় করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী-কর্মস্থলে উপস্থিতির সঠিক প্রত্যয়ন ছাড়া কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা বা কর্মচারী বেতন-ভাতা তুলতে পারবেন না। গত ৯ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (সাধারণ প্রশাসন) মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়। শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের বেতন নিয়ে অফিস আদেশে বলা হয়, অনেক কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষক নিজ কর্মস্থলের পরিবর্তে সংযুক্তিকৃত স্থানে দায়িত্ব পালন করলেও নিয়মিত উপস্থিত থাকেন না। ছুটি অনুমোদন ছাড়াই কেউ কেউ বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন, যা সরকারের আর্থিক ক্ষতি এবং কর্মচারী শৃঙ্খলা ব্যাহত করছে। এতে আরো বলা হয়, সংযুক্তিকৃত কর্মস্থলে নিয়মিত উপস্থিতির উপযুক্ত প্রত্যয়ন সাপেক্ষে বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হবে। সংযুক্তিকৃত কোনো ব্যক্তি অনুমোদন ছাড়া অনুপস্থিত থাকলে এবং তারপরও বেতন উত্তোলন করলে সংশ্লিষ্ট আয়-ব্যয়/নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা দায়ী থাকবেন বলেও জানানো হয়।
বদলি-শোকজ প্রত্যাহারে ডিজিকে অনুরোধ প্রাথমিক শিক্ষকদের :বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন করায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অসংখ্য শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে। অনেককে ভিন্ন জেলায় ‘প্রশাসনিক বদলি’ করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এতে আতঙ্কিত প্রাথমিক শিক্ষকরা। শাস্তিমূলক বদলি ও শোকজ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছেন শিক্ষকরা। সাধারণ শিক্ষকদের পক্ষ থেকে ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের নেতারা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) সঙ্গে সাক্ষাত্ করে বদলি ও শোকজ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছেন। রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে সাক্ষাত্কালে এ অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন পরিষদের অন্যতম আহ্বায়ক মু. মাহবুবর রহমান।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলা বা থানাভিত্তিক। নিজ থানায়; অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকের নিজস্ব বাড়ির খুব কাছাকাছি বিদ্যালয়ে পদায়ন করা হয়। এতে বাড়িতে থেকে শিক্ষকতা করার সুযোগ পান প্রাথমিকের শিক্ষকরা। আন্দোলন চলাকালে হঠাত্ নিজ থেকে ভিন্ন জেলায়; কারো কারো এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগেও বদলি করা হয়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন প্রাথমিক শিক্ষকরা। বিশেষ করে নারী শিক্ষকরা এ নিয়ে বেশি আতঙ্কিত। প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ভিন্ন জেলায় বদলিতে সাধারণ শিক্ষকরা আতঙ্কিত। আরো অনেক শিক্ষককে বদলি করা হবে বলেও জেলা-উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক অফিস এবং অধিদপ্তর থেকে তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে অনেকে আতঙ্কগ্রস্ত।
দশম গ্রেডসহ তিন দফা দাবিতে গত ২৭ নভেম্বর থেকে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের ডাকে লাগাতর কর্মবিরতি শুরু করেন শিক্ষকরা। প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্দোলনে বার্ষিক পরীক্ষায় বিঘ্ন ঘটে। অনেক বিদ্যালয়ে নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা শুরু হয়নি। দাবি পূরণে আশ্বাস, চাকরিবিধি ও ফৌজদারি আইনে শাস্তির হুঁশিয়ারি দিয়েও শিক্ষকদের ক্লাসে ফেরানো যায়নি। বাধ্য হয়ে গণহারে বদলি ও শোকজের পথে হাঁটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ১, ২, ৩ ডিসেম্বর দেশের অনেক জেলার সব বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের গণহারে শোকজ করা হয়। এরপর ৪ ডিসেম্বর আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া একজন প্রধান শিক্ষক, চার জন সহকারী শিক্ষকসহ মোট ৪৩ জন শিক্ষককে রীতি ভেঙে ভিন্ন জেলায় বদলি করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এরপরই আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত আসে।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক
এফএইচ/বিডি
CBNA24 রকমারি সংবাদের সমাহার দেখতে হলে
আমাদের ফেসবুক পেজে ভিজিট করতে ক্লিক করুন।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেল ভিজিট করতে পোস্ট করুন।



