অবিশ্বাস্য হলেও সত্য

কলকাতায় ‘মাস্টারমশাই’ পরিচয়ে ছিলেন মাজেদ

বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদ
বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদ

 

► ৩২ বছরের ছোট এক নারীকে বিয়ে করেছিলেন সন্তানও আছে
► ২২ ফেব্রুয়ারি বাড়ি থেকে বেরিয়ে লাপাত্তা হয়ে গিয়েছিলেন

কলকাতায় ‘মাস্টারমশাই’ পরিচয়ে ছিলেন মাজেদ ।। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আব্দুল মাজেদ ভারতের কলকাতায় দীর্ঘ দিন ছিলেন আলী আহমেদ পরিচয়ে। সেখানে তাঁর ভারতীয় পাসপোর্ট ছিল। তাঁর চেয়ে বয়সে ৩২ বছরের ছোট স্থানীয় এক নারীকে বিয়ে করেছিলেন। সেই স্ত্রীর ঘরে তাঁর ছয় বছর বয়সী এক কন্যাসন্তানও আছে।

গত শনিবার রাতে ঢাকায় খুনি মাজেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর গতকাল সোমবার কলকাতার বর্তমান পত্রিকা ‘ঘাতকের ডেরা’ শীর্ষক এক ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ শুরু করেছে। প্রথম প্রতিবেদনের শিরোনাম ‘বঙ্গবন্ধুর ঘাতক মাস্টারমশাই! বিশ্বাস হচ্ছে না পার্ক স্ট্রিটের সেই মহল্লার।’

প্রতিবেদনে কলকাতার পার্ক স্ট্রিটের বেডফোর্ড লেনে ঘাতক মাজেদের আত্মগোপনের দিনগুলোর বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে, ‘মহল্লা তাঁকে কখনো উচ্চৈঃস্বরে কথা বলতে দেখেনি। হিংসা-বিবাদ তো দূর-অস্ত! লোকটা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন নিয়ম করে। সেই তাদের মাস্টারমশাই নাকি বঙ্গবন্ধুর খুনি! এখনো ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না লকডাউনের পার্ক স্ট্রিট। এই পার্ক স্ট্রিটের বেডফোর্ড লেনের ভাড়া বাড়িতে থাকতেন বঙ্গবন্ধুর ঘাতক আব্দুল মাজেদ।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি আব্দুল মাজেদকে গত ৭ এপ্রিল বাংলাদেশ পুলিশ ঢাকার মিরপুরে গ্রেপ্তার করার পর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি দেখে রীতিমতো অবাক পার্ক স্ট্রিটের বেডফোর্ড লেনের বাসিন্দারা! পার্ক স্ট্রিট আবদুল মাজেদকে চেনে ‘আলী আহমেদ ওরফে ইংরেজির মাস্টারমশাই’ হিসেবে। এলাকার লোকজন জানতেন, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে পাস করেছেন ‘মাস্টার মশাই’। টিউশন পড়িয়ে সংসার চালাতেন তিনি। প্রথমে তালতলায় ভাড়া বাড়িতে একাই থাকতেন মাজেদ। পরে পার্ক স্ট্রিটে চলে আসেন।

বর্তমান পত্রিকার ওই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আব্দুল মাজেদ ২০১১ সালে তাঁর থেকে ৩২ বছরের ছোট উলুবেড়িয়ার সেলিনা বেগমকে বিয়ে করেন। তাঁদের ছয় বছরের এক মেয়ে আছে। কিছুদিন ধরেই মাজেদের শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না। গত জানুয়ারি মাসে কলকাতায় পিজি হাসপাতালে তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করান।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, আব্দুল মাজেদ গত ২২ ফেব্রুয়ারি পিজি হাসপাতাল থেকে রিপোর্ট আনতে বাড়ি  থেকে বের হন। এরপর আর ফেরেননি। কলকাতায় মাজেদের স্ত্রী (সেলিনা বেগম) ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে পার্ক স্ট্রিট থানায় নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে ডায়েরি করেন। এরপর পার্ক স্ট্রিট থানা পিজি হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ ঘেঁটেও মাজেদের খোঁজ পায়নি। তবে পুলিশ মাজেদের ভাড়া বাড়ি থেকে একটি ব্যাগ পায়। সেই ব্যাগে তল্লাশি চালিয়ে সিম কার্ড, আধার কার্ড, ভোটার আইডি কার্ড, ভারতীয় পাসপোর্ট এবং এক নারীসহ তিন শিশুর ছবি পায়।

সেলিনা বেগম পুলিশকে বলেন, ‘ব্যাগের মতো তাঁর অন্যান্য ব্যক্তিগত জিনিসে কাউকে হাত দিতে দিত না মাজেদ। মহল্লায় খুব একটা মেলামেশা করত না সে। টিউশনির পাশাপাশি বড়জোর এলাকার এক চায়ের দোকান, রেশনের দোকানে আড্ডা দিত মাজেদ। বাড়ির মূল দরজায় সব সময় তালা লাগানো থাকত। বাইরের কাউকে বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হতো না। এভাবেই ১৮-১৯ বছর কলকাতায় আত্মগোপন করেছিল আব্দুল মাজেদ।’

বর্তমান পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা ৪ মিনিটে বেডফোর্ড লেনের বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর মাজেদের যাত্রাপথের একাংশের সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশের হাতে এসেছে।

ভয়ংকর ঘাতক আব্দুল মাজেদ ভারতে লুকিয়ে থাকতে পারেন—এমন দাবি বাংলাদেশ বিভিন্ন সময় ভারতের কাছে তুলেছে। ভারত এ বিষয়ে বাংলাদেশের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য চেয়েছিল।  গত ৭ এপ্রিল ঢাকায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর প্রশ্ন উঠেছিল, পলাতক ঘাতক আব্দুল মাজেদ হঠাৎ কিভাবে দেশে এলো? জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছিলেন, হয়তো করোনাভাইরাসের ভয়ে চলে এসেছেন।

 

সিবিএনএ/এসএস


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × three =