সিলেটে যে বার্তা দিয়ে গেলেন নানক
সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে সিলেটে দুই দিনের সফর করেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বিভাগের সাংগঠনিক নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক। দলের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামানের সমর্থনে একাধিক বৈঠকে তিনি যোগ দিয়েছেন। নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, দফায় দফায় অনুষ্ঠিত এসব বৈঠকে এবার দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছেন। তাদের বক্তব্য শুনেছেন। দিয়ে গেছেন বার্তাও। নির্বাচনের প্রাথমিক দিক নির্দেশনাও এসেছে তার কাছ থেকে। দুই দিনের সফর শেষে তিনি গতকাল রাতেই ঢাকায় ফিরে গেছেন। তবে সিটি নির্বাচনে প্রচারণা ও দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণ করতে তিনি শিগগিরই ফের সিলেট আসবেন বলে নেতারা জানিয়েছেন।
জাহাঙ্গীর কবির নানক গেল কয়েক বছর ধরে সিলেট আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক নেতার দায়িত্বে রয়েছেন। গেল দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রয়াত বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের পক্ষে মাঠে সক্রিয় ছিলেন। এবার তিনি আনোয়ারুজ্জামানের পক্ষে মাঠে নেমেছেন।
নির্বাচনকে সামনে রেখে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনিসহ কেন্দ্রীয় নেতারা সিলেটে এসে পৌঁছান। এরপর তিনি সিলেট আওয়ামী লীগের সিনিয়র কয়েকজন নেতাকে নিয়ে নগরীর মীর্জা জাঙ্গালস্থ হোটেল নির্ভানা ইনে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। ওইদিন সন্ধ্যায় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের নিয়ে সভা করেন। আর গতকাল শুক্রবার বিকালে হোটেল নির্ভানা ইনে সিলেটের অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এর বাইরে আরও কয়েকটি বৈঠক করেছেন বলে দলের নেতারা জানিয়েছেন।
বৈঠকগুলো একান্ত দলীয় বৈঠক। সেখানে তিনি বেশকিছু নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। তবে প্রকাশ্যে বৈঠকে এবার কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নানক। নেতারা জানান, সিলেট আওয়ামী লীগের রাজনীতি, নির্বাচনকেন্দ্রিক নানা মেরুকরণ দলের শীর্ষপর্যায়ের নেতা নানকের জানা রয়েছে। এ কারণে বিগত দুই নির্বাচনের ভুল তিনি এবার করতে চান না। প্রতিটি বৈঠকেই তিনি বলার চেয়ে নেতাকর্মীদের বক্তব্য শুনেছেন বেশি। বিশেষ করে নেতাকর্মীরা নৌকার বিজয়ে কী কী ভূমিকা রাখতে পারবেন সেসব বিষয় তিনি শুনেছেন। একইসঙ্গে বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভুলের নানা দিক পুনরাবৃত্তিও করেন। এসব বৈঠকে উপস্থিত থাকা দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, বৈঠকে সিলেট আওয়ামী লীগের ভেতরকার টানাপোড়েন ও নেতাদের দূরত্বের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে পর্যালোচনা করা হয়েছে। সিলেট আওয়ামী লীগ থেকে কাউকে মেয়র প্রার্থী না দেয়ায় দলের ভেতরে অনৈক্যের বিষয়টিও আলোচনায় আসে। এ ছাড়া অনেক নেতা এখনো নীরব রয়েছেন।
কেউ কেউ রয়েছেন দেশের বাইরে; এমন বিষয়েও বক্তব্য রাখেন কেউ কেউ। তবে দিনশেষে সবাই নৌকার পক্ষে ঝাঁপিয়ে পড়লে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয় ঘরে তোলা সম্ভব বলে জাহাঙ্গীর কবির নানককে অবগত করেন তারা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলীয় প্রার্থী ও সিলেটের নেতাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে। এজন্য সিনিয়র নেতাদের দিয়ে সমন্বয়ের দায়িত্ব দেয়ার দাবি জানান তারা। এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে সিলেট আওয়ামী লীগের যৌথসভায় জাহাঙ্গীর কবির নানক বিগত সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোর অভিজ্ঞতার আলোকে দলীয় নেতাদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এ সময় তিনি জানিয়েছেন, ‘দলে খন্দকার মোশতাকের অনুসারী যেমন রয়েছে, তেমনি মুজিবাদর্শের লড়াকু এবং ত্যাগী কর্মীরাও রয়েছেন। মোশতাক বাহিনীর কারণেই বিগত দিনে এই নগরের অভিভাবক বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে হারতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এবার সেই সুযোগের পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না আওয়ামী লীগ।
দলের প্রতিটি ওয়ার্ডে সভাপতি এবং সম্পাদকের ভোটকেন্দ্রগুলোতে সজাগ দৃষ্টি থাকবে আওয়ামী লীগের। যাদের ভোটকেন্দ্রের ফলাফল অনুযায়ী পুরস্কার এবং তিরস্কারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এমন কোনো কর্মকাণ্ড করবেন না যাতে করে রংপুরের পরিণতি ভোগ করতে হয়।’ এদিকে গতকাল বিকালে হোটেল নির্ভানা ইনে তিনি টিভি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় নানক জানান, সিলেটের নির্বাচন রংপুরের মতো হওয়ার আশঙ্কা নেই। সিলেটের এবারের সিটি নির্বাচনে ভয় পেয়ে বিএনপি অংশ নিচ্ছে না বলে জানান তিনি। নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন: সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ঘোষণা করেছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। রাতে নগরীর একটি অভিজাত হলরুমে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত কর্মিসভায় তিনি এই কমিটি ঘোষণা করেন।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদকে। আর কো চেয়ারম্যান হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী, সদস্য সচিব মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান। এ ছাড়াও নৌকার প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে প্রথম সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। পাঁচ সদস্যের এই কমিটি পরবর্তী সময়ে এবটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবেন। সেই কমিটিতে মহানগর আওয়ামী লীগ ও জেলা আওয়ামী লীগ ছাড়াও বিভিন্ন পেশাজীবী ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
-মানবজমিন থেকে