জঙ্গি সমর্থন বিষয়ে বাইডেন কী বলবেন!
তাঁর ‘হকিশ ক্যাবিনেটে’ কারা কারা থাকবেন সেটা জানিয়েছেন জো বাইডেন। এ ধারণা পাওয়া কঠিন নয় যে সরকার বদলে গৌরবান্বিত দিনে ফিরে যাচ্ছি আমরা। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করত, তাদের পবিত্র দায়িত্ব হচ্ছে (তার পথে যে বাধা হয়ে দাঁড়াবে) যেকোনো সরকারকে ফেলে দেওয়া। এও মনে হচ্ছে, আমরা সেই সময়ে ফিরে যাচ্ছি, যখন জিহাদি সন্ত্রাস আমেরিকাকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছিল। যখন সন্ত্রাস ছিল তখন আমেরিকা খুব একটা বিরক্ত ছিল না, অসন্তুষ্ট ছিল না।
এসব কথা মনে রাখতে হবে এবং তার নিরিখেই বাইডেনের একটি কথার পর্যালোচনা দরকার, তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেন হার্ভার্ডের কেনেডি স্কুলে ২০১৪ সালের অক্টোবরে কথাটি বলেছিলেন। আপনি যদি গোবরমাথার কোনো রাজনীতিকের সীমাহীন ভড়ভড়ানি শুনতে চান, তাহলে তা শুনতে পারেন। কিন্তু আপনি যদি ঘানির বলদ না হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি ‘স্লিপি জো’র দিকে তাকাতে পারেন; তাঁর কিছু ভাবনার দিকে মনোযোগ দিতে পারেন, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য পার্টনারদের বিষয়ে তাঁর ভাবনার বিষয়ে মনোযোগ দিতে পারেন—সেসব চিন্তা-ভাবনায় আইএসআইএস বা আল-কায়েদার প্রতি তাঁর অফুরান ভালোবাসার কথা আছে।
বিষয়টি ছিল মার্কিন-সৌদি আঁতাত। তারা উভয়ে মিলে সচেষ্ট ছিল সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে। এখানেই যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কী বলতে চান তার প্রসঙ্গ আসে—
সৌদি, আমিরাত প্রভৃতি দেশ কী করছে! তারা আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে উঠেপড়ে লেগেছিল এবং শিয়া-সুন্নি ছায়াযুদ্ধ দেখতে চেয়েছিল। তারা শত লক্ষ ডলার জোগান দিয়েছে এবং হাজার হাজার টন অস্ত্র দিয়েছে যারে-তারে—যারা আসাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। যাদের এসব অর্থ-অস্ত্র সরবরাহ করা হচ্ছিল তারা আল-নুসরা, আল-কায়েদা এবং পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা জিহাদিদের চরমপন্থী অংশ। অতঃপর কী ঘটছে এখন? হঠাৎ করেই প্রত্যেকেই সজাগ হলো, কারণ আইএসআইএল নামের সংগঠনটি যেটি ছিল ইরাকের আল-কায়েদা, তারা যখন ইরাক থেকে উত্খাত হলো তখন তারা উন্মুক্ত স্থান পেল সিরিয়ার পূর্বাংশে। তারা আল-নুসরার সঙ্গে কাজ করল, যাকে আগেই সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আমরা ঘোষণা করেছি। তাদের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার ব্যাপারে আমরা আমাদের সহকর্মীদের বোঝাতে পারিনি। অতঃপর কী ঘটল?
এখন আমরা হঠাৎ করে দেখলাম, তারা (সৌদি) যেন ঈশ্বরকে দেখতে পেল; সৌদি আরব অর্থের জোগান বন্ধ করে দিল। তবে তারা নিজেদের মাটিতে তাদের প্রশিক্ষণ করতে দিচ্ছে। কাতারিরা সবচেয়ে চরমপন্থী সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে সমর্থন জোগানো বন্ধ করেছে। তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান আমাকে বলেছেন, তাঁর এক পুরনো বন্ধু (আমাকে) বলেছে, ‘তুমি ঠিক বলেছ, আমরা অনেক লোককে (জঙ্গিকে) আমাদের দেশের ভেতর দিয়ে সীমান্ত পার হতে দিয়েছি।’ এরদোয়ান সীমান্ত সিল করে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
এজাতীয় শব্দ বেশ মজার, কারণ এগুলো বছরের পর বছর ধরে মার্কিন এক্সেপশনালিজম বিষয়ক প্রচারণাকে, যুক্তরাষ্ট্র যে শুভশক্তি সেই প্রচারণাকে আন্ডারমাইন করে। ওবামা বলতেন, তিনি গোত্রবাদী প্রবণতার বিরোধী। তখন তাঁর সেকেন্ড ইন কমান্ড (বাইডেন) বলতেন, যুক্তরাষ্ট্র আসাদকে শুধু হটাতেই চায় না, তারা চায় শিয়া-সুন্নি ছায়াযুদ্ধ বাধিয়ে আসাদকে হটাতে। অন্যভাবে বলা যায়, তারা চেয়েছিল হাজার হাজার গোঁড়া ও পরমতবিদ্বেষী সুন্নি কল্লা-কোপা জঙ্গিকে জড়ো করতে; তাদের উদ্দেশ্য ছিল মধ্যপ্রাচ্যের ধর্মীয় বৈচিত্র্যপূর্ণ একটি দেশের আলাভী সম্প্রদায়ের প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করতে।
ওবামা দাবি করতেন, তিনি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে; কিন্তু একই সঙ্গে তিনি দৃঢ়ভাবে আল-কায়েদা যে পশ্চিমের সৃষ্টি এমন কোনো কথা অস্বীকার করতেন। পরের বাক্যেই বাইডেন বলতেন, সৌদি আরব অ্যান্ড কম্পানি আল-নুসরা ও আল-কায়েদার ঝোলায় শত মিলিয়ন ডলার পুরেছে এবং হাজার হাজার টন অস্ত্র তাদের ঝোলায় দিয়েছে। পরক্ষণেই বলতেন, ‘আমরা আমাদের সহযোগীদের অস্ত্র ও অর্থ সরবরাহ বন্ধ করতে বলতে পারি না।’
ফল হলো এই, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবাদ হওয়া সত্ত্বেও তারা আল-কায়েদাকে অর্থ-অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখল এবং বিষয়টা একেবারেই গোপন রাখা হলো। আর বাইডেন বলতে লাগলেন, ‘সৌদিরা আলো দেখতে পেয়েছে (এর জন্য আল-কায়েদার শাখা হিসেবে পরিচিত আইএসআইএস বা আইএসআইএলের নাটকীয় উত্থানকে ধন্যবাদ)। বাইডেনের শব্দচয়ন ছিল খুব কৌতূহলজনক। তিনি বলতেন, ‘কাতার চরম জঙ্গি উপাদানগুলোকে সমর্থন করা বন্ধ করে দিয়েছে; সঙ্গে এ কথাও বলতেন, ‘তুরস্ক তাদের সীমান্ত দিয়ে প্রচুর জঙ্গিকে পার হতে দিয়েছে, এখন তারা দরজাটি বন্ধ করার চেষ্টা করছে, তবে ঘোড়াটি পালিয়ে যাওয়ার পর।’
কাতার এখনো কিছু আল-কায়েদাসংশ্লিষ্ট গ্রুপকে অর্থ সরবরাহ করছে, যাতে তারা সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয়ে না পড়ে। তুরস্ক তার সীমান্ত দিয়ে অনেক লোককে পার হতে দিয়েছে। এসব কথার মাধ্যমে বাইডেন যা বোঝাতে চেয়েছেন তা হলো, ‘তুরস্ক আল-কায়েদার লোকদের পার হতে দিয়ে ঠিক কাজ করেছে। কাতারও। এই লোকগুলোর কারণে কি গাজন নষ্ট হচ্ছিল?’
হাজার হাজার লোককে হত্যা করা, ইয়াজিদি নারীদের ধর্ষণ করা এবং তাদের দাসে পরিণত করা, ভয়ংকর ধর্মতন্ত্র চাপিয়ে দেওয়া—এ কাজগুলো অনুমোদনযোগ্যে যদি এসব কর্মকাণ্ড সিরিয়া ও ইরাকে সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু তা সৌদি আরবে হুমকি তৈরি করলে তো চলে না! সৌদিদের সরাসরি সমর্থন কমানোর এটাই কারণ। হার্ভার্ডের ছাত্ররা বাইডেনের মুখে এসব কথা শুনেও দুয়ো দেয়নি, রঙের বালতি ছুড়ে মারেনি; বরং ভদ্র কায়দায় করতালি দিয়েছে। আর ওবামা ফোন করেছেন রিয়াদ, আবুধাবি, আংকারা প্রভৃতি জায়গায় ব্যক্তিগত অনুশোচনা প্রকাশ করে—ভুল স্বীকারের জন্য নয়; বরং এসব বিষয়ে (বাইডেনের) প্রগলভ কথা বলার জন্য। ভাইস প্রেসিডেন্টরা কোন কথা প্রকাশ্যে বলা যাবে আর যাবে না তা জানবেন বলেই ধারণা করা হয়।
জর্জ ডাব্লিউ বুশ বলতেন, যারা আমাদের পক্ষে নেই তারা অবশ্য জঙ্গিদের/সন্ত্রাসীদের পক্ষে। তখন থেকে মার্কিন নীতি এ রকমই। এরপর কিন্তু রিপোর্টাররা প্রেসিডেন্ট-ইলেক্টকে (বাইডেন) প্রশ্ন করতে পারেন, তিনি এখনো এই ডকট্রিন সমর্থন করেন কি না, প্রশ্ন করতে পারে তিনি সৌদি আরব, কাতার, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবেন কি না। বাস্তবতা হলো, সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার সম্ভাবনা শূন্য; একই সঙ্গে এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমও এ প্রশ্ন তুলবে কি না তার সম্ভাবনাও শূন্য। সৌদিরা হয়তো জঙ্গি/সন্ত্রাসী; কিন্তু তারা আমেরিকার সন্ত্রাসী—সেটাই মূল কথা।
লেখক : আমেরিকান ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ( জঙ্গি সমর্থন বিষয়ে বাইডেন কী বলবেন! )
প্রকাশক ও ব্লগার
সূত্র : স্ট্র্যাটেজিক কালচার অনলাইন
ভাষান্তর ও সংক্ষেপণ : সাইফুর রহমান তারিক
-এস এস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন