শেখ হাসিনা সভানেত্রী কাদেরই সম্পাদক
।।আজ সম্মেলনে প্রেসিডিয়াম যুগ্ম সাংগঠনিক ও সম্পাদকীয় পদে পরিবর্তন, ’৮১ সালের পর থেকে দুঃসময়ের নেতাদের মূল্যায়ন।।
অমরেশ রায় ।।
‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে/বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে গড়তে সোনার দেশ/এগিয়ে চলেছি দুর্বার, আমরাই তো বাংলাদেশ’- এই স্লোগান নিয়ে আজ শুক্রবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুরু হচ্ছে আওয়ামী লীগের ২১তম ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী বছরব্যাপী ‘মুজিববর্ষে’র অনুষ্ঠানমালাকে বর্ণাঢ্য রূপ দিতে এ সম্মেলনের আয়োজন ‘সাদামাটা’ হবে বলে জানিয়েছেন দলটির সংশ্নিষ্ট নেতারা।
তবে চলমান দুর্নীতিবিরোধী ও শুদ্ধি অভিযানের লক্ষ্যপূরণে দলেও খোলনলচে পাল্টে নতুন গতি আনার আলোচনা থাকায় এ সম্মেলনই আওয়ামী লীগের ইতিহাসে সবচেয়ে ‘চমকের’ সম্মেলন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দেশের সবচেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক দলটির দু’দিনের এ সম্মেলন রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশেই দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও উৎসবের আমেজ তৈরি করেছে। দেশবাসীর দৃষ্টিও এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আজ বিকেল ৩টায় জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং বেলুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলন উদ্বোধন করবেন। এ সময় দলীয় পতাকা উত্তোলন করবেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সম্মেলন মঞ্চের দু’পাশে দাঁড়িয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করবেন ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরাও।
উদ্বোধনের পর ২৫ মিনিটের সাংস্কৃতিক পর্বে উদ্বোধনী সংগীতে তুলে ধরা হবে আওয়ামী লীগের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সরকারের উন্নয়ন ও সাফল্য। এই পর্বে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ছাড়াও দেশবরেণ্য শিল্পীরা গান গাইবেন। শিবলী মোহাম্মদ ও শামীম আরা নীপা নৃত্য পরিবেশন করবেন। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হবে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা। অভ্যর্থনা উপপরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ নাসিম স্বাগত বক্তব্য দেবেন। সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট উত্থাপন করবেন ওবায়দুল কাদের। শোকপ্রস্তাব উত্থাপন করবেন দলের দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। উদ্বোধনী অধিবেশন শেষে সন্ধ্যায় বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। আগামীকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে কাউন্সিল অধিবেশনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে।
আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার সাত হাজার ৩৩৭ জন কাউন্সিলর ও সমসংখ্যক ডেলিগেটসহ বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী কাউন্সিলের উদ্বোধনী অধিবেশনে অংশ নেবেন। বিএনপি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে এ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে ‘যুদ্ধাপরাধীদের দল’ হিসেবে চিহ্নিত জামায়াতে ইসলামীর কাউকে ডাকা হয়নি। পেশাজীবী সংগঠনের শীর্ষ নেতা, খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবী, কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ ১৫ হাজার বিশেষ আমন্ত্রিত অতিথিও সেখানে আসবেন। তবে প্রতিবছর বিদেশি রাজনৈতিক দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও সামনে ‘মুজিববর্ষে’র অনুষ্ঠানমালা থাকায় জাতীয় সম্মেলনে বিদেশি প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তবে ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ কাউন্সিলে উপস্থিত থাকবেন।
আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলন হয়েছিল ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, বর্তমান কমিটির তিন বছরের মেয়াদ শেষ হয়েছে চলতি বছরের ২১ অক্টোবর। এর আগে অক্টোবরে নির্ধারিত সময়েই সম্মেলন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পরে সম্মেলনের তারিখ পিছিয়ে ২০ ও ২১ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়।
প্রস্তুত সম্মেলন মঞ্চ :আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি এবং ১১টি উপকমিটি সম্মেলন-সংক্রান্ত যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েছে। সম্মেলন মঞ্চ ও প্যান্ডেল নির্মাণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সাজসজ্জা শেষ হয়েছে। সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট, শোকপ্রস্তাব এবং দলীয় গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রের খসড়া সংশোধনী প্রস্তাব ছাপাসহ আনুষঙ্গিক কাজও শেষ হয়েছে।
পদ্মার বুকে পালতোলা নৌকার আদলে তৈরি করা হয়েছে সম্মেলনের মূল মঞ্চ। ১০২ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪০ ফুট প্রস্থের ডিজিটাল মঞ্চটি এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে, যেন পদ্মার প্রমত্ত জলরাশিতে ভেসে বেড়াচ্ছে বিশাল এক নৌকা, দিগন্তছোঁয়া স্রোতমালায় দুলছে ছোট ছোট নৌকা। মূল মঞ্চের সামনে সাংস্কৃতিক পর্বের জন্য থাকছে সম্প্রসারিত আরেকটি মঞ্চ। এর প্যান্ডেল নির্মিত হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর আদলে। এতে পুরো পদ্মা সেতুসহ দুই পাশের চর, টোলপ্লাজা, উন্মুক্ত আকাশ ও কাশবনের উপস্থিতি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
বিজয়ের মাসে সম্মেলন হওয়ায় মূল মঞ্চের পেছনে থাকবে জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রতিকৃতি। এর ওপরে জাতীয় পতাকা ছাড়াও থাকছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। মঞ্চের বাঁ দিকে থাকবে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হকসহ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশের প্রতিকৃতি। ডান দিকে থাকবে জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানের প্রতিকৃতি। ‘স্বর্ণোজ্জ্বল অতীত/অদম্য উন্নয়নের বর্তমান/বিশ্বজয়ের লক্ষ্যে আগামী’ স্লোগান লেখা সম্মেলন মঞ্চে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ছবি শোভা পাবে। আওয়ামী লীগের পতাকাও থাকবে মঞ্চের ডিজিটাল ব্যানারে।
সম্মেলন অঙ্গনেও থাকবে আওয়ামী লীগের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্মারক। সচিত্র বিবরণের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক কার্যক্রম। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ছবিও থাকবে। বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ছাড়াও সেখানে থাকবে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা শেখ রেহানা, বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা হোসেন পুতুল ও রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির ছবি। আওয়ামী লীগের সাবেক চার সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান, আবদুর রাজ্জাক, আবদুল জলিল ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে দলীয় সভাপতির সাংগঠনিক কার্যক্রমের চিত্রও তুলে ধরা হবে। থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ বিভিন্ন দেশের প্রধান ও বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ছবি। এ ছাড়া প্রবেশমুখে বর্ণাঢ্য তোরণ এবং সম্মেলন মাঠে ব্যানার ও ফেস্টুনে সরকারের বিভিন্ন মেগাপ্রকল্প ও উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরা হবে। সম্মেলনস্থলে ২৮টি এলইডি পর্দায় দেখানো হবে পুরো অনুষ্ঠান।
সম্মেলন সুষ্ঠু করে তুলতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি দলীয় উদ্যোগেও কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। সার্বিক নিরাপত্তা ও নেতাকর্মীদের সহায়তা দিতে দলীয়ভাবে সম্মেলনস্থলের ভেতরে ও বাইরে দুই হাজার স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করবেন। ৪৫ হাজার নেতাকর্মীর আপ্যায়নে আট বিভাগের জন্য মোট ১২টি বুথ রাখা হবে। ১০০ জন চিকিৎসক ও অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামের সমন্বয়ে চারটি প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্রও স্থাপন করা হবে। আগত ২৫ হাজার অতিথিকে পাটের ব্যাগ উপহার দেওয়া হবে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ইতিহাস সংবলিত একটি স্মরণিকা, শোকপ্রস্তাব, দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ভাষণ থাকবে। সম্মেলনের সার্বিক কার্যক্রম তুলে ধরতে এর মধ্যেই একটি ওয়েবসাইট খোলা হয়েছে।
এবারের সম্মেলনে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় চার কোটি টাকা। মূলত সম্মেলন মঞ্চ ও প্যান্ডেল নির্মাণ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন ভাড়া, তোরণ নির্মাণ, দু’দিনের আপ্যায়ন, পোস্টার-ফেস্টুনসহ বিভিন্ন প্রকাশনার জন্য এ অর্থ ব্যয় করা হবে। দলের নিজস্ব তহবিল থেকে এ অর্থের জোগান দেওয়া হয়েছে।
নতুন নেতৃত্ব :সাত দশকের পুরোনো রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে এবারও শেখ হাসিনা বহাল থাকবেন। তিনি অবসরের ইচ্ছা প্রকাশ করলেও দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা তা মানবেন না, এটা নিশ্চিত। তাই নবমবারের মতো দলীয় প্রধানের দায়িত্ব নিতে হবে তাকেই। এর আগে ১৯৮১, ১৯৮৭, ১৯৯২, ১৯৯৭, ২০০২, ২০০৯, ২০১২ ও ২০১৬ সালে তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন।
তবে দলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ সাধারণ সম্পাদক নিয়ে রয়েছে নানা আলোচনা। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, নাকি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নতুন কেউ আসবেন- তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন এলে সে ক্ষেত্রে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আইন সম্পাদক ও গণপূর্তমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম, দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান প্রমুখের নাম আলোচনায় রয়েছে।
গত তিনটি সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে কিছু পরিবর্তন এলেও এবার বেশ কিছু ক্ষেত্রে রদবদলের খবর পাওয়া যাচ্ছে। শীর্ষ নেতারা বলছেন, নিষ্ফ্ক্রিয় ও বিতর্কিতদের বাদ দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে নতুন মুখ আসবে। কয়েকজনের পদ বদল হতে পারে। কেউ কেউ পদোন্নতিও পেতে পারেন।
এবারের সম্মেলনে দলীয় গঠনতন্ত্রে খুব বেশি সংশোধনী আসছে না। তবে আলোচিত সংশোধনী হিসেবে কেন্দ্রীয় উপকমিটির ‘সহসম্পাদক’ পদ বাতিলের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যসংখ্যা ৪১ থেকে বাড়িয়ে ৫১ করা, জেলা-উপজেলা কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের আকার সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া, দলের সহযোগী সংগঠন ‘আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের’ নাম পাল্টিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ’ রাখা, দলীয় প্রাথমিক সদস্যপদের আবেদন ও নবায়নের ক্ষেত্রে সংশ্নিষ্টদের পরিচয়ের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও ফোন নম্বর সংযুক্ত করাসহ আরও কিছু ছোটখাটো সংশোধনীও আনা হচ্ছে। দলের ঘোষণাপত্রেও কিছু সংযোজন-বিয়োজন থাকছে।
দল ঢেলে সাজানোর চ্যালেঞ্জ :এবারের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন নেতৃত্ব তুলে আনার পাশাপাশি দলকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলমান দুর্নীতিবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের প্রেক্ষাপটে এ সম্মেলন ভিন্নমাত্রাও পেয়েছে। ইতোমধ্যে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে ও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোতে সম্মেলনের মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন ও স্বচ্ছ ইমেজের নতুন নেতৃত্ব গড়ে তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সম্মেলনেও এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের সামনে এখন নির্বাচনী ইশতেহারে বর্ণিত উন্নয়ন এবং দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলে সুশাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ। দলীয় ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বিধান, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উন্নয়ন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার অবসান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখা, তথ্যপ্রযুক্তি ও আইসিটি খাতের সম্প্রসারণ, বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন, ব্লু ইকোনমি-সমুদ্রসম্পদভিত্তিক উন্নয়ন, বেসরকারি খাত ও বাজার ব্যবস্থার সম্প্রসারণ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গণতন্ত্র, কার্যকর সংসদ ও গণমুখী দক্ষ জনপ্রশাসন গড়ে তোলা- এমন সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করার প্রত্যয়ও নেওয়া হবে জাতীয় সম্মেলনে। রয়েছে রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যও।
এ সম্মেলনকে ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যেও বিপুল প্রত্যাশা রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম দেশবাসীর মধ্যে স্বস্তি এনেছে। দলের আগামী নেতৃত্ব সরকারের সহযোগী হয়ে এ কর্মযজ্ঞকে এগিয়ে নেবে- এমনই প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের। তারা এ-ও প্রত্যাশা করছেন, নতুন নেতৃত্ব গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেবে।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের নির্বাচন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের নির্বাচন ও ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার মধ্য দিয়ে আজকের অবস্থানে আসা আওয়ামী লীগের এর আগে সম্মেলন হয়েছে ১৯৫৩, ১৯৫৫, ১৯৫৭, ১৯৬৪, ১৯৬৬, ১৯৬৮, ১৯৭০, ১৯৭২, ১৯৭৪, ১৯৭৬, ১৯৭৭, ১৯৭৮, ১৯৮১, ১৯৮৭, ১৯৯২, ১৯৯৭, ২০০২, ২০০৯, ২০১২ ও ২০১৬ সালে।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার কেএম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি, শামসুল হককে সাধারণ সম্পাদক, কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমানকে যুগ্ম সম্পাদক ও ইয়ার মোহাম্মদ খানকে কোষাধ্যক্ষ করে আওয়ামী লীগের যাত্রা শুরু হয়।
আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে টানা আটবার দায়িত্ব পালন করে আসছেন শেখ হাসিনা। এ ছাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চারবার, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী চারবার, মওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ দুবার, এ এইচ এম কামারুজ্জামান, মহিউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন, আবদুল মালেক উকিল ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী একবার করে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের (বাকশাল) চেয়ারম্যান ছিলেন। জিল্লুর রহমান, শেখ ফজলুল হক মনি ও আবদুর রাজ্জাক ছিলেন সেক্রেটারি জেনারেল।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বঙ্গবন্ধু পাঁচবার, জিল্লুর রহমান চারবার, তাজউদ্দীন আহমদ ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী তিনবার, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও আবদুর রাজ্জাক দুবার এবং শামসুল হক, আবদুল জলিল ও ওবায়দুল কাদের একবার করে দায়িত্ব পালন করেছেন।