এমনে আর কয়দিন চলমু!
ক্রেতার অপেক্ষায় একজন পাটিশিল্পী। গতকাল মৌলভীবাজারের বড়লেখায় অপেক্ষমান অবাক চোখে তাকিয়ে থাকা বিস্ময় আর হতাশা নিয়ে।
বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বাজার। ছাতা মাথায় পানিতে পাটি নিয়ে দাঁড়িয়ে ক্রেতার জন্য অপেক্ষা করছিলেন ষাটোর্ধ্ব নিরেন্দ্র কুমার দাস। পাটি বিক্রি করে ঘোরে তাঁর সংসারের চাকা। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো ক্রেতার দেখা পাচ্ছিলেন না তিনি। এ সময় পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পাটিশিল্পী ফরিন্দ্র দাসকে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিরেন্দ্র বললেন, ‘এমনে আর কয়দিন চলমু।’
নিরেন্দ্র কুমার দাস মৌলভীবাজারের বড়লেখার তালিমপুর ইউনিয়নের হাকালুকি হাওরপারের গগড়া গ্রামের বাসিন্দা। ছোটবেলা থেকেই বাপ-দাদার কাছ থেকে শেখা এই পেশাকে আঁকড়ে ধরে কোনোমতে পরিবার নিয়ে খেয়ে-পরে তাঁর সংসার চলছিল। কিন্তু ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে হাকালুকি হাওরের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে হাকালুকি হাওরের বাংলাবাজার তলিয়ে যাওয়ায় নিরেন্দ্র কুমারের মতো অনেকে চরম বিপাকে পড়েছেন। কারণ বাজারে ক্রেতা না থাকায় পাটি বেচাকেনা প্রায় বন্ধ।
আলাপকালে নিরেন্দ্র কুমার দাস বলেন, ‘ছোটবেলা থাকি পাটি বানাইয়া বেচিয়া চলিয়ার। বাপ-দাদার কাছ থাকি এই কাম শিখছি। অন্য কোনো কাম ও জানিনা।’ তিনি বলেন, ‘একসময় পাটির চাহিদা ছিল, কিন্তু দিনে দিনে সব মানদা চলের। তার পরও কোনোমতে পরিবার নিয়ে খাইয়া-পরিয়া বাঁচিয়া আছি। কিন্তু কয়েক দিন ধরে বন্যার পানির লাগি বাজারে ক্রেতাও নাই। এরলাগি পাটি বেচাকেনা একেবারেও নাই। এ কারণে পাটি নিয়ে দাঁড়াই রইছি। যদি ক্রেতা মিলে তাইলে কম টেকায় ও পাটিটি বেচি দিমু,বেচিয়া ঘরের চাল-ডাল নিতে পারমু।’
নিরেন্দ্র কুমার দাস বলেন, ‘বন্যার পানি ঘরে উঠেছে। কোনোমতে ঘরে আছি। পানি বাড়লে অন্য জায়গায় গিয়া আশ্রয় নেওয়া লাগে। খুব কষ্টের মধ্যে আছি। এই অবস্থায় কেমনে খাই, কেমনে চলি, তা নিয়া চিন্তায় আর কোনতা খুঁজিয়া পাইনা।’
নিরেন্দ্রর পাশে থাকা ফরিন্দ্র দাস (৪৬) বলেন, ‘পাটি বিক্রি করে আমাদের পরিবার চলে। বাজারে ক্রেতা নেই। তাই আজকে আর পাটি আনিনি। খুব কষ্ট করে ধার করে চলতে হচ্ছে। জানি না কপালে কী আছে।’
নিরেন্দ্র কুমারের মতো বাজারে পলিথিনে মুড়িয়ে পাটি হাতে ক্রেতার জন্য অপেক্ষা করছিলেন রিশি কান্ত দাস (৫৫)। বাজারে ক্রেতা না থাকায় তাঁকেও অনেকটা হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।