জয়িতা চট্টোপাধ্যায়-এর চারটি কবিতা
যে ভাবে নদী অপেক্ষা করে তার জোয়ারের জন্য
তেমনি করেই আমি অপেক্ষা করি
আমার আত্মাকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে অনেককাল আগেই, তোমার ভেতরে আবার শরীর জন্ম নেবে
আমরা মিলিত হব পরস্পরের ভেতরে
ছিন্নভিন্ন হব একে অন্যের নখে
তারপর ও তোমার সামনে নতজানু আমি ভিক্ষাপ্রার্থী
তোমাকে ফিরিয়ে প্রাণ ডেকে আনি নিজের মৃত্যুকে
আমি চলে যাই সমুদ্রে যেখানে এখনও সে অপাপবিদ্ধ, তোমার প্রত্যাখ্যান থেকে ফিরে এসে নিজেকে প্রত্যাখ্যান করি অনায়াসে, আমাকে ক্ষতবিক্ষত করে আমার মাংস কে করেছ দিক্ষিত
তবু আমি বইয়ে দিই হাওয়া যাতে তুমি নিঃশ্বাস নিতে পারো।।
কত ঘর জলে ভেসে গেল মৃত নদী ছাপিয়ে দুকূল
মাথায় সংসার রেখে জল ভাঙো তুমি
ডুবে ভেসে আমি লিখে যাই কবিতা বিলকুল
ফুটিফাটা মাঠে রোজ যেভাবে চাতকের কান্না ঝরে
আমার চোখ ও বৃষ্টি দ্যাখেনি , দ্যাখেনি সজল কবিতার ঘরে, আমি দেখি গরীবের কান্না মুছে যায় সুগন্ধি রুমালে, সহ্য শক্তি বাড়ে ভোটমূল্যে বিক্রি হয়ে যায় সব গনতন্ত্রের আড়ালে, হল্লা রাজা আসে আবার ফিরে যায়, খিদে ,তৃষ্ণায়, বিষাদে যন্ত্রনায় বিনষ্ট সন্ধ্যা আগুনে ঝাঁপায়। মাটিতে পুঁতেছি শরীর আত্মআহুতি আমাকে বাঁচায়।।
অভিযোগহীন:
আমার ভেতর ভালোবাসা আরও ঘন হয়
আমাকে জাগিয়ে রাখে অপমান বোধ
শহরের নিভৃত হাওয়া আমাকে জড়িয়ে ধরে
ভালোবাসা সরল সহজ
দরহীন শরীর, দরহীন ঠোঁট তাকেই শুষে নেয় স্বাদ,
দূর থেকে জীবন সরস, সুন্দর, অবিচল, অবাধ
অভিযোগহীন বেঁচে আছি, বাতাসে তুলোর মতো করে, তোমার বিষের পাশে মাথা রাখি, ক্ষতবিক্ষত হৃদয়কে ভুলে, শুকনো ঝর্ণা সহ্য করি, মাইলের পর মাইল মনখারাপের শেষে, কেঁপে কেঁপে ওঠে ঠোঁট পিপাসায়,প্রতি টা রাত যেখানে মেশে।।
জলের মতো বয়ে যেতে চেয়েছিলাম তোমার ভেতরে
যেমন মাটি অনেক নীচে নিয়ন্ত্রণ করে ক্ষমতা
পচে যাওয়া পৃথিবীর নীচে চাপা পড়ে থাকতে চাইনি আমি, চেয়েছিলাম তোমার নিঃশ্বাসের ভেতর থাকতে, কিছু যখন করছি না সেটাও যে মস্ত দৌড়
যেমন ঘুমের ভেতর জুড়ে আমি আজও তোমার কাছে কৃতজ্ঞতায়, নীচু একটা মেঘ আর তুমি কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি ঢেলে দিচ্ছো পৃথিবীতে।।