জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে জাতীয় শোক দিবস ২০২৩ পালন
নিউইয়র্ক, ১৫ আগস্ট ২০২৩: “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারানোর শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে আমাদের সকলের একযোগে কাজ করার বিকল্প নেই।” আজ জাতীয় শোক দিবস ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদত বার্ষিকী পালন উপলক্ষে নিউইয়র্কস্থ জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত।
স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় মিশনস্থ বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে যথাযোগ্য মর্যাদায় ও অত্যন্ত ভাবগম্ভীর পরিবেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস পালন অনুষ্ঠান আয়োজন করে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন। এতে যুক্তরাষ্ট্র বসবাসরত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন এবং বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি অংশগ্রহণ করেন। জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হয় দিবসটির কর্মসূচি। এরপর জাতির পিতা, বঙ্গমাতা এবং ১৫ আগস্টের সকল শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে একমিনিট নিরবতা পালন করা হয় এবং তাঁদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করা হয়।
বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পনের মাধ্যমে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিতসহ উপস্থিত সকল অতিথিবৃন্দ। অতপর দিবসটি উপলক্ষে দেওয়া মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করে শোনানো হয়। জাতির পিতার জীবন ও কর্মের উপর নির্মিত একটি প্রামাণ্য ভিডিও প্রদর্শন করা হয় এ পর্বে। এর পর শুরু হয় জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা। এতে বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃত্ববৃন্দ বক্তব্য প্রদান করেন।
স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মুহিত তার বক্তব্যে বলেন, “বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন দেশ। তাঁর ঐন্দ্রজালিক নেতৃত্বে স্বাধীনতা লাভের মাত্র সাড়ে তিন বছরে আমরা বিশ্বের ১০০টির বেশি দেশের স্বীকৃতি পেয়েছি। জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ লাভ করেছি এবং বিশ্ব পরিমন্ডলে একটি অত্যন্ত মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছি। এমন একজন মহান ও বিশ্বনন্দিত নেতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি পৃথিবীর ইতিহাসে সেদিন সবচেয়ে বর্বোরোচিত ঘটনার জন্ম দিয়েছে। এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত যারা এখনো বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছে, তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে বিচারকার্য সম্পন্ন করে জাতিকে কলংকমুক্ত করতে আসুন আমরা সরকারের প্রতি আমাদের সহযোগিতা আরো বর্ধিত করি।”
জাতীয় শোক দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত মুহিত আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গঠনে দেশে ও বিদেশে আমাদের সমানভাবে কাজ করে যেতে হবে। একটি সুখী-সমৃদ্ধ-শান্তিপূর্ণ দেশ বিনির্মাণে এগিয়ে আসতে হবে। “এ স্বাধীনতা আমার ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি আমার বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না খায়। এই স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পায়। এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি এদেশের মানুষ যারা আমার যুবক শ্রেণী আছে তারা চাকরি না পায় বা কাজ না পায়”-বঙ্গবন্ধুর এই উদ্ধৃতি তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত মুহিত জাতি, বর্ণ, ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে একযোগে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় কাজ করার আহবান জানিয়ে তার বক্তব্য শেষ করেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠণের নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত দন্ডপ্রাপ্ত খুনীদের মধ্যে যারা এখনও বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত সকল প্রবাসী বাংলাদেশীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তারা বলেন, “আমরা চাই জাতির পিতার কোনো খুনীই যেন বিচারের হাত থেকে পার না পায়”। বক্তাগণ পনের আগস্টের এই শোককে শক্তিতে রূপান্তর করার মাধ্যমে জাতির পিতা যে স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন স্ব স্ব অবস্থান থেকে তা অর্জনের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।