লেখালেখি

দিলীপ চৌধুরী স্মরণে

দিলীপ চৌধুরী স্মরণে

আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু বিরহদহন লাগে…শুভ জন্মদিন সাংবাদিক দিলীপ চৌধুরী

বুধবার । সপ্তাহে আমার শুধু একটি বন্ধের দিন। তারপরেও ঘুম থেকে উঠলেই দুরন্ত গতিতে চলা। খুব সকালে সেল ফোনের রিং। বুঝতে অসুবিধে হলো না সেটা একটি দুঃসংবাদ। হয়তো কর্মস্থল থেকে নয়তো দেশ কিংবা পরিচিতজনদের কাছ থেকে!  বেডরুমে সেল ফোন রাখি না ঘুমের সমস্যার কারণে ফলে বেডরুম থেকে লিভিংরুমে ফোন ধরার পূর্বেই কর্কশগর্জন করতে করতে বন্ধ হয়ে যায়। ফোনটা ওপেন করতেই ডিসপ্লেতে মিসকলে অপুদার নাম (দীপক ধর অপু)  দেখালো। বুঝতে অসুবিধে হয়নি ভয়াবহ কোন দুঃসংবাদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। কম্পমান বুকে কলব্যাক করতেই অপুদা ভারাক্রান্ত কন্ঠে বললেন ‘আমাদের দিলীপদা আর নেই…’। গতরাতে পৌনে ২টার সময় চলে গেছেন না ফেরার দেশে, পরে কথা হবে বলেই ফোনটা রেখে দিলেন অপুদা। অপুদা তাঁর কর্তব্য করে রেখে দিলেন ফোন কিন্তু চোখের পলকে অসখ্য স্মৃতির গভীরে ভাসিয়ে দিলেন অশ্রুজলে। দেশে থাকাবস্থায় মিডিয়া জগতে থাকলেও দিলীপদাকে চেনার সৌভাগ্য আমার হয়নি। কানাডায় আসার বছর কয়েক   পর সেই কবে ২৩/২৪ বছরতো হবেই সম্ভবত। শ্রদ্ধেয় এবি চৌধুরী দাদার (প্রয়াত) ডাউনটাউনের ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত অফিসে পরিচয়। পূজা ম্যাগাজিনের সম্পাদক হিসেবে তাঁর সঙ্গে পরিচয় এবং একটি লেখা দেওয়ার জন্য আহবান। এর পর থেকে মৃত্যুর কয়েক মাস পূর্ব পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে সময়ে সময়ে যোগাযোগ হতো। কতকিছু নিয়ে অভিমত বিনিময় হতো বিভিন্ন বিষয়ে যুক্তি তর্ক হতো। তিনি মন্ট্রিয়লে একটি টিভি চ্যানেলে বাংলাটিভি নামে একটি সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান করতেন ( তখন কোন বাংলাদেশী টিভি চ্যানেল কানাডায় ছিলোনা) আর সেটার জন্য ভিডিও ফুটেজের জন্য প্রায়ই আমার বাসায় আসতেন। তখন আমি প্রায় মন্ট্রিয়লের প্রতিটি অনুষ্ঠানের ভিডিও ও ছবি ধারণ করে আনতাম। এছাড়া বেশ ক’বছর  মন্ট্রিয়লে অনুষ্ঠিত বিশ্ব চলচ্চিত্র উৎসবে আমাদের দেখা হতো। আমরা দুজনই আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে যেতাম।

মিডিয়া সংক্রান্ত বিষয়ে তাঁর নেশা ছিলো মারাত্মক। বিগত কয়েক বছর ধরে অসুস্থতার কারণে ঠিকমত কোন কিছু করতে না পারলেও ফের মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। আমাকে বার বার বলতেন তিন একটি টিভি চ্যানেলে যোগ দেওয়ার দেওয়ার জন্য এবং তাকে সহযোগিতা করার জন্য।

আরও পড়ুনঃ ‘আই অ্যাম সেন্ড ইউ’ লিংক কি আসলেই ক্ষতিকর? ক্ষতি থেকে বাঁচতে করণীয়

হঠাৎ করেই কি থেকে কি হয়ে গেলো। বদলে গেলেন দিলীপ দা। একা একা নির্বাসনে চলে গেলেন একাকীত্ব জীবনকে বেঁচে নিলেন। তাঁর এই একাকীত্বতায় চলে যাওয়া কিংবা প্রবাসের দেবদাস হয়ে যাবার পিছনে হয়তো কোন কারণ থেকে যেতে পারে। কত আলোচনা-সমালোচনা, কত রকমারি প্রশ্নের পর প্রশ্ন! কিন্তু কেউ কি তাঁর এই পরিবার পরিজন ছেড়ে একাকীত্ব বরণের পিছনে নেপথ্যে কারণ জানতে চেয়েছি? কেউ কি তাঁর এই অব্যক্ত কষ্টের সমাধান করতে পেরেছি কিংবা কোন কারণে বিপথে চলার পথকে রোধ করে সুপথে চলার জন্য সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছি? পরিবার, সমাজ সংসার বন্ধু-বান্ধব সবই ছিলো কিন্তু আমরা ক’জন কতটুকু সময় দিতে পেরেছি? আমি পারিনি, সত্যি কথা বলতে দ্বিধা নেই। অপুদা-খোকাদারা হয়তো চেষ্টা করেছেন আর তখন হয়তো অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিলো।

কাজে গিয়েও ভীষণ ব্যস্ততার মাঝে বার বার প্রতিটি মুহূর্তে দিলীপদা চোখের সামনে ভেসে উঠেন। বিশ্বাস করতে খুবই কষ্ট হচ্ছিল দিলীপদা চলে গেছেন না ফেরার দেশে আর কখনো দেখবো না কোন অনুষ্ঠানের দর্শক সারির প্রথম লাইনে। তাঁর সঙ্গে পরিচয় হবার পর দীর্ঘ দিনের স্মৃতি বার বার আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় ফেলে আসা দিনগুলোর মাঝে অতীত বিন্যাসে স্মৃতির পরিক্রমায়! ভারতের প্রিয় রবীন্দ্র সংগীত শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম লোপামুদ্রা মিত্র’র কন্ঠে গাওয়া রবীন্দ্র সংগীত ‘আছে দুঃখআছে মৃত্যুবিরহদহন লাগে। তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে। তবু প্রাণ নিত্যধারা, হাসে সূর্য চন্দ্র তারা, বসন্ত নিকুঞ্জে আসে বিচিত্র রাগে…।’  রবীন্দ্র সংগীতের সেই শব্দের বিন্যাস দিয়েই প্রিয় মানুষের প্রতি নিরন্তর ভালোবাসা জানাই।

দিলীপদা হঠাৎ করেই চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তাঁর এ চলে যাওয়া সহজে মেনে নেওয়া কঠিন। তাঁর শেষ সময়ের স্মৃতি আমাকে ভীষণ কষ্ট দিয়েছে। এ কষ্টকে সঙ্গে করেই তাঁর স্মৃতি হৃদয়ে লালন করেই আমাকেও একদিন চলে যেতে হবে আর সেটাই নিয়ম। দিলীপদা যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন, শান্তিতে থাকুন। জানি আর কোন দিন দেখা হবে না ফের পূজা কিংবা কোন  অনুষ্ঠানের সামনের সারিতে। শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় অমলিন থাকুন আমাদের হৃদয়ে আপনার শুভ জন্মদিনে।

সদেরা সুজনঃ প্রধান নির্বাহী, কানাডা-বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি- সিবিএনএ২৪ডটকম

কানাডা প্রবাসীদের অনুষ্ঠানের ভিডিও দেখতে হলে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেল

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × one =