কানাডার সংবাদ ফিচার্ড

মন্ট্রিয়লে উদীচীর বর্ষ বরণ অনুষ্ঠান

“ এসো হে বৈশাখ এসো এসো … সমবেত কন্ঠে । উদীচী’র সেরা বৈশাখী অনুষ্ঠানের পুরো ছবির অ্যালবাম রয়েছে সংবাদের ভিতরে। -সিবিএনএ

মন্ট্রিয়লে উদীচীর বর্ষ বরণ অনুষ্ঠান

এই গানটি খুব গাওয়া হয় নানা অনুষ্ঠানে।গানটি কি প্রাণের কথা বলে? বাউল শাহ আব্দুল করিম কি জীবনের একটা প্রান্তে এসে হোঁচট খেয়েই গানের কলিগুলো এমন করে সাজিয়েছিলেন? কেন লিখেছিলেন, কেন গেয়েছিলেন “আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম আমরা ….”। এখন কি “গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান মিলিয়া বাউলা গান আর মুর্শিদী” গাওয়া হয় না! সম্প্রীতির সেই সহাবস্থানটির অনুপস্থিতিটি  কি ব্যথাতুর করেছিল সেই বাউলের মন? সেই গানটি যখন মন্ট্রিয়লের একটি মঞ্চে পরিবেশিত হচ্ছিল বারবারই মনে হচ্ছিল – করিম ভাইয়ের কথা। মনে হচ্ছিল উদীচী প্রতিষ্ঠার মূল দর্শনের কথা।যে অসাম্প্রদায়িক, বিজ্ঞান মনষ্ক, বৈষম্যহীন আর প্রগতিশীল সমাজ গঠনের প্রত্যয় নিয়ে উদীচীর জন্ম – আমাদের অনেক বাউল গানের প্রচ্ছন্ন সুরে বাজে সেসব কথাই।

মন্ট্রিয়লে উদীচীর সেরা বৈশাখী অনুষ্ঠানের সিবিএনএ-এর প্রকাশিত পুরো ছবির অ্যালবাম দেখতে হলে ক্লিক করুন -সম্পাদক 

শিল্পীদের পাশাপাশি যাঁর চমৎকার উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানটি আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠে -সঞ্চালক শর্মীলা ধর-সিবিএনএ

গত রবিবার ৭ মে সন্ধ্যায় বাউল শাহ আব্দুল করিমের সেই গানটিই যখন করছিলেন শেলি দেব আর সুমন কর – মনে হচ্ছিল কী চমৎকার মেলবন্ধন গানের কথায় আর উদীচীর ভাবনায়।বদলে যাওয়া যে সমাজ আমরা চাইনি, গানে কবিতায় সেই সমাজটাকে বদলে দিতেই যুগান্তরে চলছে উদীচীর সাংষ্কৃতিক আন্দোলন। সেদিন সন্ধ্যায় সেই ধারাটি বজায় রেখেই উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, মন্ট্রিয়ল সাজিয়েছিল বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। ‘মুছে যাক গ্লানি’ শীর্ষক উদীচীর অনুষ্ঠানটিতে যেমন ছিল প্রেম, দ্রোহ, জাগরন, প্রকৃতির কথা তেমনি স্মৃতি কাতরতার মন্ত্রও পাঠও হয় কবিতায়, গানে, নৃত্যে কিংবা ষড়ঋতুর ওপর কোরিওগ্রাফ করা ফ্যাশন শোতে। প্রতিটি পর্ব ঘোষণাকালে  উপস্থাপিকা শর্মিলা ধরের উপযুক্ত শব্দচয়নের পরিশীলিত প্রয়োগ পুরো অনুষ্ঠানটিকে ছন্দময় করে রেখেছে।
সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা লাভোয়া হাইস্কুল অডিটরিয়ামটির ভেতর বাইরে সবখানেই ছিল বাংলা আর বাঙালির আওয়াজ। ঢাকের বাদ্যে উন্মুক্ত হয় পর্দা। এরপর চলে এক ঝাঁক শিল্পীর সমবেত উদ্বোধনী সঙ্গীত। “আকাশ ভরা সূর্য্য তারা …” দিয়ে শুরু হয়  আর শেষও হয় রবি ঠাকুরের গান “ এসো হে বৈশাখ এসো এসো … “ দিয়ে।শেষ গানটিতে শিল্পীদের সাথে দর্শক সারি থেকে  মঞ্চে এসে কন্ঠ মেলান বহুজন।

উদীচী কানাডার সভাপতি বাবলা দেব- ছবি: সিবিএনএ

প্রতিটি পর্বই হল ভর্তি দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হয়। বিশেষ করে শিশু কিশোরদের নৃত্য পর্বটি ছিল অসাধারণ।রবীন্দ্র, নজরুল, লালন শাহ, আধুনিক সব ঘরানার গান হয়। স্থানীয়দের নিয়ে সাজানো অনুষ্ঠানটির অধিকাংশই ছিলেন অনিয়মিত শিল্পী, সৌখিন। কিন্তু পরিবেশনায় সবাই ছিলেন একনিষ্ঠ, আন্তরিক। প্রায় অর্ধ শতাধিক শিল্পী অংশ নেন পুরো অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানের আরেকটি ভালো দিক ছিল –  বক্তৃতাবাজি ছিল না মোটেও। শুধু আয়োজক সংগঠনের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ সূচক বক্তব্য রাখেন স্থানীয় উদীচীর সভাপতি বাবলা দেব।এছাড়া কমিউনিস্ট পার্টি মৌলভীবাজার জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক, মন্ট্রিয়লে নবাগত এডভোকেট নিলিমেষ ঘোষ বলু রাখেন শুভেচ্ছা বক্তব্য।
পুরো অনুষ্ঠানটির পরিকল্পনা, গ্রন্থনা ও সাবলীল উপস্থাপনায় ছিলেন শর্মিলা ধর।
অডিটরিয়ামের বাইরে ছিল খাবার ও শাড়ির স্টল। খাবারের স্টলে ছিল উপচে পড়া ভীড়।
বলা যায়, একটি সুগ্রন্থিত ও মুগ্ধকর অনুষ্ঠানের রেশ নিয়েই বাড়ি ফিরেন দর্শকরা।



এসএস/সিএ
সংবাদটি শেয়ার করুন