মরার পথে বাংলাদেশের একমাত্র বিরল উদ্ভিদ ‘আফ্রিকান টিকওক’
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের প্রধান প্রবেশদ্বারের পাশে কালের সাক্ষী হয়ে মাথা উচুঁ করে দাড়িয়ে ছিলো দেশের একমাত্র বিরল উদ্ভিদ আফ্রিকান টিকওক। এই গাছটি স্থানীয়দের কাছে অজ্ঞান গাছ বা ক্লোরোফর্ম গাছ নামেই অধিক পরিচিত। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে, তার মধ্যে আফ্রিকান টিকওক প্রজাতির উদ্ভিদ একটি। এই উদ্ভিদটি দেশে একমাত্র লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ছিল।
জানা যায়, লাউয়াছড়া বনে দুইটি আফ্রিকান টিকওক উদ্ভিদ ছিলো। রেললাইনের অপারে থাকা আরেকটি আফ্রিকান টিকওক উদ্ভিদ অনেক আগে প্রাকৃতিক ঝড়ে উপড়ে পড়ে যায়। তখন একমাত্র বিরল উদ্ভিদ হিসাবে দাড়িয়ে ছিলো লাউয়াছড়ার প্রধান প্রবেশ পথে থাকা অপর আরেকটি আফ্রিকান টিকওক। সম্প্রতি বৃষ্টি মৌসুমে বিরল প্রজাতির উদ্ভিদটির পাতা আকষ্মিকভাবে ঝরে পরে গেলে বন বিভাগের দৃষ্টিগোছর হয়। গাছটির গুড়ায় পচন সৃষ্টি হয়েছে। বন বিভাগ ধারনা করছে উদ্ভিদটি মারা যাচ্ছে।
‘আফ্রিকান টিকওক’ গাছটির বয়স সম্পর্কে কোন তথ্য-উপাত্ত বন বিভাগের কাছে না থাকায় গাছটির সঠিক বয়স জানা যায় নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে গাছটির বয়স প্রায় শতবর্ষ হবে। ব্রিটিশ সময়কালে তৎকালিন পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বর্তমানে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে অন্যান্য উদ্ভিদের সাথে এই উদ্ভিদটিও রোপন করা হয়েছিল।
এক সময় লোকমুখে কথিত ছিলো, এই বৃক্ষের পাশ দিয়ে কোন পথচারি হেঁটে গেলে বা বৃক্ষের নিচে দাঁড়ালে অজ্ঞান হয়ে পড়তেন। যদিও এর কোন সত্যতা কোন সূত্রই নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে গবেষণায় দেখা গেছে এই বৃক্ষে কার্বলিক অ্যাসিড ও ক্লোরোফর্মের উপস্থিতি রয়েছে।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে থাকা বিরল উদ্ভিদটির কাছে গিয়ে দেখা যায়, গাছটির সম্পূর্ণ পাতা ঝড়ে পরে গেছে এবং গুড়ার মধ্যে পচন দেখা দিয়েছে।
কমলগঞ্জ জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সভাপতি মনজুর আহমেদ আজাদ মান্না জানান, ‘আফ্রিকান টিকওক গাছটি প্রায় শত বছরের পুরনো। কালের সাক্ষী হয়ে ডালপালা মেলে দাড়িয়ে ছিল এই আফ্রিকান টিকওক গাছটি। গাছটি মারা যাচ্ছে দেখে খুব খারাপ লাগছে।’
লাউয়াছড়া ইকো ট্যুরিষ্ট গাইড মো. আহাদ মিয়া বলেন, ‘জাতীয় উদ্যান ভ্রমনে আসা পর্যটকদের এই গাছ সম্পর্কে ব্রিফিং করলে উনারা খুবই আকৃষ্ট হতেন এবং গাছের সাথে ছবি তুলে রাখতেন স্মৃতি হিসেবে। কিন্তু একমাত্র বিরল গাছটি মারা যাওয়ায় আমরা ট্যুরিষ্ট গাইডরা খুবই কষ্ট পেয়েছি।’
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের লাউয়াছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম সিবিএনএ কে বলেন, আফ্রিকান টিকওক উদ্ভিদটি বাংলাদেশের একমাত্র বিরল উদ্ভিদ। এটি শুধু লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানেই আছে। এটি প্রায় ৮ফিট গোলাকার এবং এর উচ্চতা প্রায় ৮০ফিটের মতো হবে। গাছটির বয়সের কোন তথ্য-উপাত্ত আমাদের কাছে নেই তাই এর সঠিক বয়স বলতে পারব না। তবে ধারণা করা হচ্ছে গাছটির বয়স ৮৫-১০০বছরের মধ্যে হবে। সম্প্রতি বৃষ্টি মৌসুমে বিরল প্রজাতির এই উদ্ভিদটির পাতা আকষ্মিকভাবে ঝরে পরে যায় এবং গাছটির গুড়ায় পচনের সৃষ্টি হয়েছে। গাছটি দেখলে মনে হয় গাছে কোন প্রাণ নেই তাই ধারণা করছি গাছটি প্রায় মারাই গেছে। আর যদিও একটু আরটু প্রাণ থেকে থাকে তাহলেও গাছটি বাচাঁনো যাবে বলে মনে হয় না।
আফ্রিকান উদ্ভিদটির বিষয়ে মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ এর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে দুটি আফ্রিকান টিকওক উদ্ভিদ ছিলো। একটি গাছ অনেক আগেই মারা গেছে, বর্তমানে যে একমাত্র গাছটি ছিলো সেটিও প্রায় মারা যাওয়ার পথে। গাছটির পাতা ঝরে পড়া দেখে তিনি বাংলাদেশ বন গবেষনা ইনিস্টিউট (বিএফআরআই) কে অবগত করেন। গাছটি মারা যাওয়ার কারন হিসেবে অনেকেই ধারণা করছেন গাছটির বয়স, কেননা একটা সময় পর উদ্ভিদ কিংবা প্রাণীর জীবন চক্রের প্রাকৃতিক ভাবে সমাপ্তি ঘটে।’
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান