সৌদি আরবে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচার আকুতি জানিয়ে ভিডিও বার্তা দেওয়ার পর হুসনা আক্তার (২৫) নামে বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মী এখন নিরাপদে আছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেদ্দার বাংলাদেশ কনস্যুলেটের লেবার উইংয়ের কর্মকর্তা কে এম সালাহউদ্দিন।
হুসনার সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয়েছে জানিয়ে কে এম সালাহউদ্দিন সোমবার রাতে এক বার্তায় বলেছেন, ওই নারী তাদের জানিয়েছেন যে, তিনি এখন নিরাপদে রয়েছেন।
তিনি আরও জানান, গৃহকর্মী হুসনা রয়েছেন নাজরান শহরে, যা জেদ্দা থেকে ১ হাজার কিলোমিটার দূরে। তিনি এখন নাজারান শহরে সেইফ হোমে পুলিশের নজরদারিতে রয়েছেন। তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াও শুরু হচ্ছে।
এর আগে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে দেশবাসীর উদ্দেশে এক ভিডিও বার্তায় আকুতি জানান হুসনা। ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তা প্রকাশ পায়।
জেদ্দা কনস্যুলেটের কর্মকর্তা সালাউদ্দিন বলেন, ‘গণমাধ্যমে সংবাদটি দেখে কনস্যুলেট ত্বরিত পদক্ষেপ নেয়। প্রথমে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে হুসনার পাসপোর্ট নম্বর এবং তাকে পাঠানোতে যুক্ত বাংলাদেশি এজেন্সির নাম ও ফোন নম্বর সংগ্রহ করা হয়।’
‘বাংলাদেশি এজেন্সির সাথে কথা বলে জানা যায়, উক্ত গৃহকর্মী সৌদি রিক্রুটিং অফিস ‘রুয়াদ নাজরান ( লাইসেন্স নম্বর – ৩৯১৮৬১৮) এর মাধ্যমে সৌদি আরব আগমন করেন। তার নিকট হতে সৌদি এজেন্সির নাম ও ফোন নম্বর সংগ্রহ করা হয়।’
তাৎক্ষণিকভাবে কনস্যুলেটের পক্ষ হতে নাজরান পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘এরপর কনস্যুলেট প্রতিনিধি সৌদি এজেন্সির সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করেন। উক্ত এজেন্সির সাথে কথা বলে জানা যায় যে, উক্ত গৃহকর্মী বর্তমানে পুলিশের নজরদারিতে এবং সেইফহোমে আছেন। তাকে বাংলাদেশে প্রেরণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে মর্মে সৌদি এজেন্সি কনস্যুলেট প্রতিনিধিকে অবহিত করেন।’
আরো পড়ুনঃ সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশি নিখোঁজ
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘কনস্যুলেট প্রতিনিধি উক্ত গৃহকর্মীর সাথেও কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন যে, বর্তমানে তিনি নিরাপদে আছেন। এ বিষয়ে কনস্যুলেটের ফলোআপ অব্যাহত আছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হবিগঞ্জের আজমিরিগঞ্জ উপজেলার আনন্দপুর গ্রামের হুসনা আক্তার আর্থিক স্বচ্ছলতার জন্য গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে গত ১৭ দিন আগে একটি এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি আরব পাড়ি জমান। সেখানে গৃহকর্তার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে প্রথমে স্বামী শফিউল্লাকে ভিডিও বার্তাটি পাঠান। তারপর হুসনার স্বামী ওই এজেন্সিতে গিয়ে এসব কথা জানালে এজেন্সির সংশ্লিষ্টরা তার কাছে এক লাখ টাকা দাবি করেন এবং হুসনা সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেন।
আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল শফিউল্লা কোনো উপায় না পেয়ে স্ত্রীকে বাঁচানোর জন্য ওই ভিডিও তার এক ভাইয়ের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করান। বাংলাদেশ সরকার ও সৌদি আরব রিয়াদ বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতা কামনা করেছেন হুসনা আক্তার।
এর আগে সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার হয়ে ফেসবুকে জীবন বাঁচানোর আকুতি জানিয়ে ভিডিও বার্তা পাঠিয়েছিলেন পঞ্চগড়ের গৃহকর্মী সুমি আক্তার। তার ওই আকুতির ভিডিও দেশ-বিদেশে ভাইরাল হলে দেশ জুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরে চলতি মাসের ১৫ তারিখ সকালে তিনি সৌদি থেকে জেদ্দা বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের সহায়তায় দেশে ফেরেন।