ক্যুইবেক ডে’তে সলিডারিটির বাংলাদেশ মেলা, হাজারও মানুষের ঢল
বিলম্বে প্রাপ্ত সংগঠন প্রেরীত সংবাদে জানা গেছে গত ২৪ জুন ক্যুইবেক জাতীয় দিবসে মন্ট্রিয়লে কানাডার সৃজনশীল সংগঠন কানাডা-বাংলাদেশ সলিডারিটি বাংলাদেশ মেলা অনুষ্ঠিত করে। কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতিতে মন্ট্রিয়লে সামারে এটিই সর্বপ্রথম ও সর্ববৃহৎ বাঙালিদের কোন মিলনমেলা যেখানে কয়েক হাজার বালাদেশী বাঙালিদের সমাবেশ ঘটে। মন্ট্রিয়লের বিভিন্ন অঙ্গনের এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ের অংশগ্রহণকারীদের স্বতঃস্ফূর্ততায় মেলা প্রাঙ্গনে খাওয়া, আড্ডা, কেনাকাটা ও বিনোদন এবং শিশুদের যেমন খুশী তেমন সাজো যেন মন্ট্রিয়লকে নিয়ে যায় বাংলাদেশের ভূখন্ডে ! শত শত নারী-পুরুষ ও শিশু কিশোরদের নিজস্ব ফটো সেশন, এবং সাংস্কৃতিক বিনোদনের শিল্পীদের সাথে নাচে-গানে নিজেদের বিলিয়ে দেবার লাইভ ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে বাংলাদেশ মেলাকে ভাইরাল করে। যে কারণে মেলা শেষ হওয়ার এক সপ্তাহেও আয়োজকদের পক্ষ থেকে মিডিয়াতে কোন খবর প্রচার ও প্রকাশ করতে হয়নি। মেলায় হাজার হাজার বাঙালিদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ, সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য সলিডারিটির পক্ষ থেকে সভাপতি জিয়াউল হক জিয়া সকলকে ধন্যবাদ ও তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং তাদের এই সমর্থন চলমান থাকলে আরও ভালো অনুষ্ঠান করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি ও সলিডারিটি টিম।
মন্ট্রিয়লের হাওয়ার্ড পার্কের বিশাল খোলা মাঠে দুপুর থেকে মেলার কার্যক্রম শুরু হয়। বেলুন ও পতাকা উড়িয়ে বিকেলে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের মান্যবর হাই কমিশনার ড. খলিল রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন, লরিয়ের-ডরিয়ন আসনের এম.এন.এ এ্যান্ড্রেস ফন্তেসিলা, পার্ক-এক্সটেনশন ডিস্ট্রিক্ট’র সিটি কাউন্সিলর মেডাম মেরী ডেরস, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, এমপি’র ডিরেক্টর স্টাভরোলা ডাকলারাস। উদ্বোধনী পর্ব সভাপতিত্ব করেন সলিডারিটির সভাপতি জিয়াউল হক জিয়া ও সঞ্চালনা করেন নতুন প্রজন্মের ফাহিম হক। পুরো অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন জনপ্রিয় উপস্থাপিকা শামসাদ রানা। প্রধান অতিথি মান্যবর হাই কমিশনার ড. খলিল রহমান, সম্মানিত অতিথি ও সভার সভাপতি সকলেই কানাডা ক্যুইবেক ও বাংলাদেশর সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিনিময়ের যে সংস্কৃতি তার গুরুত্ব তুলে ধরেন তাদের বক্তব্যে। উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী সাফিনা করিমের নেতৃত্বে সলিডারিটির একঝাঁক শিল্পী । কানাডা জাতীয় সঙ্গীত গায় ঋক ভট্টাচার্য্য। সাংস্কৃতিক পর্বে গান পরিবেশন করেন কিংবদন্তী গায়ক তপন চৌধুরী, জনপ্রিয় ফোক শিল্পী সেলিনা হোসেন চুমকি এবং মন্ট্রিয়লের জনপ্রিয় শিল্পী সাফিনা করিম, মনজুর এহসান মিঠু, মুনমুন দেব, জয়ন্ত ভৌমিক, পাপ্পু আহমেদ, আনাম, শরীফ রহমান, আজিজ রহমান। একক নৃত্যে ছিলেন নক্ষত্র ও দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন স্মৃতি ও প্রীতি। কবিতা আবৃত্তি করেন সঞ্জীব দাশ উত্তম। বাদ্যযন্ত্রে ছিলেন মেহেদী, লিটন ডি কোস্টা, ঝলক দেব ও জয়।
অনুষ্ঠানে্র মধ্যভাগে শুভচ্ছা বক্তব্য রাখেন সলিডারিটির সম্মানিত উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মুহিবুর রহমান, উদীচী সভাপতি বাবলা দেব, বাংলাদেশ কালচারাল এসোসিয়েশনের সভাপতি কামাল চৌধুরী, স্পন্সর জলিল রহমান রিয়েলটর। র্যাফেল ড্র’র বিজয়ীদের পুরষ্কার বিতরণ করেন স্পন্সর জলিল রহমান, শিহাব উদ্দীন, আফিয়া বেগম, মুসতাক হোসেন চৌধুরী ও সভাপতি জিয়াউল হক জিয়া।
মিডিয়া পার্টনার ছিলেন সিবিএস মিডিয়া নেটওয়ার্ক, সদেরা সুজন এবং সিবিএনএ ২৪.কম’র টিম, দি চ্যানেল টিভি। অনুষ্ঠান কভার করেন সাংবাদিক কাজী আলম বাবু, এনআরবি টিভি ও বাংলামেইল পত্রিকা, সাংবাদিক তানভীর ইউসুফ রনি-যমুনা টিভি, সাংবাদিক শরীফ ইকবাল চৌধুরী, সময় টিভি, সাংবদিক মোয়াজ্জেম হোসেন সাজু, এসটিভি।
বাংলাদেশ মেলার গর্বিত গ্র্যান্ড স্পন্সর ছিলেন নজরুল আলম শানু, টিম হরটন্স, রিয়েলটর জলিল রহমান, রাসেল মির্জা, রশিদ খান, বাবলা দেব, মুস্তাক সরকার একাউন্ট্যান্ট, ওয়াহিদ খান, ইমতিয়াজ খান, কল্লোল সোম, শাকিলা শারমিন, খন্দকার মোতালেব, হুরপরী মেলা, নওয়াব ফ্যাশন, গোলাম মুহিবুর রহমান, মাসুদ সিদ্দিকী-ক্যাফে রয়্যাল, তৈয়মুন্নেছা ফাউন্ডেশন, ফোরাম ট্রাভেল্স, স্টারভিসন কানাডা ইনক, টিমারট ফুড সার্ভিসেস, সালেহীন মোহাম্মেদ, জিনি আউটসোরচিং, কামাল চৌধুরী, আকতার হোসেন বাবু, সুপার মার্সে মদিনা, মার্সে পরদেশ।
মেলা পরবর্তী গত ২৯ জুন সন্ধ্যায় স্থানীয় স্টার কাবাব রেস্টুরেন্টে কানাডা বাংলাদেশ সলিডারিটি এই মেলার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ এবং সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য এক মিডিয়া ব্রিফিং’র আয়োজন করে যা সিবিএস মিডিয়া নেটওয়ার্কের ফেসবুক পেজ থেকে লাইভ সম্প্রচার করা হয়। সলিডারিটি-সিবিএস’র সভাপতি জিয়াউল হক জিয়া তার ব্রিফিং এ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বিশেষ করে সিবিএস’র সেচ্ছাসেবকদের সম্মানের শ্রেষ্ঠ আসনে অধিষ্ঠিত করে বলেন, তাদের নিঃস্বার্থ স্বেচ্ছাশ্রম না থাকলে এরকম একটি সফল মেলা সম্পন্ন করা সম্ভব হতনা। মেলায় ১৩১ সদস্যের প্রস্তুতি কমিটির মধ্যে সলিডারিটার ৯১ জন সদস্য সরাসরি স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করেন। সভাপতি তার ব্রিফিং এ মেলায় আয়-ব্যয় এর হিসাব উত্থাপন করে বলেন মেলায় সর্বমোট ১৪ হাজার ডলার খরচ হয়েছে এবং এ পর্যন্ত আয় হয়েছে ১৪ হাজার ডলার এবং আরও আনুমানিক ১ হাজার ডলার বিজ্ঞাপনের বিল বাবদ সংগ্রহ হবে যা অতিরিক্ত হিসেবে থাকবে বলে সিবিএস থেকে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। কুইবেক ডে’তে কানাডা বাংলাদেশ সলিডারিটি’র এক অবিশ্বাস্য সফল ‘বাংলাদেশ মেলা’ মন্ট্রিয়লে বাঙালি সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ইতিহাসের এক নতুন মাইলফলক। সংগঠকদের সার্থকতা সেখানেই যখন তাদের পরিশ্রমের একটি অনুষ্ঠান নিজ কম্যুনিটির সর্বস্তরের মানুষ তার নিজের অনুষ্ঠান হিসেবে গ্রহণ করে এবং সেখানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয়। সর্বকালের স্মরণীয় এই মেলা করতে পেরে সলিডারিটির সবাই খুবই গর্বিত এবং সেইসাথে গর্বিত মন্ট্রিয়ল’র বাঙালিরাও।
মেলার পুরো অনুষ্ঠানের ছবির অ্যালবামটি দেখতে হলে