ক্ষুধার্ত বাংলাদেশী পোশাক শ্রমিক আর বিলিয়নিয়ার কার্দাশিয়ানরা:
কাইলি ও কেন্ডাল জেনার- মেকআপ ও প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবসার জন্য কার্দাশিয়ান পরিবারের দুই বিখ্যাত সদস্য। তাদের পুরো পরিবারের মোট সম্পদের অর্থমূল্য ১৬০ কোটির বেশি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের রয়েছে কোটি কোটি অনুসারী। সেসব অনুসারীদের উদ্দেশে প্রায়ই আকর্ষণীয় পোস্ট দিয়ে থাকেন তারা। একে অন্যের পোস্টে নানাভাবে প্রচারণা চালান। কিন্তু এসব পোস্ট, কমেন্টের পেছনে লুকিয়ে আছে ভয়াল এক সত্য। কাইলি ও কেন্ডালের মতো তারকা ও ব্যবসায়ীদের কাছে বিশ্বজুড়ে পোশাক শিল্প প্রস্তুতকারীদের অগণিত বিল বাকি রয়েছে। এসব বিল না পেয়ে অনাহারের মুখে পতিত হয়েছেন বহু পোশাক কর্মী।
কাইলি ও কেন্ডাল জেনারের প্রতিষ্ঠান কেন্ডাল + কাইলির মালিকানা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ব্র্যান্ডস গ্রুপ তাদের পোশাক শিল্প সরবরাহকারীদের গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চে অর্ডার করা পণ্যের জন্য অর্থ পরিশোধ করেনি।
করোনা ভাইরাস মহামারিতে বিক্রি কমে যাওয়ায় ওই পণ্যের মূল্য পরিশোধে অস্বীকৃতি জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। গ্লোবাল ব্র্যান্ডসের প্রধান নির্বাহী রিক ডার্লিং গত ২১শে মার্চ এক চিঠিতে লিখেন, বিদ্যমান পরিস্থিতির অননুমেয় অবস্থা বিবেচনায় আমরা আমাদের খুচরা সহযোগীরা অর্ডার বাতিল করেছে এবং মজুদ থাকা পণ্য ও উৎপাদনে থাকা পণ্য বিক্রি না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যার ফলে, আমাদের কাছে চলতি বছরের জন্য সকল সরবরাহীকে দেয়া সকল অর্ডার বাতিল করা ব্যতিত অন্যকোনো উপায় নেই।
কিন্তু আদতে গ্লোবাল ব্র্যান্ডসের কাছে উপায় আছে। তারা সে উপায় বেছে নিচ্ছে না। করোনা মহামারিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষ্ণাঙ্গরা। ফ্যাশন, ব্র্যান্ড ও খুচরা বিক্রেতারা গত ফেব্রুয়ারি থেকেই গণহারে উৎপাদিত ও উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় থাকা অর্ডার বাতিল করেছে। তাদের অর্ডার বাতিলের কারণে তারল্য সংকটে পড়েছে পোশাক কারখানাগুলো। এসব কারখানার বেশিরভাগ কর্মীই নারী। তাদের প্রত্যেকের অবস্থাই বিপন্নপ্রায়। কাজ শেষেও বেতন পায়নি তারা। এই পরিস্থিতি তাদের প্রায় নিশ্চিত অনাহারে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। এই সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়াদের তালিকায় কাইলি ও কেন্ডাল ছাড়াও আরো অনেকে রয়েছেন।
গ্লোবাল ব্র্র্যান্ডস গ্রুপের মালিকানাধীন অপর একটি প্রতিষ্ঠান পি. ডিডি’র শন জিন লাইন। সম্প্রতি পি ডিডি সংখ্যালঘু উদ্যোক্তাদের সহায়তা করতে ‘আওয়ার ফেয়ার শেয়ার’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম চালু করেছেন। করোনা মহামারির সময়ে ওইসব উদ্যোক্তাদের প্ল্যাটফর্মটি থেকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশ-ভিত্তিক ডেনিম এক্সপার্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, গ্লোবাল ব্র্যান্ডসের কাছে কয়েক লাখ ডলার পাওনা তিনি। গত ফেব্রুয়ারিতে সরবরাহ করা পণ্যের বিল এখনো পরিশোধ করেনি গ্লোবাল ব্র্যান্ডস। গত ১৩ই এপ্রিল মোস্তাফিজ গ্লোবাল ব্র্যান্ডসের কাছে আকুতি করেন, আমার কর্মীরা ক্ষুধার্ত, তারা ক্ষুব্ধ, অত্যন্ত রাগান্বিত। আমি তাদের মজুরি পরিশোধের প্রতিশ্রুতি করেছি। দয়া করে আমার পাওনা অর্থ পরিশোধ করুন।
গত মার্চে রিম্যাক অর্ডার বাতিলের দায়ে কয়েক ডজন ব্র্যান্ডকে দায়ী করতে #পেআপক্যা¤েপইন নামে একটি প্রচারণা চালু করে। কেবল বাংলাদেশেই পোশাক কারখানায় কাজ করেন ৪১ লাখ কর্মী। এদের সংখ্যাগরিষ্ঠই নারী। ইউরোপ ও আমেরিকায় করোনা ছড়িয়ে পড়ার পর বিভিন্ন ব্র্যান্ড বাংলাদেশ থেকে ৩১৮ কোটি ডলারের অর্ডার বাতিল করে। তবে এ সমস্যা কেবল বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই ঘটেনি, অর্ডার বাতিলের ধারাবাহিকতা পুরো বিশ্বজুড়েই বিদ্যমান।
পোশাকজাত পণ্যগুলো মানুষের হাতে তৈরি। পোশাককর্মীদের বেশিরভাগই কৃষ্ণাঙ্গ ও বাদামী বর্ণের নারী। তারা প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা কাজ করে। প্রতি মজুরির উপর ভিত্তি করে তাদের জীবন চলে। করোনা মহামারি তাদের জীবন ও জীবিকা উভয়ের উপরই আঘাত হেনেছে। অল্পকিছু অর্ডার নিয়েই কারখানা খুলেছে কিছু কারখানা। উপায় না পেয়ে কাজে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন পোশাককর্মীরা। এখনো অনেক ব্র্যান্ড ফেব্রুয়ারি ও মার্চের বাকি থাকা অর্থ পরিশোধ করেনি। এমতাবস্থায় কাজে ফিরে নিজেদের স্বাস্থ্য ও জীবন ঝুঁকিতে ফেলছেন অনেক নারী পোশাককর্মী।
বাংলাদেশের এক পোশাককর্মী বলেন, কারখানার গেটে যাওয়ার পর তারা আমাদের চলে যেতে বললো। জানালো, ভাইরাসের জন্য কারখানা বন্ধ। সেসময় আমার কাছে সবমিলিয়ে মাত্র ৬ ডলার ছিল। শ্রীলংকায় শিল্পাঞ্চলে বেতনের অপেক্ষায় আটকা পড়া এক নারী, তার সদ্যজাত সন্তানদের দুধের বদলে চা খাওয়াতে বাধ্য হয়েছেন। ক্যাম্বোডিয়া, পাকিস্তান, হাইতি বা এল সালভাদরেও একই রকম পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন অনেকে।
সূত্রঃ মানবজমিন
বাঅ/এমএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন