মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতিবঞ্চিত করার অভিযোগ এখন ‘টক অব দ্য অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’। প্রশাসনে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কর্মরত বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও তাদের অসন্তোষের কথা জানান। ইতোমধ্যে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু করেছে।
এদিকে রিপোর্ট প্রকাশের পর আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। সূত্রগুলো বলছে, শুধু প্রয়াত যোদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা বিমল কুমার রায়ের সন্তান গৃহায়ন ও পূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপসচিব অভিজিৎ রায় নন, আরও অনেক স্বনামধন্য মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তানও পদোন্নতি পাননি। পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আব্দুল আহাদ চৌধুরীর আপন ভাগিনাও। বঞ্চিত এ উপসচিবের নাম নেওয়াজ হোসেন চৌধুরী। যিনি বর্তমানে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সাইফুল হাসান বাদলের একান্ত সচিব (পিএস) হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। নেওয়াজ হোসেন চৌধুরীর পরিবারে পাঁচজন স্বনামধন্য মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। প্রয়াত পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন চৌধুরী ও প্রয়াত শ্বশুরও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম শামসুদ্দীন। এছাড়া তার আপন আরও দুই মামা বীর মুক্তিযোদ্ধা। তারা হলেন সিলেটস্থ জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজীদ চৌধুরী এবং বিজিবির সাবেক ডিডিজি বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম চৌধুরী।
উপসচিব নেওয়াজ হোসেন চৌধুরী ২১তম ব্যাচে একজন উচ্চশিক্ষিত মেধাবী কর্মকর্তা হিসাবে সুপরিচিত। তিনি ঢাকার স্বনামধন্য স্কুল এবং ঢাকা কলেজ থেকে স্টার মার্কস নিয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও (ভূতত্ব বিভাগ) প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। এছাড়া লন্ডনের গ্রিনউইচ ইউনিভার্সিটি থেকে এমএসসি (ফিন্যান্সিয়াল ইকোনমিক্স) করেন। একটি উচ্চশিক্ষিত পরিবারে গড়ে ওঠা এ কর্মকর্তা বর্তমান সরকারের সময়ে তার দক্ষতার জন্য ২০১৪-২০১৮ সাল পর্যন্ত সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নানের পিএস ছিলেন। পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এবং সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলী নূরের পিএস হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন।
জানা যায়, সবদিক দিয়ে যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও এমন একজন কর্মকর্তার পদোন্নতি না হওয়া অনেকে মেনে নিতে পারছেন না। এ ঘটনা প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে কর্মরত অনেককেও বিস্মিত করেছে।
গত ২ নভেম্বর যুগ্মসচিব পদে ১৭৯ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। নিয়মিত ব্যাচ হিসাবে পদোন্নতি দেওয়া হয় প্রশাসনের ২১তম ব্যাচকে। এর মধ্যে অন্তত ১৫ জন কর্মকর্তাসহ আরও বেশ কিছুসংখ্যক কর্মকর্তা পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। তবে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতি পাননি। এমন অভিযোগ প্রশাসনে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
সুত্রঃ যুগান্তর