ঘটনাস্থলের নিকট পুলিশ ও উৎসুক জনতার ভীড়: সংগৃহীত
বড়লেখার সবুজ চত্ত্বরে রক্তের বন্যা এত রক্ত আগে দেখেনি কেউ
সবুজে ঘেরা বড়লেখার পাল্লারতল চা বাগান এলাকা। পাহাড়ের উঁচু-নিচু টিলার মাঝে সারি সারি চা গাছ আর সবুজ বন-বনানীর মাঝে কর্মব্যস্ত সময় কাটে চা শ্রমিকদের। এখানকার চা শ্রমিকদের দিন কাটে ঝগড়া-বিবাদহীন। কিন্তু রোববার ভোরে প্রশান্তিময় এই জায়গাতেই ঘটে গেল ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড। চার খুনের রক্তে চা বাগানের সবুজ চত্ত্বর লাল হয়ে ওঠে। বড়লেখার সবুজ চত্ত্বরে রক্তের বন্যা । এখানে এমন রক্তধারা আগে দেখেনি কেউ।
চারজনকে নৃশংসভাবে হত্যা ও ঘাতকের আত্মহত্যার ঘটনায় বাগানের নিরীহ চা শ্রমিকরা আঁতকে ওঠেন। সোমবার দুপুরে পাঁচজনের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এদিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি কামরুল আহসান।
বড়লেখা উপজেলা সদর থেকে উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের পাল্লারতল চা বাগানের অবস্থান ২৫ কিলোমিটার দূরে। সীমান্তবর্তী দুর্গম পাহাড়ি এলাকার অনেকাংশ মোবাইল নেটওয়ার্কের বাইরে। রোববার ছিল বাগানের সাপ্তাহিক ছুটির দিন। তাই শনিবার রাতে শ্রমিকরা আমোদ-ফুর্তিতে মেতে দেরি করেই ঘুমাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের ছুটির আমেজ বিষাদে পরিণত হয়। ভোরে তাদের ঘুম ভাঙে চার হত্যা ও এক আত্মহত্যার মর্মান্তিক ঘটনার খবরে। আকস্মিক এ ঘটনায় সবাই বাকরুদ্ধ।
নির্মল কর্মকার সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ এলাকার এক চা বাগানে বসবাস করত। বছর তিনেক ধরে তিনি অস্থায়ী শ্রমিক হিসেবে পাল্লারতল চা বাগানে কাজ শুরু করেন। বছরখানেক আগে বিষ্ণু বুনার্জী দম্পতির মেয়ে বিধবা ও এক সন্তানের জননী জলি বুনার্জীকে (৩৫) বিয়ে করেন তিনি। বিয়ের পর থেকে তিনি শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন। জলি স্বামীসহ তার মায়ের সঙ্গে পাল্লারতল চা বাগানে বাড়িতে থাকলেও বাবা বিষ্ণু বুনার্জী সমনবাগ চা বাগানে অন্য মেয়ের বাড়িতে বসবাস করতেন।
বিষ্ণু বুনার্জী জানান, বিয়ের পর জামাই-মেয়ে প্রায়ই কলহে লিপ্ত হতো। এই কলহই কাল হলো মেয়ে জলি, স্ত্রী লক্ষ্মীসহ চারজনের জন্য। কী নিয়ে তারা ঝগড়া-বিবাদ করত তা তিনি বলেননি। তিনি কেন নিজ বাড়ি ছেড়ে মেয়ের বাড়িতে থাকেন সে সম্পর্কেও কিছু বলেননি। তিনি আরও জানান, বাগানের যে টিলায় তার পরিবার বসবাস করত সেখানে বসন্ত নামে আরেক প্রতিবেশী পরিবার থাকত। ওই পরিবারের বাবা-মেয়েও হত্যাকারীর হাত থেকে রেহাই পায়নি। বসন্তের স্ত্রী গুরুতর আহত অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বাগানের ফ্যাক্টরির সামনে কথা হয় পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি কার্তিক কর্মকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, এমন হত্যাকাণ্ডে সবাই মর্মাহত। সোমবার বাগানের কাজের দিন। কিন্তু ঠিকমতো কেউ কাজে যোগ দেননি। শোকে স্তব্ধ সবাই। অনেকের ঘরে রান্নাই হয়নি। কেউ ঘটনাটি ভুলতে পারছে না।
বড়লেখা থানায় দুই মামলা: চার খুন ও এক আত্মহত্যার ঘটনায় বড়লেখা থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। রোববার রাতে দায়ের হওয়া হত্যা ও অপমৃত্যু মামলা দুটির বাদী হয়েছেন পাল্লারতল চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন। মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বড়লেখা থানার ওসি ইয়াছিনুল হক।