কোন পথে সৌদির ৪ লাখ কোটি টাকার বিনিয়োগ
রুকনুজ্জামান অঞ্জন || বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে প্রায় ৫ হাজার কোটি ডলার (৪ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা) বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সৌদি আরব।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) সভায় এই প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছিল। বিনিয়োগের জন্য দুই দেশের বিভিন্ন কোম্পানির মধ্যে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকও (এমওইউ) স্বাক্ষর হয়েছিল। এখন বছরের শেষ প্রান্তিকে শোনা যাচ্ছে, ওই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে জোরদার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ সম্ভব হয়নি। কভিড-১৯ এর কারণে সৌদির বিনিয়োগ ইস্যুতে অগ্রগতির জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে কোনো সভা করতে পারেনি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রথমে পাকিস্তান ও পরে ভারত সফরে আসেন সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান। দুটি দেশের অবকাঠামোসহ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। সে সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুবরাজকে ঢাকায় আনার জন্য কূটনৈতিক চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। তবে রিয়াদ প্রশাসন ঢাকাকে আশ্বস্ত করেছিল যে, যুবরাজ না গেলেও বাংলাদেশে সৌদি আরবের বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ পরিকল্পনা রয়েছে। সৌদি আরবের মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি ঢাকা সফরে গিয়ে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করবেন। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সৌদি যুবরাজের পাকিস্তান-ভারত সফরের পর পরই গত বছরের মার্চে মন্ত্রী পর্যায়ের একটি শক্তিশালী প্রতিনিধি দলকে ঢাকায় পাঠানো হয় বড় আকারের বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে। এই সফওে সৌদি আরবের বাণিজ্য ও বিনিয়োগমন্ত্রী মাজেদ বিন আবদুল্লাহ আল কোসাইবি ও অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী মোহাম্মদ বিন মাজিদ আল-তাওজরি নেতৃত্ব দেন। ওই সময় ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে সৌদির দুই মন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছিলেন, যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণ, বিদ্যুৎ জ্বালানিসহ বড় বড় প্রকল্পে সৌদি আরবের কাছে ৩৫ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ চেয়েছে বাংলাদেশ। সম্ভাব্য বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ বেশ কিছু প্রকল্পের প্রস্তাব দিয়েছে সৌদি আরবকে। ওই প্রস্তাবগুলো নিয়ে সমীক্ষার পরই সৌদি আরব বিনিয়োগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।
যেসব প্রকল্পে বিনিয়োগ আসার কথা ছিল : ইআরডি সূত্র জানায়, মন্ত্রী পর্যায়ের সফর শেষে ঢাকা থেকে বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাছাই করা হয় সৌদি বিনিয়োগের জন্য। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দুই দেশের যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) বৈঠকে সেই প্রকল্পগুলোতে সৌদিকে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়। জানা গেছে, সৌদির জন্য বাছাই করা এই প্রকল্পগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দুটি অবকাঠামো ছিল চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকা ও কক্সবাজারের মধ্যে বুলেট ট্রেন চালুর লাইন নির্মাণ এবং ঢাকা-বরিশাল-পায়রা বন্দর হয়ে রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প।
বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা যায়, জেইসি বৈঠকে এসব প্রস্তাব তোলার পর গ্রাম পর্যায়ে রাষ্ট্রীয় টেলিটকের ফোরজি সেবা সম্প্রসারণে প্রায় ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দেয় সৌদি। এ ছাড়া বড় বিনিয়োগের জন্য সরকারের কাছে ১ হাজার একর জমি বরাদ্দ চায় দেশটির আল বাওয়ানি গ্রুপ। ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এশটি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র (সোলার আইপিপি) নির্মাণে সৌদি আরবের আলফানার কোম্পানির সঙ্গে ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ (ইজিসিবি) এবং ট্রান্সফরমার ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম উৎপাদনে সৌদি কোম্পানি ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশনের সঙ্গে চুক্তি কওে জেনারেল ইলেকট্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি। এ ছাড়া জনশক্তি রপ্তানি বিষয়ে সরকারি সংস্থা জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) ও সৌদি আরবের আল মাম ট্রেডিং এস্টেটের মধ্যে; ইউরিয়া ফরমালডিহাইড-৮৫ প্লান্ট নির্মাণে সৌদি আরবের ইউসুফ আল রাজি কনস্ট্রাকশন এস্টেট ও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন; ‘সৌদি-বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়তে সৌদি আরবের আল আফালিক গ্রুপ (এএইচ গ্রুপ) ও বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের মধ্যে; তার উৎপাদনের বিষয়ে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন (বিএসইসি) এবং রিয়াদ ক্যাবলস গ্রুপ অব কোম্পানির মধ্যে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে সৌদি আরবের প্রস্তাবিত বিনিয়োগের আকার দাঁড়ায় প্রায় ৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৪ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা।
সর্বশেষ অবস্থা : সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে সৌদি আরবের বিনিয়োগ আনার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা শুরু হলেও কভিড-১৯-সহ নানা ধরনের জটিলতার কারণে চুক্তি ও এমওইউ স্বাক্ষরের মধ্যে এখনো সীমাবদ্ধ রয়েছে বিনিয়োগ প্রস্তাবগুলো। দৃশ্যমান কোনো বিনিয়োগ ক্ষেত্র এখনো তৈরি হয়নি। জেইসি সভায় সৌদির পক্ষ থেকে প্রায় ৪ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের আশ্বাস দেওয়া হলেও সে বিষয়ে অগ্রগতি বলার মতো নয়। ইআরডির অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের যুগ্ম সচিব (মধ্যপ্রাচ্য) এ কে এম শাহাবুদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশে সৌদি বিনিয়োগের দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই সেটি বলা যাবে না। শীতলক্ষ্যা ব্রিজসহ কয়েকটি প্রকল্পে সৌদি বিনিয়োগ রয়েছে। এ ছাড়া বিএসটিআই এবং সৌদির পণ্যের মানোন্নয়ন বিষয়ক সংস্থার সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে ডকুমেন্ট চূড়ান্ত করে সম্প্রতি রিয়াদে পাঠানো হয়েছে।
তবে গত ফেব্রুয়ারিতে জেইসি সভায় দুই দেশের মধ্যে বিনিয়োগের যেসব প্রকল্প বাছাই করা হয়েছিল, সেগুলোর তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে স্বীকার করেন ইআরডির মধ্যপ্রাচ্যের দায়িত্বে থাকা এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, সৌদি বিনিয়োগ নিয়ে মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে যে ধরনের কার্যকর সংযোগ তৈরি করা দরকার ছিল কভিড-১৯ এর কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে আসছে ডিসেম্বর থেকে ভার্চুয়াল সভার মাধ্যমে সৌদি বিনিয়োগ ইস্যুগুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরুর কথা জানান তিনি। – বিডি প্রতিদিন ( কোন পথে সৌদির ৪ লাখ কোটি টাকার বিনিয়োগ )
-এস এস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন