জাতিসংঘ প্রবাসের সংবাদ ফিচার্ড

উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি অর্জনে ‘বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী’

উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি অর্জনে ‘বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী’ শক্তির ব্যবহারে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রকৃষ্ট উদাহরণ- প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ ও অন্যান্যরা।

উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি অর্জনে ‘বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী’ শক্তির ব্যবহারে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রকৃষ্ট উদাহরণ- প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ।

নিউইয়র্ক, ২৫ মে ২০২১। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনীর অপরিসীম শক্তিকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নকে বেগবান করেছে তা জাতিসংঘে তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ। জাতিসংঘ সদরদপ্তরে চলমান পঞ্চম এলডিসি সম্মেলনের প্রস্তুতিমূলক কমিটির সভার দ্বিতীয় দিনে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ অর্জন এবং বহুমাত্রিক বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগানো’ শীর্ষক এক থিমেটিক আলোচনায় মূল বক্তা হিসেবে প্রদত্ত বক্তব্যে এসকল কথা তুলে ধরেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সরকার গৃহীত দূরদর্শী পদক্ষেপ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’- এর সাফল্য তুলে ধরে জনাব সজীব আহমেদ ওয়াজেদ বলেন, “উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি অর্জনে ‘বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী’ শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ”। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশের জিডিপি শুধু ভারত বা পাকিস্তানকেই নয়, চীনকেও ছাড়িয়ে গেছে মর্মে উল্লেখ করেন তিনি। তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা বলেন, এমনকী কোভিড-১৯ এর মধ্যেও আমরা জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ভারতকে অতিক্রম করেছি; ২০২০ সালে আমাদের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২২২৭ মার্কিন ডলারে।

তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের ফলে কোভিড-১৯ অতিমারির লকডাউনকালীন বাংলাদেশ দ্রুতই অনলাইন সরকার ব্যবস্থাপনা, অনলাইন শিক্ষা ও অনলাইন কর্মপরিবেশে নিজেদেরকে পরিবর্তিত করতে পেরেছে। দেশে মোবাইল ফোন ভিত্তিক কোভিড সনাক্তকরণ পদ্ধতি এবং সরাসরি কোভিড তথ্য-সহায়তা চালু করার ফলে সবচেয়ে কম সংক্রমণ হারের দেশের তালিকাতে বাংলাদেশ অবস্থান করছে।
একযুগ পূর্বের উদাহরণ টেনে জনাব সজীব আহমেদ ওয়াজেদ বলেন, সেসময় বাংলাদেশে ব্রডব্যান্ডের ব্যবহার ছিল অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল মাত্র ০.৩ ভাগ। আজ ১২ বছর পরে দেশের ১১৬ মিলিয়ন মানুষ সুলভ ব্রডব্যান্ডের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে যা দেশের জনসংখ্যার ৭০ভাগ।

এই খাতে সাফল্যের পিছনে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ব্যাপক বিনিয়োগের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে বিনিয়োগ কাজ করেছে মর্মে উল্লেখ করেন তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “সরকার তথ্য-প্রযুক্তি অবকাঠামো বিনির্মাণে বিগত কয়েক বছরে ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব-ভিত্তিক বিনিয়োগের মাধ্যমে ৩০ হাজার কিলোমিটার ফাইবার অপটিক ক্যাবল সারাদেশে স্থাপন করা হয়েছে। দেশের ৯০ভাগ এলাকা ফোর-জি নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছে; আমরা ফাইভ-জি চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছি”। বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে দেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ স্থাপন করেছে মর্মে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরফলে দেশের দূর্গম এলাকাসমূহ ও দীপাঞ্চল নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে।

তিনি দেশব্যাপী ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন, ডিজিটাল সেন্টার পরিচালনায় নারী সহ ব্যাপক উদ্যোক্তা সৃষ্টি, ডিজিটাল পদ্ধতিতে জাতীয় পরিচয় পত্রে প্রণয়নের মাধ্যমে ব্যাপক তথ্য-ব্যাংক সৃষ্টি, মোবাইলের মাধ্যমে বিভিন্ন ভাতা পরিশোধ, ই-সরকার, ই-নথি, ই-জুডিশিয়ারি, টেলি ও অনলাইন স্বাস্থ্য সেবা, সরকারি দপ্তরসমূহের মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যবস্থা, জাতীয় হটলাইন স্থাপনসহ বাংলাদেশে নাগরিক জীবনধারার প্রতিটি স্তরে তথ্য-প্রযুক্তি সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হচ্ছে মর্মে উল্লেখ করেন।

তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা বলেন, সরকার আইটি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় সকল স্কুলেই শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। সরকার দুই মিলিয়নেরও বেশি নাগরিককে বিভিন্ন ধরণের আইট প্রশিক্ষণ দিয়েছে। আর এভাবেই তথ্য-প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, ও উদ্ভাবনের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে ডিজিটালি পশ্চাদপদ একটি দেশ থেকে বাংলাদেশকে শেখ হাসিনা সরকার একটি পরিপূর্ণ ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করেছে।
জনাব সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, বাংলাদেশ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ নিজস্ব উপায়ে ও স্বল্প খরচে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের জ্ঞান ব্যবহার করে ডিজিটাল পদ্ধতি ও সেবা সৃষ্টি করতে পেরেছে। পৃথিবীর কোনো দেশ দ্রুত ডিজিটাল পদ্ধতিতে উত্তরণ ঘটাতে চাইলে আমরা আমাদের সেবা ও বিশেষজ্ঞদের দ্বারা তাদেরকে সহায়তা করতে সদা প্রস্তুত রয়েছি।

ইভেন্টটিতে ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের সেক্রেটারি জেনারেলও কী-নোট স্পীকার হিসেবে বক্তব্য রাখেন। প্যানেল আলোচনা পর্বে জাতিসংঘ সংস্থা ও সিভিল সোসাইটির সদস্যবৃন্দ এবং শিক্ষাবিদগণ অংশগ্রহণ করেন। আলোচনা পর্বে অংশ নেন সদস্য দেশসমূহের প্রতিনিধিবর্গ ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার সদস্যবৃন্দ।

ইভেন্টটিতে প্রদত্ত বক্তব্যে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা তথ্য-প্রযুক্তিতে বাংলাদেশের জনগণের সহজলভ্য প্রবেশাধিকারসহ এখাতে দেশের সামগ্রিক অর্জন ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরার জন্য আইসিটি উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান। সমৃদ্ধ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণ ও দেশের অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিতে ইন্টারনেট সংযোগ, ই-গভর্ণনেন্স, ই-বিজিনেজ এর ব্যাপক প্রসারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অদম্য নেতৃত্বের কথা প্রদত্ত বক্তব্য তুলে ধরেন স্থায়ী প্রতিনিধি।

জাতিসংঘ পঞ্চম এলডিসি সম্মেলনের প্রস্তুতিমূলক কমিটির সভা গত ২৪ মে শুরু হয়েছে যা আগামী ২৮ মে শেষ হবে। পঞ্চম এলডিসি সম্মেলন-এর প্রস্তুতিমূলক কমিটির সভা যৌথভাবে সভাপতিত্ব করছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা এবং জাতিসংঘে নিযুক্ত কানাডার স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত বব রে। উল্লেখ্য স্বল্পোন্নত দেশসমূহের পঞ্চম সম্মেলন ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠিত হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন