ভাবমূর্তি নষ্টকারীদের ছাড় নয় বিতর্কিতদের কঠোর বার্তা দিতে চায় আ’লীগ
হাসিবুল হাসান ।। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত জনপ্রতিনিধি এবং দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের কঠোর বার্তা দিতে চায় আওয়ামী লীগ। দলের হাইকমান্ড থেকে ইতোমধ্যে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সতর্ক করা হয়েছে দলীয় সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতাদের। এ কারণে দল ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্টকারীদের কোনো ছাড় দিচ্ছে না ক্ষমতাসীনরা। বিতর্কিত কাজে দলের প্রভাবশালী নেতা-এমপিরা জড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেয়া হচ্ছে সাংগঠনিক ও আইনি ব্যবস্থা।
একইসঙ্গে অনুপ্রবেশকারী-সুযোগ-সন্ধানীদের বিষয়েও সচেতন থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে দলের হাইকমান্ড থেকে। দলটির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারাও বলছেন, সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও অপরাধে জড়িতদের জন্য একটা সতর্ক বার্তা।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বলেন, দেশে যে আইনের শাসন আছে, দেশে যে বিচার ব্যবস্থা শক্তিশালী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে কোনো অপরাধীকেই ছাড় দেন না সম্প্রতিকালের কয়েকটি ঘটনা এর উৎকৃষ্ট প্রমাণ। সারা দেশে যারা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে ও অপরাধে জড়িত- এটা অবশ্যই তাদের জন্যও একটা সতর্ক বার্তা।
একই বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ গনমাধ্যমকে বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর।
তাই অপরাধীকে অপরাধী হিসেবেই বিবেচনা করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, সে যে দলেরই হোক না কেন। তিনি আরও বলেন, অনেক সময় অনেক ঘটনা হয়তো ঘটে যা আমাদের নজরে আসে না। কিন্তু সব সময় অপরাধীদের বিরুদ্ধে নেত্রীর অবস্থান কঠোর। এ বিষয়ে তৃণমূলে কঠোর বার্তাও দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক দু’ভাবেই তার বার্তা পাঠাচ্ছেন। দলীয়ভাবে কিছু নির্দেশনা দিচ্ছেন চিঠি দিয়ে। কাউকে কাউকে মৌখিক ও বার্তাবাহকের মাধ্যমে সতর্ক করে দেয়া হচ্ছে।
এছাড়া দলীয় অপরাধীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যেখানে দুর্নীতি-অনিয়ম পাচ্ছি, সে আমার দলের যতবড় নেতা হোক, কর্মী হোক, যেই হোক, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
হ্যাঁ, তাতে আমাদের বিরোধী যারা, তাদের লেখার সুযোগ হচ্ছে, বা বলার সুযোগ হচ্ছে যে আওয়ামী লীগ দুর্নীতি করছে। কিন্তু এই কথাটা কেউ চিন্তা করছে না যে আওয়ামী লীগ দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে না; সে যেই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ের পরে দলকে তৃণমূল পর্যন্ত ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছিল আওয়ামী লীগ।
এর পরে সম্রাট-পাপিয়াসহ দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে দেখা যায় দলটিকে। তখন শুদ্ধি অভিযান শুরু হলেও করোনার কারণে তা শেষ করতে পারেনি দলটি। তবে করোনার মধ্যে পাপিয়া-সাহেদ এবং সিলেট-নোয়াখালীর ঘটনাসহ বিভিন্ন জায়গায় দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এছাড়া রোববার রাতে নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় দলীয় এমপি হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইরফান ঢাকা দ?ক্ষিণ সি?টি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। এই ঘটনার পরে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার শ্বশুর নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করীম চৌধুরী।
এর আগে পাবনার বেড়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) লাঞ্ছিত করার অভিযোগে পৌর মেয়র আবদুল বাতেনকে মেয়রের পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে সরকার। আবদুল বাতেন বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও পাবনা-১ আসনের সাংসদ শামসুল হকের ভাই। টানা ২১ বছর বেড়া পৌরসভার মেয়র পদে রয়েছেন। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কয়েক মাস আগে জেলা আওয়ামী লীগ তাকে দলীয় পদ থেকেও অব্যাহতি দিয়েছে।
ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মুজিবর রহমান চৌধুরী নিক্সনের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন, দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে গালি ও হুমকি দেয়ার অভিযোগে মামলা করেছে নির্বাচন কমিশন।
এই ঘটনার পর ফরিদপুর জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তার প্রতি সহমর্মিতা ব্যক্ত করেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। সাক্ষাৎকালে আওয়ামী লীগ নেতারা নিক্সনের মন্তব্যের নিন্দাও করেছেন। পাশাপাশি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
হাজী সেলিমের ছেলের ঘটনায় সরকারের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, এ ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে শেখ হাসিনার বাংলাদেশে কোনো গুণ্ডামি-মাস্তানি চলবে না। হাজী সেলিমের ছেলের ঘটনাটি গুণ্ডা-মাস্তানদের জন্য আরেকটি পরিষ্কার বার্তা, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আইনের শাসনে বিশ্বাসী। এই রাষ্ট্রে কোনো গুণ্ডামি-মাস্তানির সুযোগ নেই। সব গুণ্ডামি-মাস্তানির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রযন্ত্র সক্রিয়।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, একটানা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে অনেকের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে দল বিব্রত হচ্ছে। এ জন্য বিতর্কিতদের ব্যাপারে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা খুবই কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তার কঠোর নির্দেশনা হচ্ছে অপরাধী বা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জড়িতরা যত ক্ষমতাশালীই হোক না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং এটা কিন্তু হচ্ছে।
ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কাউকে ছাড় দেয়া হচ্ছে না। এছাড়া আওয়ামী লীগের কোনো পর্যায়ের কমিটিতেও যেন বিতর্কিতরা জায়গা না পায় সে বিষয়েও নেত্রীর (শেখ হাসিনার) নির্দেশনা আছে। এ বিষয়ে একাধিকবার তৃণমূলে চিঠি দিয়েও সতর্ক করা হয়েছে।
-যুগান্তর
সিএ/এসএস
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন