শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদী’র রাজনৈতিক ‘কেমিস্ট্রি’ চমৎকার
শিতাংশু গুহ, সেপ্টম্বর ২০২২, নিউইয়র্ক।। ২০২৪-শে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে। ৱ্যাবকাণ্ডে বিএনপি’র কিছু নেতাকর্মী ভাবছে তাঁরা ক্ষমতায় আসছেন। এ দিবাস্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে। শেখ হাসিনা আছেন, তিনিই থাকবেন। দেশ ভালোই চলছে। কিছু সমস্যা আছে, তা সব দেশেই থাকে, থাকবে। জনগণ ভালো আছে, সেটাই মোদ্দাকথা। এক সময় ছিলো, ‘এক নেতা এক দেশ, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ’। এখন ‘শেখ হাসিনা বাংলাদেশ’। বঙ্গবন্ধু‘র সময় জাতীয় চার নেতা ছিলো, ভাসানী ছিলো, মুজাফফর আহমদ, মনি সিং, ফরহাদ, আরো কত নেতা ছিলেন। শেখ হাসিনা’র আমলে এখন কেউ নেই, তিনি একাই একশ’। তিনিই মন্ত্রী, তিনিই প্রেসিডেন্ট, তিনিই এমপি, তিনিই সব।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মারা যাবার আগে শেষবার নিউইয়র্কে এলে একান্তে আমাকে বলেছিলেন, ‘আজকের দিনে শেখ হাসিনা’র যে অবস্থান, সেটি তিনি নিজেই সৃষ্টি করেছেন’। দাদার এ কথাটি আমি প্রায়শ: ভাবি। কথাটি সত্য। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা যেদিন স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন, সেদিন ঝিরঝির বৃষ্টিতে ফার্মগেট সংলগ্ন অধ্যক্ষ সাইদুর রহমানের বাড়ি ‘সংশয়’-র নীচে দাঁড়িয়ে তাঁকে দেখেছিলাম। সেই শেখ হাসিনা, আর আজকের শেখ হাসিনা’য় বিস্তর তফাৎ। অত:পর সভা-সমিতি, জাতীয় প্রেসক্লাব, বত্রিশ নম্বর বা সাংবাদিক, বিশেষত: বাংলারবানী’র সাংবাদিক বিধায়, আশির দশকে রাস্তার আন্দোলনে, মিটিং-মিছিলে বহুবার শেখ হাসিনাকে দেখেছি। ১৯৯৬-এ ক্ষমতা থাকাকালে বা ২০০১ থেকে ২০০৮-এ বহির্বিশ্বে আন্দোলনে তাঁকে দেখেছি, মহামারী করোনার আগপর্যন্ত তাঁকে দেখেছি। দূর থেকে দেখছি, ফলো করছি। ২০২২-এর শেখ হাসিনা এক ও অনন্য।
এ শেখ হাসিনা দেখেশুনে, জ্বলেপুড়ে এক জ্যান্ত মানবী, মাথায় শুধু দেশের মঙ্গলের চিন্তা। সমস্যা নেই তা নয়, সব সমস্যার সমাধান শেখ হাসিনা’র কাছে। অন্যদের কোন কাজ নেই, সামনে প্রশংসা করা পেছনে ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’। তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা। তিনি প্রধানমন্ত্রী। তিনি রাষ্ট্রনায়ক। আমেরিকা, ভারত চীন শেখ হাসিনাকে নিয়ে খেলছে, তিনিও খেলছেন। আগে খেলাটা ছিলো একতরফা, এখন ‘কেহ কারে নাহি ছাড়ে, সমানে সমান’। বঙ্গবন্ধু’র পর দেশে বেশ ক’জন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী থাকলেও রাষ্ট্রনায়ক ছিলো না, এখন আছে, তিনি শেখ হাসিনা। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে তিনি পুনরায় মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনিই পেরেছেন বিএনপি’র রাজনীতিকে ধূলিসাৎ করে দিতে, খালেদা জিয়াকে ‘জিরো’-তে পরিণত করতে। দেশে এখন জ্বালাও-পোড়াও নেই, লাশ নিয়ে রাজনীতি নেই, আন্দোলন নেই, রাজনৈতিক নেতারা ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত। আওয়ামী লীগ কলাগাছ নমিনেশন দিলে শেখ হাসিনা’র নামে কলাগাছ জিতে যায়!
হেফাজত ও ওলামা লীগ শেখ হাসিনা’র ছায়াতলে বেড়েছিল। বিএনপি-জামাত ঠেকাতে তিনি এদের কাছে টেনে ছিলেন, প্রয়োজন শেষ, তাই সময়মত ছেঁটে দিয়েছেন। সন্ত্রাসবাদীরা রাজত্ব করতে চেয়েছিলো। তিনি নির্মম ভাবে দমন করেছেন। মৌলবাদীরা এখন বাড়বাড়ন্ত, দেখা যাক, কিভাবে তিনি এদের থামান। হিন্দুরা তাঁর আমলে অত্যাচারিত, তাঁরা অখুশি, শেখ হাসিনা সেটা জানেন, তাঁদের খুশি করতে কি করেন তাও দেখার বিষয়। বিষয়টি হচ্ছে, যাঁরা অখুশি, রাগান্বিত, তাঁরাও জানেন, শেখ হাসিনা ‘অগতির গতি’। জামাত বা কট্টর ইসলামপন্থীরা ওপরে শেখ হাসিনা’র প্রশংসা করলেও ভেতরে তাঁকে অপছন্দ করে। তবে তাঁরাও জানে, বিরোধিতা করে কিচ্ছু হবেনা, তাই ওঁরা অনেকে এখন আওয়ামী লীগ হয়ে গেছে। শেখ হাসিনা তত্বাবধায়ক সরকার এনেছেন, তিনিই এর কফিনে শেষ পেরেক মেরে দিয়েছেন। গণতন্ত্র কি তা তিনি জানেন, হয়তো সময়মত গণতন্ত্র ও সুষ্ঠূ ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনবেন। আগে ছিলো আওয়ামী লীগ পারে, এখন হচ্ছে শেখ হাসিনা পারে।
এতসব কিভাবে সম্ভব? একাত্তরে পাকিস্তানের পরাজয় প্রসঙ্গে শ্রীমতি গান্ধী বলেছিলেন যে, ‘এটি সম্ভব হয়েছে সেনাবাহিনীর দেশপ্রেম, চৌকশ নেতৃত্ব এবং তাদের সাথে আমার চমৎকার সম্পর্কের কারণে’। আজকের বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম কারণ শেখ হাসিনা-সেনাবাহিনী, পুলিশ, প্রশাসনের চমৎকার সম্পর্ক। বিডিআর বিদ্রোহের পর শেখ হাসিনা উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে সেনা ছাউনিতে গেছেন, এতে পারস্পরিক বিশ্বাস ও আস্থা অর্জনে যে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছিলো এর সুফল এখন পাওয়া যাচ্ছে। সেদিন শেখ হাসিনা যে বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তা কেবল তার পক্ষেই সম্ভব ছিলো। করোনায় মৃত্যু‘র সংখ্যা তিনি রোধ করতে সক্ষম হয়েছেন, এটি সাফল্য। পদ্মাসেতু দেশের চেহারা পাল্টে দেবে। দেশে মানুষের পকেটে পয়সা আছে, পেটে ভাত আছে, আর কি চাই? ৱ্যাবকাণ্ডে হতাশা আছে, ভয়ের তেমন কারণ নেই, পরিস্থিতি আর নাজুক নাহলেই হলো। বিচার বহির্ভুত হত্যাকান্ড কমেছে। সাম্প্রদায়িক নির্যাতন ঠেকাতে সরকার হিমশিম খাচ্ছে, এ বিষয়টি শেখ হাসিনাকে আরো তীক্ষ্ণভাবে নজর দিতে হবে, কারণ এতে সমস্যা হচ্ছে।
এবার সেপ্টেম্বরে ভারত সফর সম্ভবত: নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা’র শেষ সফর। অনেকে ভেবেছিলেন ভারত তেমন পাত্তা দেবেনা। বিমান বন্দরে একজন প্রতিমন্ত্রী তাঁকে স্বাগত জানালে তাঁরা খুশি হয়েছিলেন। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগাররা কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়েন। সফর শেষে বোঝা যায়, সফর সফল। যাঁরা ভেবেছিলেন, ভারত পাত্তা দেবেনা, তারা নিরাশ হয়েছেন। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পর এখন এটি স্পষ্ট যে, বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতে হলে ভারতকে পাশে দরকার। ভারতও জানে, বাংলাদেশকে এর পাশে চাই। শেখ হাসিনা এবং নরেন্দ্র মোদী’র রাজনৈতিক ‘রসায়ন’ চমৎকার, দুই প্রধানমন্ত্রী গত ৭বছরে ১২বার মিলিত হয়েছেন। ভারতের অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিয়ে কারো সংশয় নেই; বাংলাদেশের নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ, আমরা চাইনা সামনের নির্বাচন নিয়ে কোন প্রশ্ন উঠুক। দুই দেশে ২০২৪-এ নির্বাচন; দেশ ও জনগণের সার্বিক উন্নয়নে শেখ হাসিনা এবং নরেন্দ্র মোদী জয়ী হ’ন, আমরা তা চাই। # [email protected];