হিন্দুর মাথায় হাত বোলানো!
শিতাংশু গুহ, ০৩ নভেম্বর ২০২৩, নিউইয়র্ক।। সরকার এবং দল হিসাবে আওয়ামী লীগ এসময়ে হিন্দু তথা সংখ্যালঘুদের মাথায় হাত বোলাতে শুরু করেছেন। তারা ইতিমধ্যে দেশে বেশ ক’বার হিন্দু নেতা, এবং প্রবাসে ঐক্য পরিষদের সাথে বৈঠক করেছেন। যদিও ফলাফল ‘শূন্য’। গত দেড় দশক সরকার ও আওয়ামী লীগ হিন্দুর কথা বেমালুম ভুলে থেকেছেন। এখন ভোট আসছে, এবার হয়তো ভোটের দরকার হবে, তাই মাথায় হাত বোলানো। এতে কি কাজ হবেন? এবার কি শুধু কথায় চিড়ে ভিজবে না, ২০১৮’র অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে হবে?
হিন্দুরা কি তাহলে এবার আওয়ামী লীগকে ভোট দেবেনা? পাল্টা প্রশ্ন করা যায়, কেন দেবে? হিন্দুরা তাহলে কাকে ভোট দেবে? ভোটের চিত্রটি ভিন্ন, আগে হিন্দুরা ১শ’ শতাংশ নৌকাকে ভোট দিয়েছে, সত্তরে হিন্দুরা ১শ’ শতাংশ ভোট নৌকায় দিয়েছিলো বলেই বঙ্গবন্ধু একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিলো, দেশ স্বাধীন হয়েছিলো। পঁচাত্তরের পর আওয়ামী লীগের উত্থানে হিন্দুদের অবদান, এমনকি ২০০৮-এ ক্ষমতায় আনতে হিন্দুরা জীবনপণ করেছিলো। বিনিময়ে হিন্দুদের ‘কলা’ দেখানো হয়েছে।
১৩ই অক্টবর ২০২৩ দৈনিক প্রথম আলো হেডিং করেছে, ‘সংখ্যালঘু নেতাদের সাথে সমঝোতার চেষ্টায় আওয়ামী লীগ, লক্ষ্য ভোট’। ক’দিন আগে ঐক্য পরিষদের অনশন ভাঙ্গাতে আওয়ামী লীগ ‘সংখ্যালঘু কমিশন’ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো, আপাতত: সরকার এনিয়ে চুপচাপ। ওয়াশিংটনে হিন্দু নেতারা আবারো ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন’ দাবি করেন। মনে হয়, অন্তত: এ দু’টো দাবি পূরণ না হলে এবার আওয়ামী লীগ হিন্দুদের তেমনটা পাশে পাবেনা।
তাহলে হিন্দুরা কোনদিকে যাবে? হিন্দুরা সাম্প্রদায়িক দলের দিকে যাবেনা, আওয়ামী লীগ এখন আর অ-সাম্প্রদায়িক দল নয়, তবু মাঝে মধ্যে কেউ কেউ মুখে মুখে অসাম্প্রদায়িকতার কথা ভুলে বলে ফেলেন, বেকুব হিন্দু তাতেই খুশি? হিন্দুরা এখন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এবার নির্বাচনে অসংখ্য হিন্দু প্রার্থী থাকবে। আওয়ামী লীগের ২১জন সংখ্যালঘু এমপি হিন্দুদের নিরাশ করেছেন। এজন্যে ক’দিন আগে রানা দাশগুপ্ত বলেছেন, ২১জন সাংসদ কিছুই করলেন না!
সিইসি বলেছেন, সংখ্যালঘুরা রাজনৈতিক দলের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না। কথাটি সত্য। জাতীয় পার্টির জিএম কাদের বলেছেন, সরকার জড়িত বলেই সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার হয়না। হিন্দুরা মূলত: শান্তি চায়, সরকার তা দিতে ব্যর্থ। ‘ইসলাম ধর্ম অবমাননা’ এবং হিন্দুদের ওপর আক্রমন, জেল-জুলুম ঘটনায় হিন্দুরা ত্যক্ত-বিরক্ত। ডিএসএ বা অধুনা সিএসএ (সাইবার সিকিউরিটি এক্ট) হিন্দুদের বিরুদ্ধে ব্ল্যাসফেমি হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ইকবালের কারণে ১৮টি জেলায় সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস হয়, তাঁর হয়েছে ১৪ মাসের জেল এবং রাকেশ রায়, যিনি ভিকটিম, তার হয়েছে ১১বছরের জেল? এথেকে দেশের বিচার ব্যবস্থার দৈন্যতা এবং হিন্দুর প্রতি ভালবাসা টের পাওয়া যায়!
বর্তমানে হিন্দুদের ‘ভিক্ষা চাইনা, কুত্তা সামলান’ অবস্থা। আওয়ামী লীগের ভালবাসা হিন্দুদের আর দরকার নেই! পূর্ব-পাকিস্তান আমলে হিন্দুরা প্রতিকূল অবস্থায় বাস করতো, কারণ সরকার, রাজনৈতিক দল সবাই ছিলো এন্টি-হিন্দু। ভরসা ছিলো বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ, বাম দলগুলো এবং কিছু ভালো মানুষ। এখন বঙ্গবন্ধুও নেই, নেই সেই আওয়ামী লীগ বা বামেরা, প্রশাসন, রাষ্ট্রযন্ত্র, হুজুর ও ধর্ম ব্যবসায়ীরা সবাই এন্টি সংখ্যালঘু, ভালো মানুষ কোথায়? হিন্দুদের অবস্থা এখন পাকিস্তান আমলের চেয়েও খারাপ। এই অবস্থায় ‘চাচা আপন বাঁচা’ এবং নিজের পায়ে দাঁড়ানো ছাড়া সংখ্যালঘু’র সামনে অন্য কোন পথ খোলা নেই?
ভারত কখনো হিন্দুদের জন্যে কিছু করেনি। আওয়ামী লীগ হিন্দুদের জন্যে কিছু করেনি। এই দুই শক্তির ওপর ভরসা করে হিন্দুরা বারবার ঠকেছে, হয়তো ঠকে ঠকে শিখেছে, ‘বলং বলং বাহু বলং’। বাংলাদেশের দুই কোটি হিন্দুকে বঙ্গবন্ধুর ভাষায়, ‘দাবায়ে রাখতে পারবা না’! বাংলাদেশে গণতন্ত্র, প্রগতিশীলতা বজায় রাখতে, বা উগ্রতা ও ইসলামী মৌলবাদ ঠেকাতে সংখ্যালঘুরা ‘ডিটারেন্ট ফ্যাক্টর’; দেশ ও সমাজের কল্যানে এই গোষ্ঠীর টিকে থাকা দরকার। মৌলবাদীরা তা জানে, তাই তারা হিন্দুদের খেদাতে চায়, অথচ তথাকথিত প্রগতিশীলরা জেনেশুনে ‘নিজের পায়ে কুড়াল’ মারতে উদ্যত!! [email protected];