সোমবার রাত ১০টার দিকে ডুবে যাওয়া লঞ্চ থেকে এই ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয় -একাত্তর টিভি থেকে নেওয়া ছবি
রাজধানীর বুড়িগঙ্গা নদীতে লঞ্চডুবির ১২ ঘণ্টা পর এক ব্যক্তিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার রাত ১০টার দিকে ওই ব্যক্তিকে ডুবে যাওয়া লঞ্চ থেকে ‘জীবিত’ অবস্থায় উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা কামরুল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, লঞ্চ দুর্ঘটনার ১২ ঘণ্টা পর এক ব্যক্তিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘১০টা ১০ মিনিটের দিকে কুশন পদ্ধতি ব্যবহার করে জাহাজ ভাসানোর চেষ্টা করা হলে সম্ভবত ইঞ্জিনরুম খুলে যায়। সে সময় তিনি বের হয়ে আসেন। এবং উদ্ধারকর্মীরা তাকে উদ্ধার করেন।’
জানা গেছে, উদ্ধার ব্যক্তির নাম সুমন ব্যাপারী। তার বাড়ি মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ীর আব্দুল্লাহপুর।
সোমবার সকালে মুন্সিগঞ্জ থেকে আসা ‘এমভি মর্নিং বার্ড’ নামের একটি ছোট লঞ্চ অন্য একটি লঞ্চের ধাক্কায় বুড়িগঙ্গায় ডুবে যায়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত তাদের মধ্যে ৩০ জনের পরিচয় মিলেছে। তারা হলেন- সত্যরঞ্জন বনিক (৬৫), মিজানুর রহমান (৩২), শহিদুল (৬১), সুফিয়া বেগম (৫০), মনিরুজ্জামান (৪২), সুবর্ণা আক্তার (২৮), মুক্তা (১২), গোলাম হোসেন ভুইয়া (৫০), আফজাল শেখ (৪৮), বিউটি (৩৮), ছানা (৩৫), আমির হোসেন (৫৫), মো. মহিম (১৭), শাহাদাৎ (৪৪), শামীম ব্যাপারী (৪৭), মিল্লাত (৩৫), আবু তাহের (৫৮), দিদার হোসেন (৪৫), হাফেজ খাতুন (৩৮), সুমন তালুকদার (৩৫), আয়শা বেগম (৩৫), হাসিনা রহমান (৪০), আলম বেপারী (৩৮), মোসা. মারুফা (২৮), শহিদুল হোসেন (৪০), তালহা (২), ইসমাইল শরীফ (৩৫), সাইফুল ইলাম (৪২), তামিম ও সুমনা আক্তার।
খুব কাছ থেকে মৃত্যু দেখেছেন তারা
বুড়িগঙ্গার তীরে লঞ্চডুবিতে নিহতের স্বজনের আহাজারি -ফোকাস বাংলা
শতাধিক যাত্রী নিয়ে সোমবার সকালে কাঠপট্টির লঞ্চঘাট থেকে ঢাকার সদরঘাটের উদ্দেশে রওনা হয় মর্নিং বার্ড নামের লঞ্চটি। বেঁচে যাওয়া যাত্রী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেছেন, মিরকাদিম পৌরসভার এনায়েতনগর এলাকায় তার বাড়ি। গত ৮ বছর ধরে কাঠপট্টি থেকে লঞ্চে ঢাকায় আসা যাওয়া করে বঙ্গবাজারে কাপড়ের দোকানে কাজ করছেন। অন্যান্য দিনের মতো সোমবার সকাল পৌনে ৮টার দিকে মর্নিং বার্ড লঞ্চে করে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। তার সাথে মিরকাদিম পৌর এলাকার প্রায় ১০ জন যাত্রী ছিলেন। আড্ডায় তারা লঞ্চটিতে মেতে ছিলেন। লঞ্চটি সকাল সোয়া ৯টার দিকে ফরাশগঞ্জ ঘাট এলাকার কাছে পৌঁছলে ময়ূর-২ লঞ্চটি তাদের লঞ্চটিকে ধাক্কা দেয়। এই সময় লঞ্চটি একপাশে কাত হয়ে গেলে তিনিসহ পাশের সবাই ছিটকে নদীতে পড়তে থাকেন। তার উপরে পড়ে ১০ থেকে ১২ জন যাত্রী। কিছু বুঝে ওঠার আগেই লঞ্চটি ডুবে গেল। অনেক যাত্রী ডুবে যাওয়ার দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেন তিনি। এ সময় কোনো রকমে সাতঁরে তীরে উঠতে পারায় অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান বলে জানান জাহাঙ্গীর হোসেন।
ওমর চাঁন নামে অপর এক যাত্রী জানান, তিনি জীবন বাচাঁতে পানিতে লাফিয়ে পড়েন। ডুবে যাওয়া একাধিক যাত্রী পানির নিচ থেকে বাচাঁর জন্য তাকে টেনে ধরে ছিলেন। আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে কোনো রকমে তিনি প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। ফকির চাঁন নামে বেঁচে যাওয়া অপর এক যাত্রী বলেন, হঠাৎ লঞ্চটিতে বিকট একটি শব্দ শুনতে পান এবং মুহূর্তেই লঞ্চটি পানিতে তলিয়ে যায়। পানিতে ডুবন্ত অবস্থায় সূর্যের আলো দেখতে পাচ্ছিলেন তিনি। এ সময় পানির নিচ থেকে কোনোরকমে রেরিয়ে আসেন তিনি। তবে তার সঙ্গে থাকা অপর যাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন বলেও জানান তিনি।
লঞ্চডুবিতে বেঁচে যাওয়া যাত্রী জুমকি আক্তার, কাকলী বেগম, নাজমা আক্তার, মমিন আলী, গোলাপ হোসেন লঞ্চডুবির মর্মান্তিক মুহূর্তের কথা জানালেন। খুব কাছ থেকে মৃত্যুকে দেখার এমন পরিস্থিতিতে আর কখনও পড়েননি বলেও জানান তারা।-সমকাল
সিএ/এসএস
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন